নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট | 506 বার পঠিত
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পদত্যাগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেনসহ বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যানগন তার পদত্যাগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সম্প্রতি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেন খোদ প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন সিইও (সিসি) মীর রাশেদ বিন আমান। তার অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন গণম্যাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৭টি উল্লেখযোগ্য অনিয়মের বিষয়ে স্পেশাল অডিটের জন্য নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী এন্ড কোং কে নিয়োগ করেন। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের জরুরী সভা ডেকে নিজে পদত্যাগ করেন এবং প্রতিষ্ঠানে নিজের মেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান থাকা সত্ত্বেও স্বতন্ত্র পরিচালক কাজী মনিরুজ্জামানকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে সাহসী পদক্ষেপ নেন।
এদিকে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন, প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল), ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান এনামূল হক।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পদত্যাগের বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস যথাসময়ে সঠিক কাজটি করেছেন। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তদন্ত চলাকালে তিনি চেয়ারম্যান পদে থাকলে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতো। পদত্যাগ করে তিনি তদন্ত কার্যক্রম নিবিঘ্নে পরিচালনার পথ সুগম করে দিয়েছেন। স্বতন্ত্র পরিচালককে পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি মনে করি, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস পদত্যাগ করায় প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্তকৃত সিইও (সিসি) রাশেদ বিন আমানের বহিষ্কারাদেশ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন করলে নিরপেক্ষ তদন্তের কাজটি আরো ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত হবে।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পদত্যাগের বিষয়ে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, ইন্স্যুরেন্স সেক্টরের সুনাম অক্ষুন্ন রাখা সেক্টর সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের গুরুদায়িত্ব। আইডিআরএ’র সকল কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করা হলে এখাতে আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে। ইন্স্যুরেন্স সেক্টরের প্রেনিট্রেশন বৃদ্ধি পেলে দেশের অর্থনীতিও স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যাবে। তাই এখাতে আস্থা বৃদ্ধিতে সকলের মনযোগী হওয়া প্রয়োজন। চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, নি:সন্দেহে এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পদত্যাগকে সাহসী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ পাভেল। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কারো নামে অভিযোগ উঠলে পদত্যাগ করার মানসিকতাএখনো গড়ে উঠেনি। এটা ব্যাংক স্টেক্টর বা ইন্স্যুরেন্স সেক্টর যেটাই হোক। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পদত্যাগ বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পাশাপাশি তিনি প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র পরিচালকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম মনিরুল হক সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পদত্যাগ সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, যেহেতু সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বিভিন্ন অভিযোগের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তদন্ত চলমান। এক্ষেত্রে আমি হলে, আইডিআরএ সিদ্ধান্ত ব্যতিত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতাম না। আইডিআরএ যদি বলতো পদত্যাগ করেন তাহলে করতাম। স্বন্ত্র পরিচালককে চেয়ারম্যান দায়িত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রেও আমি আইডিআরএ’র সিদ্ধান্ত মোতাবেক পদক্ষেপ নিতাম।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পদত্যাগের বিষয়ে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, শুধু পদত্যাগ করাই সব কিছু নয়। কোম্পানির বিরুদ্ধে আইডিআরএ’র তদন্ত প্রতিবেদন মেনে নেওয়ার মানুষিকতাও তার থাকতে হবে।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান নূর-ই- হাফজা বলেছেন, গোলাম কুদ্দুসের পদত্যাগে কিছুই আসে যায় না। এটি তার একটি নাটক মাত্র। তিনি পদত্যাগ করে যে স্বতন্ত্র পরিচালককে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন, সেই কাজী মনিরুজ্জামান তারই অনুগত লোক। তাকে চেয়ারম্যান করায় প্রতিষ্ঠানে কোন স্বাচ্ছতা নিশ্চিত হবে বলে আমি মনে করি না।
Posted ৯:৪৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy