নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট | 244 বার পঠিত
দেশের চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি রোধে টাকার সরবরাহ কমানোর পাশাপাশি নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আগামী জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউয়ের প্রধান কর্মকর্তা, প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্ররা।
গভর্নর বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত মতে নীতি সুদহার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের দিকে হাঁটছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, রিভার্স রেপো (বর্তমান নাম স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি বা এসডিএফ) নিম্নসীমার সুদহার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। বাজারে উদ্বৃত্ত টাকা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিভার্স রেপোর মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়।
নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্পেশাল রেপো বা এসএলএফের (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি) সুদহার ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে সংকটে পড়া ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে কিছুটা ব্যয় কমবে।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (ডিসেম্বর পর্যন্ত) জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। আলোচিত সময়ে মূল্যস্ফীতির মতো ঋণ প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি। গত নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। যা লক্ষ্যের চেয়ে ১ শতাংশ কম।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ মুদ্রার প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও নভেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ মুদ্রার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ১ দশমিক ৭৩ শতাংশে নেমেছে। ব্রড মানি বা ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
কাউকে ভয় পাই না
চট্টগ্রামভিত্তিক একটি ব্যাংকের গ্রুপের হাতে থাকা পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের সংকটময় পরিস্থিতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আমার চেয়ার ছাড়ার কোনো ভয় নাই। আমি কাউকে ভয় পাই না। এসব ভয়-টয় দেখাইয়া লাভ নাই।
মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে গভর্নর বলেন, আমি সচিব ছিলাম, এক বছরের বেশি সময় চাকরি ছিল। এখন গভর্নর হয়েছি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে। আমি চাইলে চাকরি ছেড়ে দিতে পারবো, আবার সরকার চাইলেও আমাকে সরিয়ে দিতে পারে। তবে চেয়ার হারানোর ভয় নাই, কোনো হুমকিও নাই। ভয় দেখাইয়াও লাভ নাই।
তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলোর কাঠামোতে সমস্যা ছিল। সেখানে তারল্য সংকট হয়েছে অন্য কারণে, তাদের সুকুক বন্ড রয়েছে টোটাল ইসলামী ব্যাংকের দুই শতাংশ। অন্য ব্যাংকগুলোতো তারল্য সংকট ছিল। তবে তাদের বন্ডে বিনিয়োগ থাকায় তারা টাকা পেয়েছে।
আর্থিক খাতের দুর্বলতার বিষয়ে গভর্নর বলেন, আমরা আগেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করেছিলাম। দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি, হবেও না। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে। তারা খারাপের দিকে যায়নি, আর দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবে।
Posted ২:০৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy