বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট | 552 বার পঠিত
জীবন বীমা কোম্পানির সম্পদ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ ও গ্রাহকের আমানত সুরক্ষিত রাখতে বিনিয়োগের ৯টি খাত নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) এ-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এর আওতায় জীবন বীমা কোম্পানিগুলো তাদের সম্পদের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে। আর ২০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এ প্রবিধানের মধ্য দিয়ে জীবন বীমা কোম্পানির বিনিয়োগযোগ্য অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পথ তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ ঘিরে চলমান অচলাবস্থারও অবসান হচ্ছে।
নতুন বিধিমালায়, জীবন বীমা কোম্পানির বিনিয়োগের জন্য ৯টি খাত নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকার নিষ্কণ্টক স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়, আবাসিক-দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য বন্ধক বা লিজ, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড মোট সম্পদের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে মোট সম্পদের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে।
জীবন বীমা কোম্পানিগুলো মোট সম্পদের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত তালিকাভুক্তি কোম্পানির সাধারণ বা প্রেফারেন্স উভয় প্রকারের শেয়ার কিনতে পারবে। তবে কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না। একইভাবে একটি কোম্পানির শেয়ার কিনতে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো মোট সম্পদের পাঁচ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে না। ঝুঁকি এড়াতে পুঁজিবাজারের ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারে বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
প্রবিধানে স্থাবর সম্পত্তি, লিজ-বন্ধকি সম্পত্তিতে বিনিয়োগের বিষয়টিও বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় দায়হীন-নিষ্কণ্টক সম্পত্তি কিনতে সম্পদের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে। এছাড়া আবাসিক বা দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য সম্পত্তি বন্ধক বা লিজ নিতে সম্পদের সাত শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে। তবে এ খাতে মোট সম্পদের ২০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
নতুন প্রবিধান কার্যকরের পর জীবন বীমা কোম্পানিগুলো মোট সম্পদের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত তফসিলি ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখতে পারবে। তবে একটি তফসিলি ব্যাংকে মোট সম্পদের ১০ শতাংশের বেশি রাখা যাবে না। সেই সঙ্গে ‘এ’ রেটিংয়ের নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট সম্পদের ১০ শতাংশ গচ্ছিত রাখতে পারবে। তবে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুই শতাংশের বেশি বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে না।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমতি নিয়ে শর্ত সাপেক্ষে সহযোগী বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতেও জীবন বীমা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানির সম্পদের ১০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। একইভাবে আরও পাঁচ শতাংশ অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে। এর বাইরে সরকারি অনুমোদন নিয়ে সিটি করপোরেশনের ইস্যু করা ডিবেঞ্চার বা অন্য সিকিউরিটিজে পাঁচ শতাংশ ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদিত ডিবেঞ্চারে ১০ শতাংশ সম্পদ বিনিয়োগ করতে পারবে কোম্পানিগুলো। আর সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ইস্যু করা বন্ড ও অন্যান্য বন্ডে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো সম্পদের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে।
দায়িত্বশীলদের মতে, সম্পদ বিনিয়োগের জন্য নতুন প্রবিধান প্রণয়নে সরকারি বন্ড-ডিবেঞ্চার-শেয়ারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অলাভজনক খাতের বলে লাভজনক খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হয়েছে। জীবন বীমা খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনার মাধ্যমে ওই প্রবিধান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে পুঁজিবাজারে বীমার বিনিয়োগ বাড়বে। একই সঙ্গে কম লাভজনক খাতে বিনিয়োগ কমায় বিনিয়োগের বিপরীতে আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই জীবন বীমা কোম্পানির বিনিয়োগযোগ্য অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সময়োপযোগী প্রবিধান ছিল না। নতুন প্রবিধানের পর জীবন বীমার বিনিয়োগ জটিলতা কমবে। এর আগে সাধারণ বীমার বিনিয়োগ প্রবিধান হয়েছে। যে কারণে উভয় শ্রেণির বীমা কোম্পানির সম্পদ বিনিয়োগে জটিলতা কাটল।’
তথ্যমতে, দেশে ব্যবসারত জীবন বীমা কোম্পানির সম্পদ বিনিয়োগ নিয়ে কয়েক বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে। সরকারি বন্ড-শেয়ার বা সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের নির্দেশনা অমান্য, অলাভজনক খাতে বিনিয়োগ ও কোম্পানিগুলো জমি-ভবন এবং ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রাখায় বেশি আগ্রহী হওয়ার কারণে বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেই সঙ্গে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের রিটার্নও উল্লেখযোগ্য হারে কম। সে কারণেই ২০১১ সালে এ বিষয়ে প্রবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় আইডিআরএ। ‘লাইফ বীমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ’ শীর্ষক ওই প্রবিধানের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সংশোধন-ভেটিংয়ে গিয়ে উদ্যোগটি থমকে যায়। ২০১৭ সালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুনর্গঠনের পর সেই খসড়া প্রবিধানমালা সময়োপযোগী করে প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার অংশ হিসেবেই অবশেষে জীবন বীমার বিনিয়োগ-সংক্রান্ত প্রবিধানও চূড়ান্ত হলো।
Posted ১২:২০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed