শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
দুদকের অনুসন্ধানে মিলছে আতিকুর ও স্ত্রীর বিপুল সম্পদের তথ্য

আলাদিনের চেরাগ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চাকরি

আবুল কাশেম   |   বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   420 বার পঠিত

আলাদিনের চেরাগ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চাকরি

একজন অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান রাতারাতি কোটিপতি বনে যাবার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে ‘ভিশন-৭১ ডেভেলপমেন্ট লি.’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান খান ও তার স্ত্রী নাহিদা ইসলাম নিপার বিরুদ্ধে। উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার চাকরিতে যোগদান করেই যেনো ‘সেই আলাদিনের চেরাগ’পেয়েছেন আতিকুর রহমান খান। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন আতিকুর রহমান খান ও তার স্ত্রী।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে বিরুদ্ধে আতিকুর রহমান খানের বিরুদ্ধে ‘মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে’ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়ম, জালিয়াতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং মানি লন্ডারিংয়ের চাঞ্চল্যকর অভিযোগের পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ মিলছে।

সূত্র মতে, গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপ-জেলার একজন সাধারণ কৃষক পরিবারের ছেলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান খান। দুদকের অনুসন্ধানে ১৫টি ব্যাংকে আতিকুর রহমানের নিজের নামে ৯৭টি অ্যাকাউন্টে লেনদেনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২০০৭ সাল থেকে ২০২১ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১১০ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৯২ টাকা লেনদেন হয়েছে। এসব অভিযোগ যাচাই বাছাইয়ের জন্য দুদকের অনুসন্ধানকারী টিমের পক্ষ আতিকুর রহমান খান এবং তার সহযোগীদের কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুদকের কর্মকর্তারা যতই গভীরে যাচ্ছেন, ততই চাঞ্চল্যকর তথ্য উপাত্ত বেরিয়ে আসছে।

দুদকে অভিযোগ রয়েছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধ শিক্ষার্থী ভর্তি এবং নিয়োগসহ সবধরণের কিনা কাটায় ও কমিশন বাণিজ্যের মুখ্য ভূমিকায় আছেন আতিকুর রহমান খান। তিনটি ক্যাম্পাসের প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর ড্রেস তৈরি, ক্যান্টিন, লাইব্রেরি সবই তার নিয়ন্ত্রণে।

আরও অভিযোগ রয়েছে, এমনকি স্কুলের সামনে ফুটপাতে শতাধিক দোকান বসিয়েও তিনি আয় করেন মোটা অংকের টাকা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের কেনাকাটা, উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ সবই করেন আতিক ও তার পছন্দের লোকেরা। দরপত্রেও অংশ নেয় নামে-বেনামে তারই প্রতিষ্ঠান। সেখানে চলে বড় ধরনের লুটপাট। গত ১২ বছরে প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং কর্মচারী নিয়োগে দু’ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।

গত ১৪ আগস্ট দুদকের অনুসন্ধানী টিমের পক্ষ থেকে উপ পরিচালক মো. জাহিদ হোসেনের স্বাক্ষরে পৃথক দু’টি নোটিশে আতিকুর রহমান খান ও তার স্ত্রী নাহিদা ইসলাম নিপা এবং সন্তানসহ তাদের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে-বেনামে স্থাবর,অস্থাবর সম্পদ,দায়, দেনা ও আয়ের বৈধ উৎস, অর্জিত সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ নির্ধারিত ছকে দাখিল করতে বলা হয়েছে। নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠানের কেনা কাটা ও সংস্কারকাজ করাসহ বিভিন্ন খাত থেকে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন আতিকুর রহমান খান এবং তার স্ত্রী নাহিদা ইসলাম নিপা।

২০০৪ সালের দুদক আইন ৫ এর ২৬ (১) ধারায় পাঠানো নোটিশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাদেরকে সম্পদের বিবরণী দুদকে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আরও বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদের বিবরণী দাখিল ব্যর্থ হলে অথবা মিথ্যা বিবরণী দাখিল করলে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৬ (২) ধারায় নোটিশ প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র মতে, ২৫ মে দুদকের পরিচালক মো. সফিকুর রহমান ভূঁইয়া ও সহকারী পরিচালক মাহবুবুর আলমের নেতৃত্বে অনুসন্ধানী টিম আতিকুর রহমান খানকে জ্ঞিাসাবাদ করা হয়। এছাড়াও তার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ‘ভিশন-৭১ ডেভেলপমেন্ট লি.’ চেয়ারম্যান মো. শরীফ মোস্তাক এবং আতিকুর রহমানের স্ত্রী ও কোম্পানির পরিচালক নাহিদা ইসলাম নিপাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের তলব করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, উপ সহকারী আতিকুর রহমান খান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তার ভূমিকায় থেকে অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা ও সংস্কারকাজ করাসহ বিভিন্ন খাত থেকে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এসব অভিযোগ অনুসন্ধানকালে ‘ভিশন-৭১ ডেভেলপমেন্ট লি.’ নামের একটি কোম্পানিতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য বেরিয়ে আসে। দুদকের অনুসন্ধানের শুরুতেই দেখা গেছে,ওই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিটির সঙ্গে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমের ছেলে শরীফ মোস্তাক, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান ও আতিকের স্ত্রী নিপার সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। কীভাবে ওই কোম্পানি চলছে, এর মূলধন কোথায় থেকে এল, ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে আর্থিক লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে হয়েছে কি না এবং কোম্পানি সংশ্লিষ্ট সব নথিপত্র যথাযথ রয়েছে কি না ইত্যাদি বিষয়ে জানতেই তাদেরকে দফায় দফায় দুদকে তলব করা হচ্ছে।

সূত্র মতে, ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির অভিযোগে প্রথম আতিকুর রহমান খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। পরে ২০২১ সালের ৮ আগস্ট দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আতিকুর রহমান খানের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০২১ সালের ৩ আগষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

আতিকুর রহমান খান ২০০৪ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এমপিওভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কোনো পদ নেই। অবৈধভাবে এ পদ সৃষ্টি করে অধ্যক্ষ শাহান আরা তাকে নিয়োগ দিয়েছেন।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদে দুদকের কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, মতিঝিলের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শাহান আরা এবং আতিকুর রহমান খানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী চক্র ভর্তি বাণিজ্য ও উন্নয়ন কাজের অর্থ লোপাটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ওই চক্রের সঙ্গে মতিঝিল ও পল্টন এলাকার স্থানীয় বেশ কয়জন রাজনৈতিক নেতা ও একজন জনপ্রতিনিধি জড়িত বলে তথ্য-প্রমান পেয়েছে দুদক।

আতিকুর রহমান খান ও স্ত্রী নাহিদা ইসলাম নিপার বিরুদ্ধে ভয়াবহ জালিয়াতি, জ্ঞাত আয় বর্হিভুত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের চাঞ্চল্যকর অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে পাঠানো সম্পদ বিবরণীর নোটিশ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য ‘দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি’ পক্ষ থেকে তার মুঠোফোনে কথা হয়। দুদক কেনো বার বার তাকে এবং তার স্ত্রীকে নোটিশ পাঠাচ্ছেন এই বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে, তিনি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলেন, তার বক্তব্য বিভিন্ন প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এখন কোন বক্তব্য নেই, এই বলে আতিকুর রহমান খান ফোন রেখে দেন।

 

 

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৪৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।