এস জেড ইসলাম | রবিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২১ | প্রিন্ট | 579 বার পঠিত
জনতা ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে নিয়োগ পেতে অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এ ছাড়া বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কমিশন-সংক্রান্ত সার্কুলার ভঙ্গ ও মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানটিতে সিইও’র চলতি দায়িত্বে (সিসি) থাকা বশির আহমেদকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। এমন পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে বীমা গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্টরা। ফলে তাদের মাঝে আবারো জেগে উঠেছে আশার আলো।
জানা গেছে, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ সাল থেকে জনতা ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব পালন করে আসছেন বশির আহমেদ। তাকে পূর্ণাঙ্গ সিইও হিসেবে নিয়োগ দিতে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থায় (আইডিআরএ) চিঠি দেয় জনতা ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু সিইও অনুমোদনের জন্য দাখিলকৃত কাগজপত্রে ত্রুটি থাকার প্রমাণ পায় আইডিআরএ’র অনুসন্ধানী দল। এর প্রেক্ষিতে বীমা আইনের ৫০ ধারা অনুযায়ী গত ২৯ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করে চিঠি দেয় আইডিআরএ। এমনকি ভবিষ্যতে অন্য কোম্পানিতে তাকে নিয়োগ না দিতে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় আইডিআরএ।
তবে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠসূত্রে জানা গেছে, মূলত জনতা ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অন্তর্দ¦ন্দ্বে পাঁঠার বলি হয়েছেন বশির আহমেদ। কিন্তু প্রেক্ষাপট যাই হোক, আইডিআরএ’র এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে বীমার সাধারণ গ্রাহকরা। তারা বলছেন, কিছুটা বিলম্বে হলেও দায়িত্বানুভূতি সম্পর্কে সচেতন হয়েছে আইডিআরএ। যার প্রেক্ষাপটে ফারইস্টের সাবেক সিইও হেমায়েত উল্ল্যাহর মতো বশির আহমেদকেও অপসারণ করা হয়েছে।
গ্রাহকরা জানিয়েছেন, ‘তাদের (আইডিআরএ) এমন পদক্ষেপ আমাদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। অনিয়ম হলে যে প্রকৃতপক্ষেই ব্যবস্থা নেয়া হয় সে ব্যাপারে সন্দেহ পুরোপুরি দূর না হলেও কিছুটা আস্থা অবশ্যই এসেছে। আইন ভাঙলে কেউ পার পাবে না-এমন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে আইডিআরএ।’ পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন ইতিবাচক পদক্ষেপ ভবিষ্যতেও বহাল থাকবে বলে আশা করছেন তারা।
তবে বীমা সংশ্লিষ্টরা এমন ঘটনায় কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করছেন। তারা মনে করছেন, এই সিইও’র ক্ষেত্রে কিছুটা বেশিই কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে আইডিআরএ। ফলে এখানে কতটুকু স্বচ্ছতা রয়েছে সে বিষয়ে শঙ্কা আছে। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বীমাখাতে অসত্য ডকুমেন্ট দাখিল করে চাকরির ঘটনা ইতোপূর্বেও ঘটেছে। কিন্তু এজন্য অভিযুক্তের বক্তব্য না শুনেই সরাসরি অপসারণ এবং অন্য কোম্পানিতেও চাকরির সুযোগ বন্ধ করে দেয়ার মতো কঠোর ঘটনা ঘটেনি। ফলে এটা লঘু পাপে গুরুদণ্ডের মতো এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত কিনা-তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা। কেননা সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহীর চলতি দায়িত্বে থাকা শমসের হাসানও দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ সিইও’র চলতি দায়িত্বে রয়েছেন। আবার ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের সিইও মীর নাজিম উদ্দিন ও প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফের সিইও ড. কিশোর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বহুবার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার আইন ও নির্দেশনা ভঙ্গের প্রমাণ পাওয়া গেছে তদন্তে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আইডিআরএ’র তেমন কোনো পদক্ষেপ নজরে পড়েনি।
বশির আহমেদকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেয়ার বিষয়ে জানা যায়, তাকে চাকরি থেকে অপসারণের চিঠি দেয়া হয় গত ২৯ সেপ্টেম্বর। পরদিন থেকে যা কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে এই অপসারণের আগে নিজের মতামত তুলে ধরতে তাকে কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। বরং অপসারণ করে ৪ অক্টোবরের মধ্যে মতামত তুলে ধরতে বলা হয়। এক্ষেত্রে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ব্যতীত প্রথমেই অপসারণ করায় এই সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বীমা সংশ্লিষ্টদের মতে, ‘এ বিষয়ে যদি উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আসে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’ তবে এ নিয়ে অপসারণকৃত বশির আহমেদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে বীমা বিশ্লেষকরাও আইডিআরএ’র এমন ব্যবস্থা গ্রহণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে বিষয়টি শুধু দু’একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে ব্যবস্থা নেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কর্তৃপক্ষকে স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বিশ্লেষকদের মতে, বীমা খাতে এমন অসংখ্য হেমায়েত উল্ল্যাহ, বশির আহমেদ, শমসের হাসান, মীর নাজিম ও কিশোর বিশ্বাসের মতো লোক ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের ক্ষেত্রেও আইডিআরএকে নিজস্ব উদ্যোগে তদন্ত চালাতে হবে। এমনটা হলে আইডিআরএ’র শুদ্ধাচার ও স্বচ্ছতার বিষয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহের উদ্রেক হবে না।
Posted ১২:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy