নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 131 বার পঠিত
ব্যাংকের চেয়ে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) টাকা রাখলে বেশি সুদ পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই চলে আসছিল। কিন্তু দিন বদলেছে। এখন অনেক ব্যাংকই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আমানতে বেশি সুদ দিচ্ছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে (এনবিএফআই) গত এক বছর ধরে আমানতের ক্রমাগত পতনের সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ অনেক গ্রাহক তাদের জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং কম আয়ের মধ্যে উচ্চ ব্যয় পরিচালনার জন্য সঞ্চয় প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।
ব্যাংকিং খাত দেশের আর্থিক খাতের প্রধান স্তম্ভ। প্রতিষ্ঠানগুলোর খুব কম সুদের হার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং গ্রাহকদের একটি অংশ তাদের বিনিয়োগ স্থানান্তর করছেন। নতুন বিনিয়োগের জন্য তারা স্থায়ী সম্পত্তিতে স্থানান্তর করছেন।
এছাড়াও, সরকারি সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এতে তারা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।
চলতি অর্থ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে এনবিএফআই’র আমানত আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৪১,৫৮৫ কোটি টাকা হয়েছে। এক বছর আগে এনবিএফআই’র আমানত এটি ছিল ৪২,৭৯০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে, জুনের শেষে সামগ্রিক আমানত ৪২,০৮৬ কোটি টাকা থেকে ১.১৯ শতাংশ কমেছে।
সেপ্টেম্বর শেষে এনবিএফআই এর আমানত ডিসেম্বর ২০২০ এর তুলনায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এমন প্রবণতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা এবং তাদের সামগ্রিক সম্পদের মানের ঝুঁকি বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ বাড়াতে সহায়তা করছে।
লঙ্কান অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্সের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কান্তি কুমার সাহা বলেন ২০২২ সালের জুলাই থেকে সুদের হারের সীমা ৭ শতাংশের কারণে এনবিএফআইগুলিতে আমানতের প্রবৃদ্ধির উপর উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের সুদের হারে সিলিং এমন এক সময়ে এসেছিল যখন বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত হ্রাসের কারণে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
সরকারী তথ্যে দেখা যায় মূল্যস্ফিতি আগস্টে ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯.৫২ শতাংশ স্পর্শ করার পরে, গত তিন মাসে হ্রাস পেয়েছে। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৮৫ শতাংশ।
যদিও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত আকৃষ্ট করতে মুদ্রাস্ফীতি সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সুদের হার অফার করতে পারে। এমন সুযোগ এনবিএফআইগুলো দিতে পারে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন ঋণ বিতরণে এনবিএফআই’র ক্ষমতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।
ব্যাংক এবং এনবিএফআই’র সুদের সীমা প্রত্যাহার করা না হলে, আমানত আকর্ষণের জন্য আর্থিক খাতের সমস্যা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ উৎসাহজনক নয়।
এমতাবস্থায় সরকারের সামনে আগামী মাসগুলোতে বিশেষ করে অর্থবছরের শেষ কয়েক মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নেওয়ার জন্য আর্থিক খাতের ওপর নির্ভর করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প থাকবে না।
বর্তমান বিশ^ পরিস্থিতিতে সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশে বেশ চ্যালেঞ্জে সম্মুখিন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ননপারফর্মিং লোন (এনপিএল) আরও বাড়াতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায় বেসরকারী খাতের আমানতের প্রবাহ, যা মোট তহবিলের ৯৩ শতাংশ, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে বছরে ৩ শতাংশ এবং আগের প্রান্তিকের থেকে ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
জানতে চাইলে ডিবিএইচ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাসিমুল বাতেন বলেন, ব্যাংকের চেয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদহার বেশি হয়ে গেছে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠানের তহবিলে টান পড়ছে, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।
এদিকে বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার সংশ্লিষ্ট চারটি এনবিএফআইয়ের কারণে পুরো খাতটি আস্থার সংকটে পড়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এখন কড়া নজরদারি শুরু করেছে ও নতুন নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করছে।
সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতিতে এনবিএফআইগুলোর অংশগ্রহণ দিন দিন কমে আসছে। যদিও নতুন নতুন এনবিএফআই অনুমোদন দেওয়া অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সর্বশেষ নগদ ফাইন্যান্সকে প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে দেশের ঋণের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। এরপর নতুন নতুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রমে এলেও ২০২১ সালে এই ঋণ কমে ৫ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব মনে করেন না যে এনবিএফআইগুলিতে আমানতের হ্রাস অস্বাভাবিক। কারণ পণ্য ও পরিষেবার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের সঞ্চয়ের শক্তি সঙ্কুচিত হয়েছে।
সামগ্রিক প্রবণতা হল যে আর্থিক খাতে আমানত হ্রাস পাচ্ছে এবং এনবিএফআইগুলিও একই বিভাগে কাজ করছে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে অর্থের প্রচলন কমে গেছে।
এদিকে আমানত না বাড়লে এনবিএফআইতে বিনিয়োগের প্রবাহ প্রভাবিত হবে। নীতিনির্ধারকদের উন্নয়নের দিকে খেয়াল রাখতে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সিইও এম জামাল উদ্দিন অবশ্য বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হারের সীমা আরোপ করার পরেও তার কোম্পানি আমানত প্রবাহে কোনো হ্রাস দেখতে পায়নি।
Posted ১:৫০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy