আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্উদ | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 686 বার পঠিত
গ্রাহকদের পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও দাবি পরিশোধ করছে না অনেক জীবন বীমা কোম্পানি। বাধ্য হয়ে আইডিআরএ’র শরণাপন্ন হচ্ছে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। জমানো টাকা ফিরে পেতে প্রতিদিনই তারা আইডিআরএ অফিসে ভিড় করছেন। সর্বশেষ কোম্পানিগুলোকে টাকা পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ দুই মাস সময় দেয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর মালিকরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) নেতৃত্বেও আছেন এরা। তাই তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া যাচ্ছে না।
বিশেষ করে ৫টি জীবন বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ না করার অভিযোগ বেশি। মেয়াদ শেষ হলেও টাকা পরিশোধ না করায় দেশের ৫টি জীবন বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রায় ৬ হাজার গ্রাহকের আবেদন জমা হয়েছে আইডিআরএ’তে। গোল্ডেন লাইফ, বায়রা লাইফ, সানলাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ এবং সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক ড. রেজাউল ইসলাম বলেন, কয়েকটি কোম্পানি গ্রাহককে পলিসির টাকা দিচ্ছে না। সম্প্রতি এ ব্যাপারে আইডিআরএ’র কাছে বেশকিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। কোম্পানিগুলো টাকা না দিয়ে বিভিন্নভাবে গ্রাহককে হয়রানি করছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ গ্রামের গরিব মানুষ খুব কষ্ট করে টাকা জমা দিয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও কোম্পানিগুলো তাদের টাকা দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা প্রতিটি কোম্পানির সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করে কঠোর বার্তা দিয়েছি। আর টাকা পরিশোধের সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে বাধ্য হয়েই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আইডিআরএ’র তথ্য অনুসারে, ৫ কোম্পানির বিরুদ্ধে ৫৬০৯ গ্রাহককে পলিসির টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগ জমা পড়েছে। এ ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যেসব নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছে পৌঁছাতে পারেনি, সে সংখ্যা হিসাব করলে তা ৫০-৬০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
যেসব কোম্পানি গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করছে না, এর মধ্যে প্রথম অবস্থানে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স। আইডিআরএ’র কাছেই ২ হাজার ৩৪৪টি অভিযোগ রয়েছে। এসব পলিসির বিপরীতে সুদ ছাড়া টাকার পরিমাণ ৩ কোটি। কিন্তু সুদসহ হিসাব করলে তা কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার মালিকানাধীন বায়রা লাইফের বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৯৪ জন গ্রাহকের অভিযোগ জমা পড়েছে। ইতিমধ্যে কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। আইডিআরএ’র তদন্ত অনুসারে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির কাছে মোট ৮ হাজার ২৩৭ জন গ্রাহক অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে কোম্পানিকে ১৩টি চিঠি দেয়াসহ ২টি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ১ হাজার ৬১০ জন গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করেছে। এরপরও ৬ হাজার ৬২৭ জন গ্রাহকের টাকা পরিশোধ হয়নি।
আইডিআরএ জমাকৃত আবেদন অনুযায়ী ১ হাজার ২১০ জন গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করছে না সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স। পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর তারা গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করছে না। এ ছাড়াও আইডিআরএ’র বাইরে থাকা অভিযোগ তদন্ত করলে বিশাল আকারে পৌঁছাবে।
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান রুবিনা হামিদ। বর্তমানে তিনি বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএর প্রথম সহ-সভাপতি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গ্রæপ বীমা রয়েছে তার কোম্পানিতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান নামেই টিকে আছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এরপর প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু খুদে বার্তার মাধ্যমে লিখে জানানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ব্যবসায়ী মো. আবদুর রবের মালিকানাধীন হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৭৮৮টি পলিসির টাকা দিচ্ছে না। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নেতা মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মালিকানাধীন সানফ্লাওয়ার লাইফের বিরুদ্ধে ১১৫টি অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পলিসির টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রতিদিনই আইডিআরএ’র কর্মকর্তাদের রুমের সামনে গ্রাহকের লাইন। দীর্ঘদিন কোম্পানির কাছে ধরনা দিয়ে শেষ পর্যন্ত আসছে আইডিআরএ’র কাছে। হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অফিসে কেউ গেলে ভিড় দেখে মনে হবে এখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য বিতরণ হচ্ছে। কর্মকর্তাদের সামনে গ্রাহকরা কান্নায় ভেঙে পড়ছে।
বীমা আইন অনুসারে পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিশ্রæত টাকা দিতে হয়। আর ৯০ দিনের বেশি হলে বাকি দিনগুলোর সুদসহ টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু কোম্পানিগুলো টাকা পরিশোধ না করে গ্রাহককে বছরের পর বছর হয়রানি করছে। এরা পলিসির টাকা আত্মসাৎ করেছে। সূত্র বলছে, পুরো বীমা খাতেই বিশৃঙ্খলা রয়েছে। গ্রাহকের জমা টাকা তাদেরকে ফেরত দিতে হবে, এই হিসাব প্রায় কোনো কোম্পানিরই নেই। কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়াভাবে টাকা ব্যয় করছে।
Posted ২:২৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed