আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ | বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 711 বার পঠিত
নন-লাইফ বীমাখাতে একক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশনা দিয়ে গত ৩০ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আদায়কৃত প্রিমিয়াম জমা করতে যেকোনো তফসিলি ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট রাখতে পারবে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো। কোনোভাবেই একাধিক ব্যাংক হিসাব খোলা যাবে না। প্রিমিয়াম জমার ক্ষেত্রে যদি একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে তাহলে যেকোনো একটি রেখে বাকিগুলো ১৩ মে এর মধ্যে বন্ধ করে দিতে হবে। প্রজ্ঞাপন জারির পর অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণের জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য আয় জমাকরনের জন্য অপর একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রাখা যাবে। এছাড়া দাবি পরিশোধের জন্য একটি ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য একটি ব্যাংক হিসাব রাখা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রিমিয়াম জমাকরণ হিসাব থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ উক্ত হিসাবটিতে ট্রান্সফার করে নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই দাবির টাকা নগদে পরিশোধ করা যাবে না।
অভিযোগ রয়েছে কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ পলিসি করে, কাগজপত্রে তার অর্ধেকেরও কম দেখানো হয়। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পলিসির তথ্য গোপন রেখে তৈরি করা হয় আর্থিক প্রতিবেদন। এক্ষেত্রে কোম্পানীর নামে একাধিক ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। এসব হিসাবের মাধ্যমেই পরিশোধ করা হয় অতিরিক্ত কমিশনসহ কোম্পানির নানা ধরনের অবৈধ ব্যয়ের অর্থ। বীমা খাতের এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধের উদ্দেশ্যেই একক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালুর নির্দেশনা দিয়েছে আইডিআরএ।
আইডিআরএ’র প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নন-লাইফের সব ধরনের লেনদেন ক্রসড চেকের মাধ্যমে করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের বিশেষ প্রয়োজনে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ উত্তলন করা যেতে পারে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত এফ.ডি.আর ব্যতীত প্রয়োজনীয় অন্য যেকোনো বিষয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পূূর্বে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়াও যেকোনো পলিসিতে ১০ হাজার টাকার উপর বীমা স্ট্যাম্প প্রদেয় হলে অবশ্যই পে অর্ডার বা ক্রসড চেক মারফৎ পরিশোধ পূর্বক পৃথক চালানের মাধ্যমে তা প্রদান করতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ব্রাঞ্চ অফিসের খরচ নির্বাহের ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্রাঞ্চে একটি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রাখা যাবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রিমিয়াম হিসাব থেকে ক্রসড চেক বা ফান্ড ট্রান্সফার ছাড়া অন্য কোনো অর্থ উক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র একজন সদস্য বলেন, গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা ও কোম্পানির আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতেই কর্তৃপক্ষ এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ফলে স্বচ্ছতা আসবে নন-লাইফ বীমা খাতে।
তবে আইডিআরএ’র এমন পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করছে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো। এবিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, একক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি নিয়ে কোম্পানিগুলো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আইডিআরএ’র এ সিদ্ধান্ত নন-লাইফ বীমা সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে তারা। আমরা বিআইএ এর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে আইডিআরএর সঙ্গে আলোচনায় বসবো।
বীমা সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নন-লাইফ বীমাখাতে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় খাত কমিশন। ১০০ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই কমিশন দেয় কোনো কোনো কোম্পানি। তবে এর কোন হিসাব নেই। অথচ আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো হয় আইন মেনেই ১৫ শতাংশ কমিশন দেয়া হয়েছে। অবৈধভাবে দেয়া এই কমিশনের হিসাব মেলাতে কোম্পানিগুলো তাদের সংগ্রহ করা প্রিমিয়াম প্রদর্শন করে না। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পলিসির তথ্য গোপন রেখে তৈরি করা হয় আর্থিক প্রতিবেদন। এক্ষেত্রে কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। এসব হিসাবের মাধ্যমেই পরিশোধ করা হয় অতিরিক্ত কমিশনসহ কোম্পানির নানা ধরনের অবৈধ ব্যয়ের অর্থ। বীমাখাতের এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধের উদ্দেশ্যেই একক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালুর নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ।
Posted ১১:০২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed