বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট | 488 বার পঠিত
আইন লঙ্ঘন করে বাকিতে পলিসি ইস্যু করে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স। এ রকম ১৮টি অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সকে ৬৯ লাখ টাকা জরিমানা করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। ঘটনা ২০১৫ সালের। অনিয়মের জন্য করা আইডিআরএ’র আগের কমিটির ধার্য করা মোট জরিমানার মধ্যে ৪৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা মওকুফ করে দিয়েছে সংস্থাটির বর্তমান কমিটি। এ জরিমানা মওকুফের ক্ষেত্রেও করা হয়েছে অনিয়ম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জনা গেছে, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের খুলনা, নিউমার্কেট ও কারওয়ান বাজার শাখা ২০১৫ সালে পরিদর্শন করে আইডিআরএ। পরিদর্শন প্রতিবেদনে ‘বাকি ব্যবসার’ অভিযোগ তোলা হয়। পরে এর ওপর ২০১৫ সালের ১৪ জুন শুনানি করে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। শুনানিতে বাকিতে ব্যবসা প্রমাণিত হওয়ায় কোম্পানি, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও শাখা ব্যবস্থাপককে মোট ৬৯ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
এ জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সকে তিন দফায় চিঠি দেয় আইডিআরএ। এর মধ্যে প্রথম চিঠি দেয় ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর। এরপর ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জরিমানা মওকুফের জন্য আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করে কোম্পানিটি।
তবে জরিমানা মওকুফ করা সম্ভব না জানিয়ে ওই আবেদন নাকচ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একই সঙ্গে বিধি মোতাবেক ফি দিয়ে জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয় ২০১৬ সালের ১৩ জুন।
তবে আইডিআরএ’র ওই পরামর্শ ও নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কা না করে নিশ্চুপ থাকে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স। ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি কোম্পানিটিকে চিঠি দিয়ে আবারও জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দেয় আইডিআরএ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ তাগাদাপত্র দেয়া হলে ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রিভিউয়ের জন্য আবেদন করে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স। অথচ আইন অনুসারে আইডিআরএ’র আদেশের ৪৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করতে হয়। অর্থাৎ ২০১৬ সালের ১৩ জুনের পর ৪৫ দিন পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিটির জরিমানা রিভিউ করার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, জরিমানা পরিশোধের সর্বশেষ নির্দেশ দেয়ার প্রায় দুই বছর পর জরিমানা মওকুফের রিভিউ আবেদন করে কোম্পানিটি। যদিও জরিমানা মওকুফে দুই বছর আগেই নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে রিভিউ করার পরামর্শ দিয়েছিল আইডিআরএ’র সাবেক কমিটি।
তবে সেই পরামর্শ আমলে নেয়নি ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স। আবার জরিমানাও পরিশোধ করেনি। এমনকি ওই দুই বছরে জরিমানার নির্দেশের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। অদৃশ্য কারণে আইডিআরএ থেকে জরিমানা পরিশোধে কোনো তাগাদাপত্র দেয়া হয়নি। অথচ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে বীমা আইনে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রিভিউ আবেদনে ১৮টি পৃথক আদেশের প্রতিটির জন্য এক হাজার টাকা করে ১৮ হাজার টাকা ফি পরিশোধ করা হয়। কিন্তু রিভিউ করতে কেন দেরি হলো, তার কোনো কারণই রিভিউ আবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। অথচ উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে রিভিউ আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে উল্লেখ রয়েছে আইনে। এরপরও আইডিআরএ বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা রিভিউ আবেদনটি বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেন।
অন্যদিকে কোরাম সংকটের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তার আইনগত বৈধতা থাকে কি-না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের জরিমানা মওকুফ করা সংক্রান্ত রিভিউ শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন মাত্র তিনজন। এর মধ্যে শুনানি সভায় সভাপতিত্ব করেন আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ। এছাড়া উপস্থিত ছিল সংস্থাটির আরেক সদস্য মোশাররফ হোসেন ও পরিচালক রেজাউল করিম।
আইন অনুসারে দুজন সদস্যের উপস্থিতিতে কোনো শুনানির কোরাম পূর্ণ হয় না। অথচ এ সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ৬৯ লাখ টাকার জরিমানা থেকে ৪৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা মওকুফ করা হয়। বাকি ২৫ লাখ টাকার জরিমানা বহাল রাখা হয়। কোরাম পূর্ণ হওয়ার জন্য কমপক্ষে আইডিআরএ’র তিন সদস্য উপস্থিত থাকার কথা।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের নিউমার্কেট শাখায় বাকিতে ব্যবসার জন্য প্রথম দফায় কোম্পানিকে ২০ লাখ, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঁচ লাখ এবং শাখা ব্যবস্থাপককে পাঁচ লাখ করে মোট ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে পরবর্তীতে জরিমানা ৩০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে আইডিআরএ।
একই কারণে কারওয়ান বাজার শাখায় বাকিতে ব্যবসার কারণে কোম্পানিকে ১৬ লাখ টাকা, মুখ্য নির্বাহীকে চার লাখ এবং শাখা ব্যবস্থাপককে চার লাখ করে মোট ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করে আইডিআরএ। কিন্তু তা কমিয়ে পরবর্তীতে ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া খুলনা শাখায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি, মে, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বাকিতে ব্যবসার অভিযোগে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং শাখা ব্যবস্থাপককে এক লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। পরবর্তীতে মওকুফ করে জরিমানার পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করে আইডিআরএ।
জরিমানা মওকুফের বিষয়ে বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, তিন বছর পর জরিমানা মওকুফের বিষয়টি অস্বাভাবিক। একই সঙ্গে অনিয়মের জন্য করা জরিমানা মওকুফ করা হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো খাতটিতে। একই সঙ্গে বাড়বে অনিয়ম করে পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা।
এ বিষয়ে আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ‘ব্যস্ততা দেখিয়ে’ তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
Posted ১১:১১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed