বিবিএনিউজ.নেট | মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০১৯ | প্রিন্ট | 972 বার পঠিত
ছয় বছর পর প্রগ্রেসিভ লাইফ নিয়ে চলমান আইনি জটিলতার অবসান হয়েছে। উচ্চ আদালতের আদেশ মেনে দুদফায় ছয় বছরের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করবে কোম্পানিটি। সেই সঙ্গে এ সময়ের আয়-ব্যয় ও জীবন বীমা তহবিলের আকার বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশও দিতে পারবে কোম্পানিটি।
চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় এসব বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে বেসরকারি ওই জীবন বীমা কোম্পানি এজিএম নিয়ে চলমান অচলাবস্থা ও বিনিয়োগকারীদের ধোঁয়াশা কাটছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০০ সালের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু করে বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। লাভজনক অবস্থা নিয়ে ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে আসে কোম্পানিটি। বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বোঝা বইতে গিয়ে জীবন বীমার বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকা কোম্পানিটি ২০১৩ সালে এসে বড় সংকটের মুখে পড়ে। প্রগ্রেসিভ লাইফের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। যে কারণে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়। একই কারণে গত ছয় বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ ও নিরীক্ষিত আর্থিক তথ্যও দিতে পারেনি কোম্পানিটি। যে কারণে প্রগ্রেসিভ লাইফ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে।
তথ্যমতে, উদ্যোক্তা-পরিচালকদের পাল্টাপাল্টি রিট পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি কোম্পানিকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। নির্দেশনায়, দুই ধাপে বিগত ছয় বছরের এজিএম সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম দফায় ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সাল পর্যন্ত সময়ের এজিএম করবে প্রগ্রেসিভ লাইফ। এজন্য আগামী বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদ সভার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ওই সভায় গত তিন বছরের আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগকারীদের এজিএম ও লভ্যাংশ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কোম্পানিটি। আর এর মধ্য দিয়ে ছয় বছর পর কোম্পানিটিকে নিয়ে বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা-হতাশা কাটছে।
প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দীপেন কুমার সাহা রায় বলেন, ‘উচ্চ আদালত থেকে দুই ধাপে বিগত ছয় বছরের এজিএম করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। চলতি সপ্তাহে পর্ষদ সভায় ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে। সভায় এজিএমের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে শুরু থেকে ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। যে কারণে প্রথম সাত বছর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১০ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কোম্পানিটির কার্যক্রম নিরীক্ষাও করিয়েছে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। ওই নিরীক্ষায় কোম্পানিটির দায়িত্বশীল শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-জালিয়াতির তথ্য উঠে আসে। যে কারণে কোম্পানিটির ভ্যালুয়েশন বেসিস অনুমোদন দিচ্ছে না আইডিআরএ। প্রগ্রেসিভ লাইফের লাইসেন্স নবায়নও আটকে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে বীমা আইন ও নির্দেশনা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১৪ সালে কোম্পানিটিকে আট লাখ টাকা জরিমানাও করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এসব কারণে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে প্রগ্রেসিভ লাইফ।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর মোট শেয়ারের ৫৭ দশমিক ৬২ শতাংশই উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৮ দশমিক ২৯ শেয়ার রয়েছে। আইনি জটিলতায় এজিএম না হওয়ায় ২০১৪ সালের পর থেকে কোম্পানির আয়-ব্যয়, জীবন বীমা তহবিল ও লভ্যাংশসহ কোনো তথ্যই পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। তবে মামলায় অগ্রগতির আগাম তথ্যে চলতি বছরের শুরু থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর তুলনামূলক হারে বাড়ছে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রগ্রেসিভ লাইফের প্রতিটি শেয়ার ৯৫ টাকা ২০ পয়সা লেনদেন হয়েছে।
Posted ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed