বিশেষ প্রতিবেদক | বুধবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট | 8324 বার পঠিত
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমানসহ একই প্রতিষ্ঠানের সাতজনের বিরুদ্ধে নয় কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে মামলা করেছেন কোম্পানির এক্সিকিউটিভ মোস্তফা গোলাম এমরান। গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রামপুরা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে কর্মচারী কর্তৃক প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে অর্থ আত্মসাৎসহ হুমকি প্রদানের অপরাধে প্যানেল কোড ১৮৬০ এবং দন্ডবিধির ৪০৮/৪২০/৫০৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়। মামলা নং-৪ তারিখ ১১/০১/২০২৪।
মামলায় অজ্ঞাতনামাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়। আসামীরা হলেন, প্রাক্তন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মীর রাশেদ বিন আমান (৩৯), সাবেক এইচআর অফিসার ফাতেমা তামান্না সুইটি (২৮), হিসাব বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা সুমি শেন (৩৪), সাবেক হেড অব পারচেজ রাজেশ আইস (৩৯), সাবেক হেড অব ফাইন্যান্স মো. বোরহান উদ্দিন মজুমদার (৩৮), হিসাব বিভাগের সাবেক ম্যানেজার মো. শিপন ভূঁইয়া (৩৮) ও সাবেক হেড অব ইনভেস্টমেন্ট সুজন তালুকদার (৪০)।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মীর রাশেদ বিন আমান কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) পদে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা বেতনে যোগদান করেন। অন্যান্য বিবাদীরা বিভিন্ন তারিখে সোনালী লাইফে যোগদান করেন। তাদের দায়িত্ব পালনকালে ম্যাবস এন্ড জে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস মৌখিকভাবে সোনালী লাইফের হিসেবের গড়মিলের তথ্য প্রদান করে। কিন্তু কোম্পানির প্রাক্তন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য আসামীরা সে তথ্য গোপন রাখেন। কোম্পানির একাউন্ট ডিভিশন তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানে মীর রাশেদ বিন আমানের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি খুঁজে পায়। এতে দেখা যায়, মীর রাশেদ বিন আমান কোম্পানির একাউন্ট থেকে তার নিজস্ব একাউন্টে ৫০ লাখ টাকা জমা করেন। পরবর্তীতে আবার কোম্পানির একাউন্ট থেকে ২০ লাখ টাকা ক্যাশ উত্তোলন করে নিজের একাউন্ট জমা করেন। রাশেদ বিন আমানের ব্যাংক স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাশেদ বিন আমান তার নিজস্ব মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংক একাউন্টে আনুমানিক ৯ কোটি টাকা লেনদেন করেন। পরে কোম্পানির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে বসে কাগজপত্র ও একাউন্টস পর্যালোচনা করে বিষয়টির সত্যতা দেখতে পান। এতে মীর রাশেদ বিন আমানসহ অন্যান্য আসামিদের যোগসাজশে ২০১৩ সালের ০২ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ০৪ জানুয়ারি পর্যন্ত নয় কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়।
মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, রাশেদ বিন আমানের কাছে সঠিক হিসাব চাইলে তিনি কোন তথ্য না দিয়ে উল্টো হুমকি দিতে থাকেন। তিনি বলেন, যদি সঠিক হিসেব না দিতে পারি তাহলে গড়মিলের সমুদয় টাকা কোম্পানিকে ফেরত দিবো। কিন্তু এরপর থেকে রাশেদ বিন আমান অফিসে আসা বন্ধ করেন এবং হিসাব নিয়ে তালবাহানা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যান ও অফিস কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। রাশেদ বিন আমান পরিকল্পিতভাবে অফিসে যোগদান করে বিভিন্ন মানুষ দ্বারা ক্যাশ ডিপোজিট করে এবং সেই টাকা কোম্পানির একাউন্টে না দিয়ে অনুমোদনহীনভাবে অন্যান্য বিবাদীর যোগসাজশে তার একাউন্টে জমা করেন। এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, মীর রাশেদ বিন আমানের বেতনের টাকা ছাড়া অর্থ উপার্জনের অন্য কোন উৎস নেই। তারপরও তিনি কোম্পানি থেকে টাকা আত্মসাৎ করে একাধিক গাড়ি ক্রয় করেন। মীর রাশেদ বিন আমানসহ অন্যান্য বিবাদীরা কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে কোম্পানির সাথে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণার মাধ্যমে কোম্পানি থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়।
রামপুরা থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম মাওলার সাথে মামলার অগ্রগতি জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-৪ তারিখ ১১/০১/২০২৪ইং। আসামীরা সবাই পলাতক বিধায় এখন পর্যন্ত তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।
এই বিষয়ে রাশেদ বিন আমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলার বিষয়ে সতত্যা স্বীকার করে বলেন, আমি এখনো জামিন নেইনি। মামলা সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, আমরা বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা পুরোপুরি সত্য নয়। আমাকে হয়রানি করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে।
Posted ৯:১৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy