বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ২০ জুলাই ২০১৯ | প্রিন্ট | 588 বার পঠিত
বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে কঠোর অবস্থানে সরকার। এর অংশ হিসেবে এবার ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়নকারী ব্যাংকের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়নকারী ব্যাংকের তালিকা সরবরাহের অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব ব্যাংক ঋণের ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়ন করেছে, তারাই শুধু সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিবি) বরাদ্দ রাখা তহবিল পাবে।
জানা গেছে, সরকারি তহবিলের এই অর্থ আমানত হিসেবে রাখার সুবিধা দিতে এ তালিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ যেসব ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে, তারা এ সুবিধা পাবে না।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নকারী ব্যাংকগুলোকে সরকারি তহবিলের সুবিধা দেওয়া হবে। কোন কোন ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়ন করেছে সেই তালিকা সংগ্রহ করছে সরকার। যারা ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের এ সুবিধা দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, গত মে মাসে দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১৪টি ব্যাংক ঋণের ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে সরকারি খাতের ব্যাংক রয়েছে আটটি। অন্যদিকে বেসরকারি ও বিদেশি মিলে অন্তত ৪২টি ব্যাংকের সুদহার এখনো দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে। বর্তমানে অনেক ব্যাংকই শিল্পঋণে ১২ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদারোপ করছে। এ অবস্থায় দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে আগামীকাল রবিবার বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামীকাল বিকেল ৩টায় এই বৈঠক হবে। বৈঠকে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা রক্ষায় শীর্ষ গ্রহীতাদের নিয়মিত তদারকির পাশাপাশি ঋণ আদায় জোরদারে ব্যাংকের এমডিদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ ও তা কমিয়ে আনার কৌশল নিয়েও আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠকে খেলাপি ঋণ, ঋণ ও আমানতের সুদহার, এসএমই ঋণ, নতুন মুদ্রানীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।’ অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে শিগগিরই তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’
গত মে মাসে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে—আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ও সীমান্ত ব্যাংক। অন্যদিকে গত বছর থেকে ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়ন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত খাতের আটটি ব্যাংক। এগুলো হলো—সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এ ছাড়া বিদেশি খাতের কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন করেছে।
ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে গত বছর সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে। এ সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত সরকারি আমানতের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যেত। সরকারি আমানতের এই সুবিধা দেওয়ার পরও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে না আনায় গত ২০ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সরকারি আমানত পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন শর্তারোপ করে একটি সার্কুলার জারি করে। এতে বলা হয়, যেসব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে শুধু তারাই এই আমানত পাবে। যারা ঋণের সুদের হার ওই সময়ের মধ্যে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে তারা এই আমানত পাবে না। ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত বছর বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা সরকারি আমানতের পাশাপাশি আরো কিছু সুবিধা আদায় করে। কিন্তু গত এক বছরেও বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন করেনি।
Posted ১:০৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২০ জুলাই ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed