শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত ১০ অর্থনৈতিক অঞ্চল

বিবিএনিউজ.নেট   |   বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   784 বার পঠিত

বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত ১০ অর্থনৈতিক অঞ্চল

ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক এ উন্নয়নকে ত্বরান্বিত ও টেকসই করতে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে পণ্য রফতানি বাবদ অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এরই মধ্যে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল।

বেজার হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকাজ সমাপ্ত হয়েছে। বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে—বাগেরহাটে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মৌলভীবাজারে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন, আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, মুন্সীগঞ্জে আব্দুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল, গাজীপুরে বে অর্থনৈতিক অঞ্চল, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী ড্রাই ডক ইকোনমিক জোন এবং কিশোরগঞ্জে কিশোরগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

বেজার প্রতিবেদনে ১০টির কথা বলা হলেও বেজা নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর দাবি, ১০টি নয় বরং মোট ১৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এখন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, হালনাগাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের বেশির ভাগই বেসরকারি খাতের। এগুলো বাদে মোংলায় শিল্প হচ্ছে, মিরসরাইতে শিল্প হচ্ছে। বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত আছে মৌলভীবাজার এবং ফেনীও। সব মিলিয়ে ১৪টি অঞ্চল বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। বেজা এ মুহূর্তে ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় মোংলা সমুদ্রবন্দর ও মোংলা ইপিজেডের পাশে ২০৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল। অর্থনৈতিক অঞ্চলটির উন্নয়ন ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে সিকদার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোন প্রাইভেট লিমিটেড। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এরই মধ্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংযোগ সড়ক, ব্রিজ, সুপেয় পানি সরবরাহ লাইন, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে বেজা। এর অভ্যন্তরে সীমিত আকারে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। তবে শিল্প-কারখানা স্থাপন শুরু হয়নি এখনো।

বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে ৩৫২ একর জমির ওপর অবস্থিত শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, যার পূর্বে সিলেট, পশ্চিমে হবিগঞ্জ, উত্তরে সুনামগঞ্জ ও দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ছয়টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ২৩১ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ১৪২ একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে বেসরকারি খাতের আরেক অর্থনৈতিক অঞ্চল আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়া এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০ কোটি ২০ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে।

আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের মাধ্যমে এরই মধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে হোন্ডা মোটরস। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব ফিন্যান্স কমার্শিয়াল শাহ মোহাম্মদ আশেকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের বিনিয়োগ প্রকল্প বেজার সহযোগিতায় সুন্দর পরিবেশে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ আছে, গ্যাসের জন্যও আবেদন করা আছে। দ্রুতই সংযোগ পাব বলে আশা করছি। গ্যাস-বিদ্যুৎ সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে পারলে এ অঞ্চলে বিনিয়োগ আরো বাড়বে।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনাঘাটে ৬৮ একর জমিতে গড়ে উঠেছে মেঘনা ইকোনমিক জোন। যদিও এর জন্য ২৪৫ একর জমি প্রস্তাব করা হয়েছিল। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এ পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে ৯৩ কোটি ৭৬ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। অনুমোদিত শিল্প ইউনিট রয়েছে ১০টি। এরই মধ্যে পেপার অ্যান্ড পাল্প ইন্ডাস্ট্রিজ, কেমিক্যাল প্লান্ট, ডাল ও আটা মিল স্থাপন করা হয়েছে সেখানে।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় মেঘনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠা করা আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন। প্রায় ৭৬ একর জমিতে গড়ে ওঠা এ অঞ্চলে এ পর্যন্ত ২৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এখানে প্রায় সাত হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এরই মধ্যে বেভারেজ, ইস্পাত কারখানা, সিমেন্ট পেপার ব্যাগ উৎপাদন শুরু হয়েছে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে।

‘বে গ্রুপ’-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বে ইকোনমিক জোন লিমিটেড’। মোট ৬৫ একর জমিতে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গাজীপুর-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে গাজীপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত। ২০১৭ সালের এপ্রিলে চূড়ান্ত লাইসেন্স পায় এটি। উন্নয়ন ব্যয়সহ এ অঞ্চলে বিনিয়োগের পরিমাণ ৮ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনের সরাসরি বিনিয়োগে স্থাপিত হয়েছে খেলনাপণ্য তৈরির কারখানা ‘মেইগো বাংলাদেশ লিমিটেড’। এ কারখানার উৎপাদিত পণ্যই এখন রফতানি হচ্ছে বিদেশে।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যেরবাজার এলাকায় ৮৩ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে আমান ইকোনমিক জোন। উন্নয়ন ব্যয়সহ এ অঞ্চলে এ পর্যন্ত ৩২ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। সেখানে স্থাপিত শিল্প-কারখানার মধ্যে আছে সিমেন্ট কারখানা, প্যাকেজিং এবং শিপ বিল্ডিং।

আমান গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে শিল্প স্থাপন শুরু হয়েছে আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে। এখন সিমেন্ট, প্যাকেজিং ও শিপ বিল্ডিংয়ের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতের প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। গ্যাসের আবেদন করেছি, আশা করছি দ্রুত সংযোগ স্থাপন হবে। গ্যাস পাওয়া গেলে আরো অনেক বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা যাবে। অনেক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে।

সিটি গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিটি ইকোনমিক জোন লিমিটেড। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৮১ দশমিক ৮৮ একর জমির ওপর এটি অবস্থিত। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এ পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে ৬৭ কোটি ৫০ হাজার ডলার।

জাহাজ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে দেশের সর্বপ্রথম বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্ণফুলী ড্রাই ডক স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এসইজেড) লিমিটেড। গত ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়েছে এটি। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় গড়ে তোলা হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ডেডওয়েট টনেজ (ডিডব্লিউটি) ক্ষমতাসম্পন্ন এ ড্রাই ডক ইকোনমিক জোন। প্রকল্পটিতে সমুদ্রগামী জাহাজ মেরামত ও নির্মাণ শিল্পের বিকাশসহ বৈদেশিক বিনিয়োগের বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ১২ কোটি ডলার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত বলা হলেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন দুর্বলতা এখনো কাটেনি। ক্ষেত্রবিশেষে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া গেলেও তা নিরবচ্ছিন্ন হয়নি। গ্যাস প্রাপ্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি অনেক অঞ্চলে। বেসরকারি খাতের যে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গড়ে উঠেছে, তার মধ্যে আছে পুরনো শিল্প এলাকা থেকে রূপান্তর হওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল। সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এখনো শিল্প স্থাপন হয়নি।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিনিয়োগের জন্য প্রকৃত অর্থেই প্রস্তুত অর্থাৎ যেখানে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব ধরনের সুবিধা সবচেয়ে দ্রুত নিশ্চিত করা যাবে, এমন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে। এ রকম তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলও যদি পুরোপুরি সক্রিয় করা যায়, তাহলে আরো বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব হবে। এ ধারাবাহিকতায় দ্রুতই ১০০টি অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11187 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।