নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট | 855 বার পঠিত
এবার গ্রাহকের দাবির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জনতা ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে। সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে দাবির টাকা সমন্বয় করা হলেও তা গ্রাহককে পরিশোধ করেনি কোম্পানিটি। ফলে বীমা দাবির কয়েক কোটি টাকা আদায়ে এবার বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র দ্বারস্থ হয়েছে ওই গ্রাহক। এমনটাই জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।
জানা যায়, বেস্ট অব দ্যা বেস্ট গোল্ডেন ফাইবার্স নামে গ্রাহক (পলিসি নং- ঔওঈ/ঐঙ/খঙ/ঋচ-২১/০১/২০১৪) প্রতিষ্ঠানটির সাতটি পাটের গুদাম ২০১৪ সালে একটি অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হয়। ঘটনার পরপরই প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে ক্ষতিপূরণের জন্য সাধারণ বীমা করপোরেশনে (এসবিসি) চিঠি পাঠায় জনতা ইন্স্যুরেন্স। পুনঃবীমা দাবি অনুসারে ১৬ আগস্ট, ২০১৮ সালে গ্রাহকের পক্ষে প্রায় ৫ কোটি টাকা অনুমোদন করে এসবিসি। কিন্তু টাকা পাওয়ার পরও গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করেনি জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। ফলে দাবির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় চিঠি দেয় ভুক্তভোগী গ্রাহক।
অবশ্য এর আগেও ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দাবির টাকা না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে আইডিআরএ’র কাছে চিঠি দিয়েছিল ওই বীমা গ্রাহক। সে সময় ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে জনতা ইন্স্যুরেন্সকে চিঠি প্রদান করে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও সে নির্দেশনা আমলে নেয়নি কোম্পানিটি। পরবর্তীতে গ্রাহক নিজে উদ্যোগী হয়ে এসবিসিতে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, জনতা ইন্স্যুরেন্সের কাছে এসবিসি’র বকেয়া পাওনা থাকায় ২০১৮ সালে দাবির টাকা থেকে তা সমন্বয় করা হয়েছে। অর্থাৎ এসবিসি’র আওতায় থাকা দাবির টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে এসবিসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যসহ জনতা ইন্স্যুরেন্সে যোগাযোগ করলে সেখানকার বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠানটির ১৭৪তম বোর্ড সভায় ওই গ্রাহকের দাবি পরিশোধের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু কি কারণে এখনও সেই টাকা পরিশোধ হয়নি, তা জানাতে পারেনি।
অগ্নিদুর্ঘটনায় সকল মালামাল পুড়ে যাওয়ায় বর্তমানে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এদিকে ব্যাংক দেনার চাপে শোচনীয় অবস্থায় পড়েছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। লোনের দায়ে একের পর এক মামলার শিকার হচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে ওই গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থায় ব্যাংক সুদসহ বীমা দাবির পুরো টাকা দ্রুত পরিশোধ করার জন্য জনতা ইন্স্যুরেন্সকে নির্দেশ দিতে আইডিআরএ’র প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ভুক্তভোগী।
এ বিষয়ে জনতা ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ইকবাল রাশিদীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি প্রথমে কথা বলতে চাইলেও বিষয় উল্লেখ করলে মিটিংয়ের ব্যস্ততার কথা জানান। পরে মিটিংয়ের শেষে এই প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলে ওনার অফিসে গিয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে লাইনটি কেটে দেন।
বীমা বিশ্লেষকদের মতে, সম্পদের সুরক্ষা এবং ঝুঁকি কমাতে মানুষ বীমা করে। কিন্তু দুঃসময়ে যখন মানুষ সেই সুবিধা পায় না, বরং ভোগান্তিতে পড়ে; তখন অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই খাত সম্পর্কে চলে আসে বিতৃষ্ণা। দুর্ভোগের শিকার সেসব গ্রাহকের মাধ্যমে আরো প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ে বীমার দুর্নাম। অথচ জাতির পিতার স্মৃতিধন্য এই খাতটির উন্নয়নে কতই না প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন সরকার প্রধান। সবই যেন অমূল্যে রোদন। গুটিকয়েক প্রতারকদের কারণে আজ পুরো সেক্টরই দুর্নামের কবলে। তাই অবিলম্বে বীমা খাতের এসব প্রতারকদের চিহ্নিত করে তাদের আইন পালনে বাধ্য করাসহ কঠোর মনিটরিং করতে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
Posted ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy