সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বোর্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মীর রাশেদ বিন আমান। জালিয়াতি তদন্তের পাশাপাশি কোম্পানির বোর্ডের কার্যক্রম স্থগিতের জন্য তিনি বিএসইসি বরাবর চিঠি দিয়েছেন।
বোর্ডের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির ২৪ টি অভিযোগ আনেন রাশেদ বিন আমান।
অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রমাণ গায়েব করার জন্য সোনালী লাইফের চেয়ারম্যানের দুর্নীতি তদন্তের জন্য একটি অডিট ফার্মকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। দুর্নীতির প্রমাণ গায়েব করার জন্য অডিট কার্যক্রম ২০ দিন স্থগিতের আবেদন করেন বলে অভিযোগ করেন আমান।
এসব বিষয়ে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতির পক্ষ থেকে রাশেদ বিন আমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চিঠির প্রদানের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমি এখনও কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীর দায়িত্বে রয়েছি।
চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের অন্যান্য পরিচালক এই অডিট কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য আমাকে (সিইও) অফিসে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না এবং আমার চেম্বারের লক পরিবর্তনসহ কোম্পানির ই-মেইল আইডি ও ইআরপি সফটওয়্যারের লগইন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যানের সই করা বিভিন্ন বিলের মাধ্যমে হিসাব বিভাগ থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান তার নিজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু করে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
অবৈধভাবে ও বিনিয়োগ না করে কোম্পানির শেয়ারের মালিক হওয়া, অবৈধ জায়গার ওপর রাজউকের অনুমোদন ছাড়া ভবন অধিক দামে বিক্রি করা, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অর্থে ব্যক্তিগত খরচ বহন করা, অতিরিক্ত অফিস ভাড়া প্রদান, ইম্পেরিয়াল ভবনের বিদ্যুৎ বিল প্রদানসহ ইম্পেরিয়াল ভবনের পানির বিল প্রদান সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত চেয়েছেন আমান।
তাছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠানো, পরিবারের সদস্যদের প্রতি মাসে বেতন প্রদান, পরিবারের সদস্যদের প্রিমিয়ামের টাকা সোনালী লাইফ থেকে প্রদান, ড্রাগন সোয়েটার কোম্পানির কর্মচারীদের বেতন সোনালী লাইফ থেকে প্রদান, গ্রুপ বীমা পলিসির টাকা আত্মসাৎ, ঘোষিত লভ্যাংশের বাইরে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ গ্রহণের বিষয়েও তদন্ত দাবি করেছেন এই সিইও।
এছাড়াও পরিচালকের ব্যক্তিগত খাবার গ্রহণ , মনোরঞ্জন , গাড়ি ক্রয়, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ বিল সোনালী লাইফ তহবিল হতে পরিশোধ করারটি বিষয়টি তদন্তের দাবি আমানের। ইম্পেরিয়াল জিমের এসি ক্রয় ও মাসিক জিম বিল প্রদান, পরিচালক হিসেবে অবৈধ কমিশন গ্রহণ, ইম্পেরিয়াল হোটেল বিলের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ, ইম্পেরিয়াল ভবনের লিফট রক্ষণাবেক্ষণ বিল প্রদানের ঘটনা তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই সিইও। গ্রাহকের জমানো অর্থ থেকে পরিচালকের বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডের মাসিক বেতন প্রদান, ভবন ক্রয়ের জন্য ডিপোজিটের (এফডিআর) বিপরীতে লোন (এসওডি) করে ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা সুদ প্রদান, সোনালী লাইফের পরিশোধ করা বিদ্যুৎ ও পানির বিলের টাকা ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে গ্রহণ এবং পরিচালক না থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে টাকা আত্মসাৎ করাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রমের তদন্ত জরুরি বলে মনে করে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদ বিন আমান।
কোম্পানির সিইও মীর রাশেদ বিন আমান উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা এমন একটি সময় ঘটেছে যখন আমি সোনালী লাইফের ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারহোল্ডার, পরিচালক বা চেয়ারম্যান ছিলাম না।
গত ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ এ আমি কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হই। পূর্বে আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। সোনালী লাইফের অফিস হিসেবে পরিচিত ১৫ তলা ভবনের মালিক আমি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কোম্পানির একজন পরিচালক হয়েছি।
তিনি আরো বলেন, ২০২৩ সালে কোম্পানির কার্যক্রমে অসংগতি লক্ষ্য করে তিনি অংশীদার এবং গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছিলেন। এই তদন্তে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ একটি গোষ্ঠীর স্বার্থের কথা উন্মোচিত হয়; যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জালিয়াতি এবং জালিয়াতিপূর্ণ ডকুমেন্ট তৈরিতে জড়িতদের পদত্যাগ করতে হয়।
গোলাম কুদ্দুস জোর দিয়ে বলেন, সিইওর উত্থাপিত অভিযোগগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করার একটি পায়তারা। এই ধরনের কার্যকলাপ যদি রোধ করা না হয়, তাহলে কোম্পানির সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করার এবং এর অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।