বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে

ব্যাংকিং সেক্টর প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে : মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

আমেনা খাতুন প্রণামি   |   মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   440 বার পঠিত

ব্যাংকিং সেক্টর প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে : মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ব্যাংকিং সেক্টর প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। যার ফলে এ সেক্টরে ঋণ জালিয়াতি, ঋণখেলাপী, নানা অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ এবং দুর্নীতি বেড়েই চলছে। তিনি বলেন, দেশে যে হারে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ছে, সেই তুলনায় ব্যাংকগুলোতে সৎ, দক্ষ, সাহসী এবং কর্মঠ কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ হচ্ছে না। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যাংকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ব্যাংকের সংখ্যা অতিরিক্ত হওয়ায় বাজারে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতার হচ্ছে। আর সব ব্যাংকই একই রকম সেবা নিয়ে গ্রাহকের দ্বারে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকরা প্রত্যাশিত ব্যতিক্রম ও ভালমানের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। যার ফলে সকলের কাছে একই সেবা পাওয়ায় ও অতিরিক্ত ব্যাংকের কারণেই দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ। ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থতি নিয়ে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতির প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এ অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

ড.এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ব্যাংকিং সেক্টরের এ করুন পরিণতির প্রসঙ্গে বেশ কিছু সুনিদিষ্ট কারণ উল্লেখ করে বলেন, ব্যাংকখাত দিন দিন নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। তার কারণ খেলাপি ঋণ দিনকে দিন পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। ফলে ব্যাংকগুলো নির্ধারিত প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। সুশাসনের অভাবে বেড়েছে ঋণে অনিয়ম, যা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কর্তৃপক্ষ। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকির দায়িত্বে থাকলেও সুশাসন নিশ্চিত করতে পারছে না। সার্বিকভাবে ব্যাংকখাতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। অপরদিকে প্রভাবশালীদের কাছে জিম্মি ব্যাংকগুলো। ব্যাংকের উদ্যোক্তারা মিলেমিশে নানা অনিয়ম সংঘটিত করছে।

ড.এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের কাছে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি ব্যাংক এবং শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে কি ভাবছেন এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান , দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অনেক দিন ধরেই ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হচ্ছিল। ব্যাংকিং সেক্টর নানা জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হলেও এই মুহূর্তে সবচেয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে পর্বত প্রমাণ খেলাপি ঋণের উপস্থিতি।

খেলাপি ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়লেও তা কমিয়ে আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেকটাই প্রতিকারহীনভাবে বেড়ে চলেছে। খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায়ের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং নানাভাবে তাদের বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের উদ্যোক্তাগণ তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য মূলত ব্যাংকিং সেক্টরের উপর নির্ভর করে। কারণ দেশের পুঁজিবাজার এখনো সেভাবে বিকশিত হয়নি। ফলে শেয়ারবাজার শিল্পখাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আরো জানান, ব্যাংকিং সেক্টরে বর্তমানে যে অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে তার পেছনে কতগুলো কারণ আছে। এর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় সুশাসনের বিষয়টি। ব্যাংকিং সেক্টরে সার্বিকভাবে অভ্যন্তরীণ সুশাসনের প্রচণ্ড অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকের এক শ্রেণির কর্মকর্তা, বিশেষ করে পরিচালনা বোর্ডের এক শ্রেণির সদস্যদের মাঝে সৃষ্ট অশুভ উদ্দেশ্যের ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বর্তমানে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে।

আরো একটি সমস্যার প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন তা হলো, ব্যাংকিং সেক্টরে যেসব কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন তাদের অনেকেরই দক্ষতা প্রশ্নাতীত নয়। তাদের প্রকল্প বিশ্লেষণের সক্ষমতা ঘাটতি আছে। ফলে একটি ঋণ প্রস্তাব ব্যাংকে এলে বেশির ভাগ সময়ই তা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না। একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঋণ গ্রহীতা কেমন রিটার্ন পাবেন, ব্যাংক তার দেয়া ঋণের কিস্তি সঠিক সময়ে আদায় করতে পারবে কিনা তা অনুধাবন করা সম্ভব হয়না।

আবার কোনো কোনো সময় দক্ষতা থাকলেও তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো কর্মকর্তাদের পক্ষে সম্ভব হয়না। কারণ তাদের উপর বিভিন্ন মহলের চাপ থাকে। সেই চাপ উপেক্ষা করে একজন কর্মকর্তার পক্ষে সব সময় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয়না। তারা একটি প্রকল্পের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেন না। তারা পক্ষপাতমূলক রিপোর্ট দিয়ে থাকেন। ফলে আর্থিকভাবে অযোগ্য অনেক প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ মঞ্জুর করা হয়।

দেশের বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার সম্পর্কে ড.এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঋণের উপর সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ এবং আমানতের উপর প্রদেয় সুদের সর্বোচ্চ হার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এটাই ব্যাংকগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো আমানতের উপর সর্বোচ্ছ সাড়ে ৫ শতাংশ এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ৬ শতাংশ সুদ প্রদান করতে পারছে। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকগুলো আরো অনেক কম সুদ দিচ্ছে আমানতের উপর।

বর্তমানে দেশের শেয়ার বাজারের অবস্থা তেমন কোনো নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। বিক্রি করতে চেয়েও অনেকে আর শেয়ার বিক্রি করতে পারেন না। বিশেষ করে বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেন যারা করেন, তাদের ক্ষেত্রে পড়তি বাজারে শেয়ার বিক্রি করা বেশ কঠিন। শেয়ারের বিক্রি কমে যাওয়ায় লেনদেনেও তার প্রভাব পড়েছে। এই দুর্বলতার কারণ কি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন-বাজারে ভালো কোম্পানি আনার জন্য আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো শেয়ার বাজারে আসতে চায় না।

তিনি বলেন, তাই তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে হবে। আমি অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালে বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বাজারে নিয়ে আনতে পেরেছিলাম। ভালো কোম্পানি তা দেশি হোক বা বিদেশি হোক, সরকারি বা বেসরকারি হোক তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি শুধু একটি নীতি ঘোষণা করে দায়িত্ব শেষ করলাম তাহলে কোনো কাজ হবে না। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হলে এক ধরনের জবাবদিহিতা চলে আসে তাই অনেকেই শেয়ার বাজারে আসতে চান না। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার বাজারে আসতে চায় না।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৮:১১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(1677 বার পঠিত)
বিজ্ঞাপন
(1605 বার পঠিত)
বিজ্ঞাপন
(1281 বার পঠিত)
বিজ্ঞাপন
(1099 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।