নিজস্ব প্রতিবেদক: | মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০ | প্রিন্ট | 420 বার পঠিত
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি খাতের দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা ঘোষণা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এই সহায়তার আওতায় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে বাংলাদেশও। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এডিবির কাছে আরও অর্থ সহায়তার অনুরোধ জানানো হওয়ায় বাংলাদেশকে আরও ৬০.২ কোটি ডলার (প্রায় ৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা) অর্থসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এডিবি।
সোমবার (২০ এপ্রিল) করোনা পরিস্থিতি ও সহযোগিতা প্রসঙ্গে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়ার সঙ্গে এক ভিডিও কলে আলাপচারিতা শেষে এসব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্যখাতের জরুরি সেবা ও বাজেট সাপোর্টের জন্য বাংলাদেশকে ৬০.২ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এডিবি। এ জন্য এডিবিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় এখন একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে আজ মানব জাতির জীবন ও অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। গোটা বিশ্ব প্রকট অর্থনৈতিক মন্দার মুখে। এ মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা জানিনা যে, এই সঙ্কট কতদিন থাকবে এবং তা আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবুও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
করোনা ভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এডিবির ভূমিকার প্রশংসা করেন অর্থমন্ত্রী। এডিবির প্রেসিডেন্টের গতিশীল নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশগুলো করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মুস্তফা কামাল বলেন, করোনার প্রভাবে আমাদের আমদানি-রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বেশিরভাগ দেশে প্রবাসী ভাই-বোনেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্থবিরতা নেমে এসেছে রেমিটেন্স প্রবাহে। এই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই এডিবিকে অবিরাম সমর্থন ও সহায়তার জন্য অনুরোধ করছি। এই ক্রান্তিকালীন সময়ে এডিবির তৎক্ষণিক সহায়তাটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। যদিও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের প্রয়োজন এর চেয়ে আরও অনেক বেশি।
ভিডিও কলে অর্থমন্ত্রী ও এডিবি প্রেসিডেন্টের মধ্যে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা হয়। এসময় অর্থমন্ত্রী বলেন- কোথাও লকডাউন, কোথাও গণছুটি আবার কোথাও কারফিউ জারি করে মানুষকে ঘরবন্দি করা হয়েছে। বাংলাদেশে গত ২৫ মার্চ থেকে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি সেবা কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন দেশের সিংহভাগ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ছোটখাটো কারখানা বন্ধ। গণপরিবহন ও বিমান চলাচল স্থগিত। ইতোপূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান ও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের অর্থনৈতিক পদক্ষেপে প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ ও অর্থনীতির জন্য ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপি’র ৩.৩ শতাংশ। এই প্যাকেজের অর্থ ব্যয়ে জনসাধারণের ব্যয় বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা জালকে প্রশস্ত করা এবং আর্থিক সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, পরিষেবা খাত এবং কুটির শিল্পগুলোর সুরক্ষার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যনির্বাহী মূলধনের বিধান অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে এডিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, এই করোনা মহামারি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে। এতে করে এ অঞ্চলে দারিদ্র্য আরও বাড়তে পারে এবং দেখা দিতে পারে অর্থনৈতিক মন্দা। উন্নয়নশীল দেশ ও বিভিন্ন বেসরকারি খাতকে মহামারি মোকাবিলায় দ্রুত এডিবি ঘোষিত সহযোগিতা প্যাকেজ সরবরাহ করা হচ্ছে।
আলাপকালে বাংলাদেশে এডিবির চলমান ও পাইপলাইনে থাকা প্রকল্পগুলো নিয়েও আলোচনা করেন মাসাতাসুগু আসাকাওয়া। সেসব প্রকল্প দ্রুত সফলভাবে সমাপ্ত করার ব্যাপারে নানা পদক্ষেপ নিতেও পরামর্শ দেন।
এডিবির প্রায় ৮.৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তায় ৬৩টি প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে বাংলাদেশে। পাইপলাইনে আছে আরও প্রায় ৯.৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার ৮১টি প্রকল্প।
এডিবি বাংলাদেশকে এ যাবৎ প্রায় ২৫.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে। মূলত বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, জল সম্পদ ও বাংলাদেশের সুশাসন এবং আর্থিক বিভাগগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে এডিবি এ সহায়তা প্রদান করেছে।
Posted ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০
bankbimaarthonity.com | rina sristy