
নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 490 বার পঠিত
উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদান। গত ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে আগামী ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
বিআইএ সূত্র জানায়, ২০২৫-২০২৬ সালের নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে গতকাল (১৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৩০ জন ভোটার। এরমধ্যে ১৪ জানুয়ারি প্রথম দিনেই সংগ্রহ করেন ১৫ জন। আর গত পাঁচ দিনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১৫ জন ভোটার। এদের মধ্যে রয়েছেন ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাজীম উদ্দিন, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়া, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এ এন এম ফজলুল করিম মুন্সি, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো. মফিজুর রহমান, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ কে এম সরোয়ার জাহান জামিল, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম ইউসুফ আলী, ইসলামি কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোকাররম দস্তগীর, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান তারেক, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন সরকার, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক তায়েফ বিন ইউসুফ, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জালালুল আজিম, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. জিয়াউল হক এবং এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্সু্যুরেন্সের পরিচালক আরিফ সিকদার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও দীর্ঘদিন পরে বিআইএ’র এবারের নির্বাচন হবে স্বঃতস্ফূর্ত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক। নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে যে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন। কোন বাধা থাকবে না। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে দেশের অন্যান্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো বিআইএ’তেও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে বলে মনে করেন অংশীজনরা।
তাদের প্রত্যাশা, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বিআইএ’র এবারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও বৈষম্যহীন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে এবং এর মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে। যারা দেশের অর্থনীতির কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।
জানতে চাইলে বিআইএ’র নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জালালুল আজীম ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে বলেন, আমরা চাই বিআইএ এমন একটি সংগঠন হবে; যে সংগঠন বীমা খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। এটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি শিল্প, এই সম্ভাবনা পুরোভাগে কাজে লাগাতে হবে।
নতুন নেতৃত্বের অন্যতম অগ্রাধিকার হবে নেতিবাচক ধারণা দূর করে বীমার প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে ভূমিকা রাখা। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে একই ধরণের অভিমত ব্যক্ত করেছেন চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে বীমায় আস্থা ফেরাতে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখা; বীমাকে এগিয়ে নিতে খাত সংম্লিষ্ট দক্ষ জনবল সৃষ্টি ও গবেষণায় ভূমিকা রাখা বিআইএ’র নতুন নেতৃত্বের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা উচিত হবে বলে মনে করি।
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান তারেক বলেন, আগামী দিনে বিআইএকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে হবে। দীর্ঘ ১৫ বছর এটি কিছু লোকের হাতে ছিল। আশা করছি এবার একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে এবং বিআইএ একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়া, সমন্বিত প্রচেষ্টায় বীমা খাতকে আরো এগিয়ে নিতে বিআইএ’র আগামী নেতৃত্ব ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি।
সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী বলেন, বিআইএ অতীতের ভীতিকর পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আগামী দিনের নেতৃত্ব এ খাতের উন্নয়নে ও প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা বন্ধ করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি। পাশাপাশি ঐক্য ও সম্প্রীতি আরো দৃঢ় হবে বলে বিশ্বাস করি।
স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন সরকার বলেন, নন-লাইফ বীমা খাতের একমাত্র সমস্যা অবৈধ কমিশনের মাধ্যমে ব্যবসা। এটি বন্ধ হলে এই খাতের অন্য সব সমস্যা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই সমাধান হয়ে যাবে। আশা করছি আগামী দিনের বিআইএ এই কমিশন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্সু্যুরেন্সের পরিচা
লক আরিফ শিকদার বলেন, আমরা চাই বিআইএ’র আগামী দিনের নেতৃত্বে এই শিল্পে আস্থা ফিরিয়ে আনা ও ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, বিগত ১৫ বছরে অনেকে বিআইএ’র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস করতেন না। আশা করছি এবার স্বতঃফূর্ত ও আনন্দঘন পরিবেশে ভোট হবে। আমরা বীমার ইতিবাচক ইমেজ সৃষ্টিতে কাজ করব। ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাজীম উদ্দিন বলেন, আইডিআরএ, ইন্স্যুরেন্স ফোরাম, বিআইএ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বীমা শিল্পকে এগিয়ে নেবে বলে প্রত্যাশা করছি। বাংলাদেশের জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান খুবই কম, যা বাড়াতে বিআইএ’র আগামী দিনের নেতৃত্ব আরো সচেষ্ট হবে বলে বিশ্বাস করি।
এর আগে গত সপ্তাহে বেঙ্গল ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান আমিন হেলালী, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক আদিবা রহমান, প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান বজলুর রশীদ, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মুজিবুল ইসলাম, জেনিথ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান কাজী শাখাওয়াত হোসেইন লিন্টু, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইমাম শাহীন, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ সাইফুদ্দীন চৌধুরী, সিটি ইন্স্যুরেন্স পিএলসির চেয়ারম্যান হোসেইন আখতার, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান কে এম আলমগীর, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের এক্সিকিউটিভ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন জামাল, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা চৌধুরী, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাঈয়্যেদ আহমেদ, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেইন বিআইএ’র নির্বাচনে প্রাথী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
বিআইএ সূত্র জানায়, এ বছর সংগঠনটির ৮০ জন সদস্যের মধ্যে ৭৬ জন ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। চাঁদা পরিশোধ সাপেক্ষে প্রতিটি বীমা কোম্পানি থেকে একজন করে ভোটার হয়েছেন। চারটি বীমা কোম্পানি থেকে কেউ ভোটার হননি।
গত ৭ নভেম্বর বিআইএ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচনী বোর্ড। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২২ জানুয়ারি বিকেল ৩ টায় মনোনয়নপত্র বাছাই এবং এদিন বিকেল ৫ টায় বৈধ মনোনয়নপত্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে। বৈধ মনোনয়নপত্রের ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি থাকলে ২৩ জানুয়ারি দুপুর একটার মধ্যে আপীল বোর্ডে আপত্তি জানাতে হবে। ৩০ জানুয়ারি শুনানি করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে বিকেল ৫ টার মধ্যে চূড়ান্ত বৈধ মনোনয়নপত্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩ টার মধ্যে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা এবং এ দিনে বিকেল ৪ টার মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ করা হবে। এ দিনেই ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩ টা পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২ টায় অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ দিন বিকেল ৪ টায় প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
গত ২৮ অক্টোবর সংগঠনটির ২১৮তম নির্বাহী কমিটির সভায় নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড এবং নির্বাচনী আপীল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশের পরিচালক এবং এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন এবং সদস্যরা হলেন এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেস কোম্পানির চেয়ারম্যান ও আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি আফতাব উল ইসলাম এবং কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বিআইএ’র সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান এ কে এম আজিজুর রহমান। সদস্যরা হলেন সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শফিক শামিম এবং আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহ সগিরুল ইসলাম।
Posted ৯:৩৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
bankbimaarthonity.com | rina sristy