নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট | 280 বার পঠিত
নানামুখী প্রতিকূলতা পেরিয়ে গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স। এছাড়া, নন-কনভেনশনাল বীমা পণ্য প্রণয়নে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। দুই যুগপূর্তি ও ২৫ বর্ষে পদার্পণ উদযাপন উপলক্ষে বীমা খাতের আধুনিকায়নে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের ভূমিকা তুলে ধরেছেন প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান তারেক।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বীমা খাতে নানামুখী সংস্কার হয়েছে। আগে এখাতে আস্থাহীনতার যে সমস্যা ছিলো তা অনেকটাই কমে এসেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে গ্রাহকদের দাবি পরিশোধে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য। বর্তমান সরকার লাইফ ও নন লাইফ দুই সেক্টরই কঠোরভাবে মনিটরিং করে যাচ্ছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বীমা কোম্পানিগুলোর স্বার্থে নতুন নতুন নীতিমালা গ্রহণ করছে। সেখানে বলা হয়েছে, যদি কোন দাবি ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করা না হয় বা কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় তাহলে বীমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেটা বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে আগে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর যে মনোপলি মনোভাব ছিলো তা এখন নেই। আমি মনে করি, আধুনিক বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও বীমা সেবা চালু হচ্ছে। যেটা ২০ বছর আগেও ছিলো না। এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে বীমা কোম্পানিগুলো পরিচালিত হচ্ছে। কঠোর বিধি-নিষেধের কারণেই সেটা সম্ভব হয়েছে। এখন সুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে বীমা কোম্পানিগুলো চলছে। আমি মনে করি, আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে জিডিপিতে বীমা খাত কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।
জিডিপিতে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে বীমা খাতের ভূমিকা সম্পর্কে হাসান তারেক বলেন, বর্তমানে লাইফ ও নন-লাইফ মিলে ৮১টি বীমা কোম্পানি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। টোটাল বীমা খাতের বাজার প্রায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে নন-লাইফের বাজার রয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো। বাকিটা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। নন-লাইফ বীমা খাত সম্পদের ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাই নন-লাইফের কাজ। আর মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে লাইফ ইন্স্যুরেন্স। বাংলাদেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ। কিন্তু সবাই বীমার আওতায় নেই। তিনি বলেন, বর্তমানে লাইফ এবং নন-লাইফ দুটো সেক্টরেই ক্রিটিক্যাল রোগের জন্য স্বল্প প্রিমিয়ামে স্বাস্থ্য বীমা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে জনগণও সেই সেবা নিচ্ছেন। হসপিটালে নানামুখী সেবা খুব সহজেই পেয়ে যাচ্ছে খরচও কমে আসছে। কিন্তু তার যথাযথ প্রচার হচ্ছে না। আমরা এই বিষয়ে সকলকে সচেতন করতে চাই। মিডিয়ার মাধ্যমে আপনারাও তা সহজেই জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারে। বীমা কোম্পানিগুলো জনগণের জন্য কতটা জনবান্ধব সেটা প্রচারে আমাদের পাশাপাশি আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে বীমাখাতে এখনো যে আস্থাহীনতা রয়েছে সেটা সহজেই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। সেই সাথে জিডিপিতে বীমা খাত কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হবো।
দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে বীমা আওতায় আনতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, আইডিআরএ নানামুখী নীতিমালা প্রণয়ন করে যাচ্ছে। বীমা কোম্পানিগুলোকে নতুন নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করার পাশাপাশি বীমা সম্পর্কে জনগণের আস্থা বাড়াতে প্রচার, প্রসারণার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। এছাড়া, স্যান্ডবক্স, ইন্স্যুরটেক আইনসহ বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা কর্তৃপক্ষ প্রণয়ন করে যাচ্ছে। আমরাও সেগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। দুপক্ষের সমন্বয়ের ফলে বীমা খাতের নানা সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে আপামর জনসাধারণ সুবিধা ভোগ করছে। বর্তমানে গ্রামগঞ্জেও বীমা সম্পর্কে মানুষ সচেতন হচ্ছে। কারণ বীমা কোম্পানিগুলোতে যেসব এজেন্ট রয়েছে তারা গিয়ে মানুষকে বীমার সুবিধা সম্পর্কে সচেতন করে ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ দিয়ে বীমামুখী করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এগুলো সম্ভব হয়েছে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, আইডিআরএ’র তদারকি ও তাদের গাইডলাইন এবং সরকারের আন্তরিক সদ্বিচ্ছার জন্য। যা ২০ বছর আগেও এমনটি ছিলো না।
কিছু কিছু বীমা কোম্পানির অনিয়ম, দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান নয়। ভালো খারাপ নিয়েই আমাদের সমাজ। সেরূপ প্রতিটি সেক্টরেই ভালো খারাপের সমন্বয়ে গড়ে উঠে। যদি একটি খাতে সবাই ভালোভাবে চলতো তাহলে দেশে কোন সমস্যাই থাকতো না। তবে যেসব কোম্পানিতে অনিয়ম, দুর্নীতি রয়েছে আইডিআরএ যদি সেসব কোম্পানিগুলোকে কার্যকরী শাস্তির আওতায় নিয়ে আসে তা দেখে অন্য কোম্পানিগুলোও সংশোধন হয়ে যাবে। যেসব বীমা কোম্পানির জন্য এ খাতের বদনাম হচ্ছে আমি মনে করি, সেগুলোকে শাস্তির আওতায় এনে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে বীমা কোম্পানিতে আর অনিয়ম, দুর্নীতি থাকবে না।
কেন গ্রাহকরা কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সে বীমা পলিসি করতে আগ্রহী হবে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশে প্রচলিত বীমা পলিসি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন নতুন প্রোডাক্ট প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স। যার মধ্যে রয়েছে, ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স। বর্তমানে ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স কভারেজ শুধু ভিসার আওতায় রয়েছে। এক্ষেত্রে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স নতুন আঙ্গিকে ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্সে গ্রাহকের লাগেজেরও বীমা সুবিধা দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই পলিসি অনুমোদনের জন্য অচিরেই কর্তৃপক্ষের দফতরে পাঠানো হবে। আরেকটি প্রোডাক্ট রয়েছে ক্রিটিক্যাল ইলনেস। এ পলিসির আওতায় হার্ট অ্যাটার্ক, স্ট্রোক ও ক্যান্সার অন্তর্ভূক্ত। এই তিনটি রোগের সকল ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে এই পলিসির মাধ্যমে। এটাও আইডিআরএ’র দফতরে পাঠানো হবে অনুমোদনের জন্য। এছাড়া রয়েছে হজ্ব ও ওমরাহ প্যাকেজ। এ পলিসি গ্রহণ করলে মানুষ কোন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে বীমা সেবা দিবে এই পলিসি। এসব অপ্রচলিত বীমা পলিসি প্রণয়নের জন্য ইতিমধ্যে আমরা প্রচার, প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এ অপ্রচলিত বীমা পণ্যের জন্য আমাদের প্রতি মানুষের আগ্রহ জন্মাচ্ছে। এই প্রোডাক্টগুলোর কার্যক্রম যখন পুরোদমে চালু হবে তখন আপনারাই দেখবেন কিভাবে মানুষ এই পলিসিগুলো গ্রহণ করে। কম খরচে অতিরিক্ত বীমা কভারেজ সুবিধার জন্যই এই পলিসিগুলো মানুষ গ্রহণ করবে।
Posted ৫:২০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy