বুধবার ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনতা ইন্স্যুরেন্স

হারাচ্ছে মার্কেট, গোপন রেখেছে দাবির ওপর পুন:বীমা অর্থ

গোলাম ফারুক ও আদম মালেক   |   মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১   |   প্রিন্ট   |   431 বার পঠিত

হারাচ্ছে মার্কেট, গোপন রেখেছে দাবির ওপর পুন:বীমা অর্থ

ক্রমেই মার্কেট হারাচ্ছে। ব্যবসা প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে অর্ধেকে। প্রাইভেট সেক্টর থেকে আয় হলেও পাবলিক সেক্টরে আয় শূন্য। দীর্ঘদিন ধরে আদায় হচ্ছে না বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা। অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ব্যবস্থাপনা ব্যয়। রয়েছে বিভিন্ন তথ্যের কারসাজি। গোপন করেছে মোট দাবির ওপর পুন:বীমার অর্থ। জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণে এসব অনিয়ম অসঙ্গতির তথ্য পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, প্রথম প্রজন্মের বীমা কোম্পানি হিসেবে অগ্রসর হতে পারেনি জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। পরিচালকদের অনিয়ম দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। তলানিতে নেমেছে প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট শেয়ার। বীমায় শ্রেণীভিত্তিক হিস্যায়ও বড় অসংগতি। একটি শ্রেণিতে বীমা বাড়লেও অদক্ষতার কারণে ১টি শ্রেণিতে স্থবির অন্য শ্রেণিগুলোতে কমে গেছে।

বিনিয়োগকারীদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে সারাদেশে সাধারণ বীমা ব্যবসা ছিল ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে এ ব্যবসা বেড়ে ৩ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ১১ বছরে সাধারণ বীমায় সকল কোম্পানির আয় বেড়েছে ২৩০ শতাংশ। অথচ জনতা ইন্স্যুরেন্সের বেড়েছে ১২৩ শতাংশ। সব কোম্পানির বাৎসরিক আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৬ শতাংশ কিন্তু জনতা ইন্স্যুরেন্সের প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০০৮ সালে জনতা ইন্স্যুরেন্সর মার্কেট শেয়ার ছিল ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ শেয়ারের পরিমাণ বাড়েনি বরং শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫ সালে কোম্পানিীটর পুন:বীমার পরিমাণ ছিল ৪৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। পরের বছর থেকে এ পুন:বীমার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে ২০১৮ সালে ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু ২০১৯ সালে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়ে ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পুন:বীমা বৃদ্ধির এ ব্যবধানকে স্বাভাবিক মনে করছেন না বিনিয়োগকারীরা। তারা মনে করেন, পুন:বীমার পরিমাণ বেশি দেখিয়ে কোম্পানির অর্থ হাতিয়ে নিতেই এ পথে হেঁটেছে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া ২০১৮ সালে মোট দাবির পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এ দাবির ওপর পুন:বীমাকৃত পাওনা হিসেবে কত টাকা পাওয়া গেছে তা গোপন করা হয়েছে। এতে প্রশ্নবিদ্ধ জনতা ইন্স্যুরেন্সের বার্ষিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা। বিনিয়োগকারীদের মাঝে সন্দেহ দেখা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের সততা নিয়ে।

জনতা ইন্স্যুরেন্স বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সাধারণ বীমা করপোরেশনের কাছে দীর্ঘ দিন যাবত আটকে আছে ৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ বিপুল অঙ্কের অর্থ জনতা ইন্স্যুরেন্স সাধারণ বীমার কাছ থেকে আদায় না করতে পারায় হতাশ বিনিয়োগকারীরা। জনতা ইন্স্যুরেন্স ও সাধারণ বীমার শীর্ষ ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার কারণে এ টাকা সাধারণ বীমা থেকে আদায় হচ্ছে না বলে বিনিয়োগকারীদের সন্দেহ।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কোম্পানিটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইডআরএ) নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয় সীমা সংরক্ষণ করতে পারেনি। ২০১৮ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয় ছিল ৬ কোটি ৪৫ লাক টাকা। ২০১৯ সাল তা ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বেড়ে ৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ১ বছরে বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। এ বর্ধিত ব্যয় ২০১৯ সালের গ্রস প্রিমিয়ামের ২৭ শতাংশ। এজেন্সি কমিশনের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটি আইডআরএ’র সীমা লঙ্ঘন করেছে। ২০১৮ সালে এজেন্সি কমিশন ছিল ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা যা নিট প্রিমিয়ামের ১৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। পরের বছর এজেন্সি কমিশন ছিল ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা যা নিট প্রিমিয়ামের ২২ দশমিক ১৮ শতাংশ। এজেন্সি কমিশনের এ উর্ধ্বগতিকে মেনে নিতে পারছে না অনেকে।

প্রতিবেদনটি আরও জানান দেয়, কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা কারণে প্রাইভেট সেক্টর থেকে ব্যবসা আসলেও পাবলিক সেক্টরে কোনো ব্যবসা হয়নি। এ সময় অনেক কোম্পানি পাবলিক সেক্টরে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ব্যবসা করলেও জনতা ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসা শূন্য। তাদের অদূরদর্শীতার জন্যই ২০১৯ সালে গ্রস প্রিমিয়াম আয় ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা কমে ৩৩ কোটি ৭ লাখ টাকা হয়েছে। এ সময় গ্র্রস প্রিমিয়াম আয় কমেছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। সাধারণ বীমার শ্রেণিভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, গেল বছরের তুলনায় শুধু মটর বীমা বেড়েছে। নৌ বীমা অনেক কমেছে। স্থবির অগ্নি বীমা। অন্যান্য বীমায়ও তেমন পরিবর্তন নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বশির আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, আমি কী বলবো। আমি কিচ্ছু জানি না। চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসারের (সিএফও) সাথে যোগাযোগ করেন। সিএফও’র সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে জনতা ইন্স্যুরেন্স থেকে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি।

 

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।