নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট | 928 বার পঠিত
প্রতীক্ষিত ব্যাংকাসুরেন্স চালু হচ্ছে শিগগিরই। ইতিমধ্যে ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন চূড়ান্ত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আগামী মে মাসেই গাইডলাইনসহ ব্যাংকাসুরেন্স চালুর প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে গত বছর ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন ফর ব্যাংকস চূড়ান্ত করে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সেই নির্দেশিকা ইংরেজি ভাষায় হওয়ায় বাংলায় প্রণয়ণের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কর্পোরেট এজেন্ট বা ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইনের খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি মিললেই দেশে ব্যাংকাসুরেন্স চালু করতে খুব বেশি দেরি হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে বলেছেন, ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন এখন শুধু মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মে মাসেই এটি চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে আশা করছি। মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ব্যাংকাসুরেন্স চালু করতে কালক্ষেপণ হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান।
ব্যাংকাসুরেন্স চালু হলে দেশের বীমা খাত বহুদূর এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী। তিনি মনে করেন, যেসব গ্রাহকের কাছে বীমা কোম্পানিগুলো এখনো পৌঁছাতে পারেনি; ব্যাংকাসুরেন্স তাদেরকে সেখানে পৌঁছে দেবে। বীমাখাতের উন্নয়নের জন্য ব্যাংকাসুরেন্স চালু করা খুবই জরুরি। আশা করি নির্দেশিকা প্রণয়ণের পর খুব শিগগিরই এটি চালু হবে। বেশ কয়েকটি বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যাংকাসুরেন্স চালুর সব ধরনের প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। তারা শুধু গাইডলাইনসের অপেক্ষায় রয়েছেন।
জানতে চাইলে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে বলেন, ব্যাংকাসুরেন্স চালুর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।
‘কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাসুরেন্স) নির্দেশিকা, ২০২২’ শিরোনামে আইডিআরএ’র গাইডলাইনের খসড়ায় কর্পোরেট এজেন্টের যোগ্যতা, প্রধান ব্যাংকাসুরেন্স নির্বাহীর যোগ্যতা, ব্যাংকাসুরেন্স কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লাইসেন্স ইস্যু, লাইসেন্স নবায়ন ও বাতিল, লাইসেন্স ফি ও মেয়াদকাল, লাইসেন্স স্থগিত এবং বাতিল, বীমাকারী ও ব্যাংকের মধ্যে ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি, প্রিমিয়াম সংগ্রহ, বীমা পণ্য বিক্রয় পদ্ধতি, কর্পোরেট এজেন্টের আচরণবিধি, কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাসুরেন্স) এর কমিশন, দাবি সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তিসহ ২৫ টি বিষয় নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, ব্যাংক বীমাকারীর কর্পোরেট এজেন্ট হিসাবে কাজ করবে। ব্যাংকাসুরেন্স পদ্ধতি চালুর জন্য ব্যাংকের নিজস্ব কোড অব কনডাক্ট থাকতে হবে। ব্যাংক কর্পোরেট এজেন্টের লাইসেন্স চাইলে ব্যাংক ও বীমাকারীর মধ্যকার খসড়া চুক্তিপত্র; ব্যাংকাসুরেন্স চালুর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পত্র; পে-অর্ডার বা একাউন্ট পেয়ি চেক দাখিল করতে হবে।
বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ব্যাংককে তিন বছরের জন্য কর্পোরেট এজেন্টের লাইসেন্স প্রদান করবে। কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স ফি বাবদ কর্পোরেট এজেন্টের লাইসেন্স নবায়নের সময় ব্যাংক ৫০ হাজার টাকা কর্তৃপক্ষের বরাবর জমা দিবে।
খসড়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, ব্যাংক বীমাকারীর পক্ষে বীমাকারীর নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করবে। কর্পোরেট এজেন্ট বীমাকারীর পক্ষে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বীমাকারীর রিপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইন রিপোর্ট প্রদান করবে। কোন অবস্থাতেই কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাসুরেন্স) এর প্রাপ্য কমিশন বাবদ আয় প্রিমিয়াম আয়ের সাথে সমন্বয় করা যাবে না। বীমা চুক্তি সম্পাদনের জন্য বীমাগ্রহীতার প্রস্তাবপত্রসমূহ, বীমাকারী কর্তৃক প্রদত্ত বীমাদলিলাদি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম অনুসৃত হবে, কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাসুরেন্স) এর কোন প্রভাব থাকবে না।
খসড়া নির্দেশিকায় বীমা পণ্য বিক্রয় পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ব্যাংক কর্পোরেট এজেন্ট হিসেবে অ্যাকাউন্টহোল্ডার বা গ্রাহকের নিকট লাইফ এবং নন-লাইফ বীমা কোম্পানির বীমা পরিকল্প বিক্রয়ের জন্য বিপণন চ্যানেলসমূহ যেমন: শাখা, টেলিমার্কেটিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, ওয়েবসাইট, অ্যাপস ইত্যাদির মাধ্যমে বীমা সুবিধার প্রস্তাবনা, বিজ্ঞাপন, বিক্রয়, বিতরণ অথবা বাজারজাতকরণ করতে পারবে; বীমাকারী বীমা পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে, গ্রাহক বীমার প্রস্তাবপত্র পূরণ করিবে এবং প্রিমিয়াম জমার বিপরীতে বীমা গ্রাহককে কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাসুরেন্স) প্রাথমিক রশিদ প্রদান করিবে। যথাযথ অবলিখন প্রক্রিয়া সম্পাদনের পর বীমা চুক্তিটি বীমাকারী কর্তৃক গৃহীত হইলে চূড়ান্ত রশিদ ও বীমাদলিল বীমা গ্রাহকের অনুকূলে প্রদান করা হইবে। বীমাকারী কর্তৃক বীমা পলিসি গৃহীত না হইলে এবং ইহা কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাসুরেন্স)-কে জানানোর তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রিমিয়াম বাবদ প্রদত্ত অর্থ আবশ্যিকভাবে বীমাগ্রহীতাকে বীমাকারী ফেরত প্রদান করিবে।
খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বীমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যাংকের কোন প্রকার দায় থাকবে না বরং বীমা দাবির সম্পূর্ণ অর্থ বীমাকারী বীমাগ্রহীতার সাথে চুক্তি মোতাবেক প্রদান করবে। খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ব্যাংক কর্তৃক কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বীমা পরিকল্প গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না; একটি ব্যাংককে সর্বোচ্চ ৪টি লাইফ ও ৪টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির সাথে চুক্তি সম্পাদনের নিমিত্তে কর্পোরেট এজেন্ট এর লাইসেন্স প্রদান করা হবে। একটি বীমা কোম্পানি সর্বোচ্চ ৪ টি ব্যাংকের সাথে ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি করতে পারবে।
কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাসুরেন্স) এর কমিশন বিষয়ে খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত সার্কুলার অনুসরণ করে নন-লাইফ বীমাপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যাংকাসুরেন্স কর্পোরেট এজেন্টকে বীমাকারী প্রিমিয়ামের সর্বোচ্চ ১৫% হারে কমিশন দিবে। জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ২০ বছর বা তদুর্ধ্ব মেয়াদি পরিকল্পের জন্য প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ ব্যাংককে কমিশন দেয়া যাবে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাসুরেন্স) চুক্তির আওতাধীন ব্যাংক তাদের হিসাবধারীদের নিকট ঋণ বা সঞ্চয়ের ঝুঁকি মোকাবিলায় বীমা কোম্পানির পক্ষে পৃথক গোষ্ঠী বীমা চুক্তির আওতায় বীমা পরিকল্প বিক্রয় করতে পারবে (যেমন: ক্রেডিট কার্ড, গৃহ ঋণ, গাড়ি ঋণ বা যে কোন ঋণ কিংবা যে কোন ধরনের সঞ্চয় স্কিম)। এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি কমিশন হিসাবে মোট প্রিমিয়ামের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কর্পোরেট এজেন্টকে (ব্যাংকাসুরেন্স) প্রদান করবে। প্রিমিয়াম কালেকশন ফি, লভ্যাংশ বন্টন বা অন্য কোন নামে কোন প্রকার অর্থ বা কমিশন কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাসুরেন্স)-কে প্রদান করা যাবে না। তবে নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ে আরও বেশি সচেতন করা এবং উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে নবায়ন প্রিমিয়াম নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্জনের পর বোনাস প্রদান করা হবে।
ব্যাংক অ্যান্স্যুরেন্স ব্যবসার জন্য প্রণীত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এ ব্যবসা করতে হলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। ব্যাংক অ্যাসুরেন্স ব্যবসার জন্য ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ হারের (সিআরআর) অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ ১২ দশমিক ৫ শতাংশের কম হতে পারবে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশোধিত মূলধন কাঠামো রেটিং গ্রেড (ব্যাসেল-৩) অনুসারে ক্রেডিট রেটিং-২ এর চেয়ে কম হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত ন্যূনতম ক্যামেলস রেটিং-২ পূরণ করবে। এছাড়া ব্যাংক অ্যাসুরেন্স ব্যবসার অনুমোদন পেতে হলে ব্যাংকগুলোকে সর্বশেষ তিন বছর ইতিবাচক নিট মুনাফায় থাকতে হবে। এ ব্যবসার জন্য ব্যাংকগুলোর একটি কার্যকর ব্যাংক অ্যাসুরেন্স ব্যবসার পরিকল্পনাও থাকতে হবে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে একটি মডেলের মাধ্যমে ব্যবসা করতে হবে। তার জন্য ব্যাংকে আলাদা একটি বিভাগ খুলতে হবে, যার অধীনে ব্যাংক গ্রাহকরা বীমা পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। প্রতিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমতির রেজুলেশনের কপিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
ব্যাংক এবং বীমাকারীর মধ্যে স্বাক্ষরিত ব্যাংক অ্যাসুরেন্স এজেন্সি চুক্তির একটি অনুলিপি বীমা কোম্পানি ও ব্যাংকের আইনজীবী দ্বারা যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি পাওয়ার পর বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএতে কর্পোরেট এজেন্ট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। আইডিআরএ থেকে লাইসেন্স পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবে ব্যাংক।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কর্পোরেট এজেন্ট লাইসেন্স পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে আইডিআরএর সব প্রবিধান মেনে চলতে হবে। প্রধান ব্যাংক অ্যাসুরেন্স নির্বাহীকে কোনো স্বীকৃত বিশ^বিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হবে, যেটি বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা বিদেশের অধিভুক্ত বিশ^বিদ্যালয় স্বীকৃত। এছাড়াও প্রধান কর্মকর্তাকে ব্যাংকিং অথবা বীমা কোম্পানিতে কমপক্ষে ১২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
প্রধান ব্যাংক অ্যাসুরেন্স কর্মকর্তার পদমর্যাদা হবে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) নিচের পাঁচটি গ্রেডের মধ্যে। ওই কর্মকর্তাকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও সনদ থাকতে হবে।
Posted ৭:৩৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy