আবুল কাশেম | সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 475 বার পঠিত
গ্রাহকদের প্রায় ২ হাজার ৮শ কোটি টাকা লুটপাটের মামলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের তৃতীয় দফায় ফের ৪দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দফায় একদিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে ১২ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে ৪দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে প্রথম দফার দুইদিনের রিমান্ড শেষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে আদালতে হাজির করে ১৩ দিনের রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহম্মেদের আদালত তার বিরুদ্ধে ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এই মামলার অপর দুই আসামী কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক ও অডিট কমিটর চেয়ারম্যান এম এ খালেক এবং তার ছেলে সাবেক পরিচালক রুবায়াত খালেককে জেলগেটে দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
সূত্র মতে, ফারইস্ট লাইফের প্রায় ২ হাজার ৮শত কোটি টাকা লোপাট ও আত্মসাতের অভিযোগে ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ৩ জন গ্রেফতার হলেও বাকী ১১ জন এখনও গ্রেফতার হয়নি। ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে তারা বিভিন্ন কোম্পানিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে সূত্র জানায়।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর ফারইস্ট লাইফের পক্ষ থেকে মো. জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে ডিএমপি’র শাহবাগ থানায় ১৪ জনের নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৫(৯)২০২২। মামলার এজাহারে ১১ আসামীকে পলাতক বলা হয়েছে। এই ১১ আসামীর মধ্যে কারাবন্দি খালেকের আরেক ছেলে সাবেক পরিচালক শাহরিয়ার খালেদ, খালেকের মেয়ের জামাই সাবেক পরিচালক তানভিরুল হক, খালেকের শ্যালক সাবেক পরিচালক নূর মোহাম্মদ ডিকন, কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুল আমিন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.আলী হোসেন, সাবেক চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. হেমায়েত উল্লাহ, সাবেক উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিএফও মো. আলমগীর কবির, হিসাব বিভাগের প্রধান সাবেক এ এম ডি মো. কামরুল হাসান খান, সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যাংকিং শাখার প্রধান শেখ আব্দুর রাজ্জাক, হেড অব ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স সাবেক জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. কামাল হোসেন হাওলাদার এবং ব্যাংকিং শাখার সাবেক ফার্স্ট অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মাকবুল এলাহী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ১১ জনের মধ্যে কয়েকজন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করছেন। এরমধ্যে ফারইস্ট লাইফের সাবেক চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. হেমায়েত উল্লাহ বর্তমানে পদ্মা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদের জন্য আইডিআরএ কাগজ জমা দিলে তার আবেদন নাকোচ হয়। ফলে কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফারইস্ট লাইফের হেড অব ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স সাবেক জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো.কামাল হোসেন হাওলাদার বর্তমানে প্রাইম ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে এএমডি ইনচার্জ ইন্টারনাল অডিট কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন।
সূত্র মতে, ওই ১১ জনের কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। তারা বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় নিজের বাসা বাড়িতেই পরিবার পরিজনদের সাথে বসবাস করছেন। মামলায় অভিযুক্তদের অনেকে আবার গোপনে ‘ফারইস্ট লাইফের’ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। আর এই ঘনিষ্ঠতার কারণেই দায়ের করা মামলায় অভিযুক্তদের পলাতক উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও মামলার এজাহারে এই কোম্পানির রাঘব বোয়ালদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। কৌশলে বলা হয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের আমলে আরও ৭/৮ জন সাবেক পরিচালকসহ অনেক সুবিধাভোগীরা কোম্পানির বিপুল পরিমাণ টাকা লুটপাট করেছেন। অথচ ওইসব সুবিধাভোগীদের নাম কেনো এজাহারে নেই, এ নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম একাই কি এই কোম্পানির সব কার্যক্রম করেছেন ? তার আমলের প্রভাবশালী পরিচালকরা এখনও কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা কেনো ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছেন, এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
উল্লেøখ্য, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের শীর্ষস্থানীয় জীবন বীমা কোম্পানিতে পরিণত হয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ। কোম্পানিটি ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০০৭ সালে এই কোম্পানির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অবতীর্ণ হন মো. নজরুল ইসলাম। ২০০৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে তার সাথে পরিচালনা পর্ষদ ছাড়াও বিভিন্ন কমিটিতে সম্পৃক্ত ছিলেন বর্তমান পরিচালক হেলাল মিয়া, পরিচালক জহুরুল ইসলাম এবং সাবেক পরিচালকগণ। অথচ তাদের অনেকের নামের সাথে লুটপাটের অভিযোগের ছোয়া লাগেনি। এটা কিভাবে সম্ভব ? প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এমনকি দীর্ঘ সময় কোম্পানিতে বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা হেলাল মিয়া ও জহুরুল ইসলাম কোম্পানির বর্তমান বোর্ডের সদস্য রয়েছেন।
সূত্র জানায়, জহুরুল ইসলাম ২০০৬-২০০৭ সালে বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। হেলাল মিয়াও এই কোম্পানির নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি কোম্পানির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের শেষ দিনপর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, ফারইস্ট লাইফের গ্রেফতারকৃত সাবেক চেয়ারম্যান, দুই সাবেক পরিচালক এবং পলাতক অপর ১১ আসামীর সঙ্গে আরও কতিপয় পরিচালক ও অসাধু কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজশে ২০১১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতারণা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। তারা নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রতারণামূলক বিনিয়োগের নামে এই কোম্পানির বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।
সূত্র মতে, নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনায় ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালকও নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই ১০ জন হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ রহমত উল্লাহকে চেয়ারম্যান করে নতুন পর্ষদে পরিচালক হিসেবে রাখা হয় মোহাম্মদ সানাউল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সিইও মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বীমা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল গাজী মো. খালিদ হোসেন, স্নেহাশীষ অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া, একাত্তর মিডিয়ার প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক, জি সেভেন সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান, জনতা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিকরুল হক এবং নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম চৌধুরী।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে কোম্পানির নামে জমি ক্রয়েই বাজার মূল্যের চেয়ে অধিমূল্য নির্ধারণ, জমির উন্নয়ন এবং এমটিডিআর বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়া এবং ক্ষতিকর বিনিয়োগে মাধ্যমে ২ হাজার ৩৬৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং পরিচালকগণসহ দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজসে নানা অনিয়মের মাধ্যমে আরও ৪৩২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র মতে, বীমা আইন ২০১০ এর ৪৮ ধারা অনুসারে ফারইস্ট লাইফের জমি ক্রয় সংক্রান্ত অভিযোগ প্রসঙ্গে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনেই লুটপাটের ঘটনা বেরিয়ে আসে। আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল তদন্তকারী হিসেবে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস সিরাজ খান বসাক এন্ড কো. কে নিয়োগ করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের ১৮ মে আইডিআরএ’র কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে ফারইস্ট লাইফের জন্য ঢাকাসহ দেশের ১৪টি স্থানে জমি ক্রয়ে দুর্নীতি ও লুপাটের তথ্য উল্লেখ করা হয়। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশের ৭টি স্থানের জমি ক্রয় ও ভবন নির্মাণ, মাটি ভরাটসহ উন্নয়নের নামে ৬৬৫ কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য বেরিয়ে আসে। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে জমিগুলো বাজার দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে ক্রয় করা হয়। জমির ক্রয় বাবদ প্রকৃত খরচ, মাটি ভরাট না করেই দেখানো হয়েছে জমির উন্নয়ন ব্যয়। একই জমি একাধিকবার রেজিস্ট্রেশন ও খরচ করা হয়েছে।
ফারইস্ট লাইফের গোড়ান চটবাড়িতে জমি ক্রয়ে ২০২০ সালে ২৪ জুন ‘সাড়ে ১৪ কোটি টাকার জমিতে উন্নয়ন বাবদ ১৯৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে ১৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা লুটপাট হয়েছে। সিরাজ খান বসাকের এই তদন্তে গোড়ান চটবাড়িতে ৭৮৬ শতাংশ জমি ক্রয় ও উন্নয়নের নামে ১৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা ও জমি রেজিস্ট্রি বাবদ ১ কোটি ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পড়ে। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং, কেডিসি কন্সট্রাকশন ও মাহবুবা এসোসিয়েটকে চেকে দেয়া হয়েছে ৪০ কোট টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন খরচ বাবদ চেকে দেয়া হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে ফারইস্ট লাইফের ৭২ কাকরাইলের জমির ক্রয়মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে ১৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং এর ফলে রেজিস্ট্রেশন খরচ বেশি হয়েছে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ৪ বছরে ভাড়া বাবদ আয়ে লোকসান হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ফারইস্ট লাইফের ৩৬ তোপখানা রোডের জমির ক্রয়মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে ১২৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং এর ফলে রেজিস্ট্রেশন খরচ বেশি হয়েছে ১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ ছাড়াও জমিটিতে থাকা জরাজীর্ন ও পরিত্যাক্ত ভবনের মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
এদিকে আইডআরএ’র গত ১৪ মার্চের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ফারইস্ট লাইফের সাবেক পরিচালক এম এ খালেক ৩৭৬ কোটি টাকার সম্পদ প্রতিষ্ঠানটিকে ফেরত দিয়েছে। যার মধ্যে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের গুলশান নর্থ এভিনিউয়ের এই ৪০/১ নং প্লটও ছিল। এই জমিতেই লোকসান ৮৯ কোটি টাকা।
এই কোম্পানিটির গুলশান-২ এর রোড নং ৫০ এর প্লট নং ২ এর জমির ক্রয়মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে ৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং এর ফলে রেজিস্ট্রেশন খরচ বেশি হয়েছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। একই এলাকার রোড নং ৬১ এর প্লট নং ১/এ ক্রয় বাবদ অতিরিক্ত প্রদান করা হয়েছে ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
সিরাজ খান বসাক এন্ড কো. এর বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে, বরিশালের আলেকান্দায় ফারইস্ট লাইফের জমির ক্রয়মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং এর ফলে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশন খরচ হয়েছে। বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এমটিডিআর বন্ধক রেখে ১৩৩২ কোটি ৩২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে ফারইস্ট লাইফের সাবেক পরিচালনা পর্ষদ। প্রতিবেদনটিতে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত হিসাব ধরা হয়েছে। এর মধ্যে এম এ খালেক, প্রাইম প্রোপার্টি, প্রাইম ফাইন্যান্স, ম্যাকসন্স, মিজানুর রহমানের নামে লিয়েন রেখে ৫৪২ কোটি ২১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
এ ছাড়াও ফারইস্টের এমটিডিআর বন্ধক রেখে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির নামে ১৬৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা; পিএফআই প্রোপার্টিজের নামে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা; ফারইস্ট প্রোপার্টিজের নামে, ১৫১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা; প্রাইম এশিয়া ফাউন্টেশনের নামে ৯২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; মিথিলা প্রোপার্টিজের নামে ৬৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা; পিএফআই সিকিউরিটিজের নামে ৫৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা; মিথিলা টেক্সটাইলের নামে ৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা; কে এম খালেদের নামে ২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা; মোল্লা এন্টারপ্রাইজের নামে ১৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা; আজাদ অটোমোবাইলস’র নামে ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং কামাল উদ্দিনের নামে ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে ফারইস্ট লাইফের ২৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘঠনা রয়েছে। এরমধ্যে বাংলালায়ন কনভার্টিবল জিরো কুপন বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে ১৩৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা; পিএফআই সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের মাধ্যমে ১৩২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা; প্রাইম ফ্যাইন্যান্সিয়াল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টে বিনিয়োগের মাধ্যমে ১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং আল-ফারুক ব্যাগস লিমিটেডে বিনিয়োগের মাধ্যমে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা রয়েছে।
অ্যাডভান্সসহ কর্মকর্তাদের নামে ভুয়া ব্যাংক একাউন্টে আত্মসাৎ ৮৪ কোটি টাকা , ফারইস্ট লাইফের কর্মকর্তাদের নামে ভুয়া ব্যাংক একাউন্ট খুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে কোম্পানিটির ১০ কোটি টাকা, কর্মকর্তারা আরও ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালে ফারইস্ট লাইফে ৪৩২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার পরিচালনাগত ত্রুটি ও অনিয়ম হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালনাগত ত্রুটি হয়েছে ৩৪ কোটি টাকার এবং অনিয়ম হয়েছে ৩৯৯ কোটি টাকার।
সাবেক মুখ্য নির্বাহী হেমায়েত উল্লাহকে পারফরমেন্স বোনাস প্রদান এবং কোম্পানি কর্তৃক অতিরিক্ত আয়কর বহন করা হয়েছে ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- এফআইএলআইসিএল-ইসিএসএল’কে ১২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং পিআইএলআইএল-ইসিএসএল’কে ৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান। অসঙ্গত প্রক্রিয়ায় আজাদ অটোমোবাইলস থেকে ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকার মটরগাড়ি ক্রয়সহ পরিবহন সংক্রান্ত অনিয়ম হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এজেন্ট ও এমপ্লয়ার অব এজেন্টদের আইনের বাইরে ৬৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাতাদি প্রদান। আইন লঙ্ঘন করে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে ৭ কোটি ৫ লাখ টাকার হোমলোন প্রদান। পলিসি ও রেভিন্যু স্ট্যাম্প বিষয়ে ৭৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত দেখানো।
Posted ১২:৩৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy