আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ | বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 690 বার পঠিত
দেশের বেসরকারি লাইফ বীমা কোম্পানি বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) পক্ষ থেকে কোম্পানিটিকে ২১ মে প্রাথমিক নোটিশ দেয়া হয়েছে। ওই নোটিশে কেন পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হবে না, তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। নোটিশের জবাব এলেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আইডিআরএ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে ২০১৮ সালে কোম্পানিটিকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ওই টাকা এখনো পরিশোধ করেনি বায়রা লাইফ।
বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ৬ হাজার ৬২৭জন গ্রাহকের পলিসির টাকা না দিয়ে প্রতারণা অভিযোগ উঠেছে। টাকা ফেরত পেতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সামনে প্রতিদিন শতশত গ্রাহক ভিড় করছে। অথচ টাকা দেয়াতো দুরের কথা, আইন লঙ্ঘন করে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা দামি ‘লেক্সাস গাড়ি’ ব্যবহারসহ বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএ’র সদস্য গকুল চাঁদ বলেন, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এর আগে গ্রাহকদের দাবি প‚রণের জন্য আমরা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে ডেকেছিলাম। ওই সময়ে পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে ৩ মাস সময় নেয়া হয়েছে। এই তিন মাসের মধ্যে তারা দাবি পরিশোধের কথা বলেছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি না হওয়ায় এ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, বীমাখাতে বড় সমস্যা মানুষের আস্থা সংকট। এই সংকট দূর করতে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় কঠিন পদক্ষেপ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আইডিআরএ।
সূত্র জানায়, কোম্পানিটির পর্ষদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত। কিন্তু নোটিশ দিয়ে সময় না দিলে তারা উচ্চ আদালতে রিট করতে পারে। এছাড়াও আরও চারটি কোম্পানির বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বর্তমানে ১২ সদস্য বিশিষ্ট বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদ আবুল বাশার, ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফরিদ আহমেদ, পরিচালক মো. মফিজুর রহমান চৌধুরী, ফজলে আকবর চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ মারফাত উল্লাহ, মো. মনসুর আহমেদ কালাম, মো. আবুল বারাকাত ভূঁইয়া, মো. অনীক ইনতেসার আহমেদ, মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, নাসির উদ্দিন। এছাড়াও স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে রয়েছেন আশরাফ উদ্দিন এবং আজিজুল হক দুলাল।
বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাছে দেয়া আইডিআরের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে তারা এখাতে তীব্র ইমেজ সংকট তৈরি করছে। কোম্পানিটি ২০১০ সালের বীমা আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে কোম্পানিটিকে একটি অকার্যকর বীমা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এ কারণে বীমা আইনের ৯৫ ধারা মোতাবেক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করে কেন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে না তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পলিসির টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রতিদিনই আইডিআরের কর্মকর্তাদের রুমের সামনে গ্রাহকের লাইন থাকে। বছরের পর বছর কোম্পানির কাছে ধরনা দিয়ে শেষ পর্যন্ত আসছে আইডিআরের কাছে। টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা কান্নায় ভেঙে পড়ছে। ফলে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে আইডিআরএ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইডিআরের একজন সদস্য বলেন, সহজ সরল এসব মানুষগুলোর কান্না সহ্য করা যায় না। ফলে আইনে যতটুকু ক্ষমতা দেয়া আছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। কোনোভাবেই প্রতারক কোম্পানি ছাড় পাবে না।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, আইন লঙ্ঘন করে কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যয়, নির্ধারিত সময়ে শেয়ারবাজারে না আসা এবং আইন অনুসারে কোম্পানির পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার নেই। ফলে পুরো বীমাখাতে একটি কঠোর বার্তা দিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
Posted ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed