বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 628 বার পঠিত
জীবন বীমা করপোরেশনে ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে বীমা করেছিলেন একজন গ্রাহক। গ্রাহকের মৃত্যুতে ২০১৫ সালের আগস্টে প্রায় দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা দাবি উত্থাপন করা হয়। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, উত্থাপনের পর ৯০ দিনের মধ্যেই ওই দাবি পরিশোধ করার কথা। কিন্তু চার বছরেও ওই দাবি পরিশোধ করেনি রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানটি। চার বছরেও দাবি পরিশোধ করতে না পারার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দেওয়া ব্যাখ্যায় ‘দাবি ফরম দাখিল করা নেই’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোম্পানিটির দাবি অনুযায়ী, ওই গ্রাহকের মৃত্যুর পর তার নমিনি-স্বজনরা বীমার টাকা দাবি করে এ-সংক্রান্ত নির্ধারিত ফরম কোম্পানির কাছে জমা দেননি। সে কারণেই মৃত্যুবীমা দাবি পরিশোধ করা হয়নি। শুধু ওই একটি বীমা দাবির ক্ষেত্রেই নয়, জীবন বীমা করপোরেশনের ঝুলে থাকা বীমা দাবি মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রেই ‘দাবি ফরম দাখিল করা নেই’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির জীবন বীমা পলিসি নং ১১৪৬১৮০-৩। ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই ইস্যু করা ওই বীমা পলিসির বিপরীতে গত বছরের ২২ নভেম্বর দুই লাখ ১০ হাজার টাকা মৃত্যুবীমা দাবি উত্থাপিত হয়েছে। ৯০ দিনের বদলে ২১৯ দিনেও দাবি নিষ্পত্তি হয়নি। এর ব্যাখ্যায় ‘অসম্পূর্ণ কাগজপত্র’কে দায়ী করা হয়েছে। এজন্য নমিনির কাছে তাগাদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
জীবন বীমা করপোরেশন, প্রগ্রেসিভ লাইফ বা পদ্মা ইসলামী লাইফই নয়- বীমা দাবি নিয়ে কালক্ষেপণের অভিযোগ এলে কৌশলে তার দায় বীমা গ্রাহকের ওপরই চাপানোর চেষ্টা করে সিংহভাগ কোম্পানি।
বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্দেশনা মেনে ঝুলে থাকা জীবন পলিসির তথ্য দিতে গিয়ে দাবি নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ হিসেবে অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দেওয়া, তথ্যে গরমিল, নির্বাহী রসিদ না পাওয়া, স্বাক্ষরে গরমিল, নামের বানান ঠিক না থাকা, গ্রাহকের নমিনির ফোন বন্ধ থাকা, প্রিমিয়াম জমার রশিদ অসম্পূর্ণ, গ্রাহকের নমিনির পক্ষ থেকে ফলোআপ না করা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকাসহ বেশকিছু কারণকে দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে দাবি নিষ্পত্তি না হওয়ার দায় কৌশলে পলিসি গ্রাহক কিংবা তার নমিনির ঘাড়েই চাপানো হয়েছে।
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মনজুরুর রহমান বলেন, ‘কোনো কোম্পানিকে এগিয়ে নিতে হলে গ্রাহকের স্বার্থ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দিকেই সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হয়। তা না হলে গ্রাহক হয়রানির কারণে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বীমা দাবি পরিশোধের বিকল্প নেই। আমি মনে করি, বীমা দাবি পরিশোধে কালক্ষেপণ হলে তার দায় শুধু কোম্পানির নয়। একইভাবে নমিনি বা গ্রাহকের কারণে বছরের পর বছর দাবি পরিশোধ হচ্ছে না- সেটাও পুরোপুরি সঠিক নয়। কোনো কারণে কালক্ষেপণ হলে দায় একে অন্যের ওপর না চাপিয়ে কীভাবে স্বল্প সময়ে পরিশোধ করা যায়- সেই চেষ্টা থাকা দরকার।’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর দাবি পরিশোধে গতি আনতে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ঝুলে থাকা বীমা দাবির তথ্য কালক্ষেপণের কারণ ব্যাখ্যাসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে নিজস্ব ওয়েবসাইটেও প্রকাশের কথা বলা হয়েছে।
কোম্পানিগুলোর জমা দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৯০ দিনের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে এমন পলিসির ক্ষেত্রে দেওয়া ব্যাখ্যায় গ্রাহক কিংবা তার নমিনি-স্বজনদের ওপরেই দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে কোম্পানিগুলো। আর যে কারণগুলোকে কালক্ষেপণের জন্য দায়ী করা হচ্ছে, কোম্পানির দায়িত্বশীলরা আন্তরিক হলে সেই কারণগুলোর জন্য বছরের পর বছর সময় লাগার কোনো কারণ নেই। বরং কোম্পানিগুলো কালক্ষেপণ করছে, আর শাস্তি এড়াতে গ্রাহক বা তার নমিনির ওপর দোষ চাপাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বীমার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াতে হলে দাবি পরিশোধে কালক্ষেপণ বন্ধ করতে হবে। যাই ঘটুক বীমা আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দাবি পরিশোধ করতে হবে। দেরিতে হলেও আইডিআরএ গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। সেই নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে পরিপালিত হচ্ছে কি না, সেদিকেও নজর রাখা দরকার।’
উল্লেখ্য, জীবন বীমায় দাবি উত্থাপিত হলে পরবর্তী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যেই দাবি নিষ্পত্তির নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য কোম্পানির সঙ্গে বীমা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী গ্রাহক বা তার নমিনিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে কোম্পানি দাবি নিষ্পত্তি করে। পিছিয়ে পড়া কিছু জীবন বীমা কোম্পানি বছরের পর বছর ধরে বীমা দাবি পরিশোধ করছে না। কিছু কোম্পানি তিন মাসের বদলে তিন বছরেও দাবি পরিশোধ করতে পারছে না বলেও তথ্য মিলেছে।
Posted ১২:০৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed