শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
জাতীয় সংসদে চলতি (২০১৯-২০)

অর্থমন্ত্রীর দেয়া যেসব প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ০৯ জুন ২০২০   |   প্রিন্ট   |   302 বার পঠিত

অর্থমন্ত্রীর দেয়া যেসব প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি

জাতীয় সংসদে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের জন্য গত বছরের ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জীবনের প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন। ওইদিন তিনি ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ স্লোগানে বাজেট দেয়ার পর বিভিন্ন সময় তিনি বলেছিলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট (২০২০-২১) দেয়ার সময় চলতি বাজেটের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন অগ্রগতিও তুলে ধরবেন।
দেখে নেয়া যাক বাজেট বক্তব্যের খসড়া অনুযায়ী চলতি বাজেটে দেয়া অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি-

প্রতিশ্রুতি : রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশে উন্নীতকরণ।

বাস্তবায়ন অগ্রগতি : ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ছিল ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে এটা উন্নীত করে ১৪ শতাংশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৭৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, অর্থবছর শেষ হতে আরও তিন মাস বাকি। তাই চলমান অর্থবছর শেষে রাজস্ব-ডিডিপি অনুপাত আশানুরূপ বৃদ্ধি পাবে।

তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেটা কোনোভাবেই ১৪ শতাংশে উন্নীত হওয়া সম্ভব নয়। এমনকি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বমোট রাজস্ব আহরিত হয় ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। তবে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে আহরণের যে গতি তাতে অর্থবছর শেষে সর্বমোট ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা আহরিত হতে পারে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কম। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম রাজস্ব আহরণ হবে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

প্রতিশ্রুতি : আয়কর প্রদানকারী নাগরিকের সংখ্যা দ্রুততম সময়ে এক কোটিতে উন্নীতকরণ।

বাস্তবায়ন অগ্রগতি : জরিপের মাধ্যমে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান। টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা বর্তমানে ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৭৬ জন। তবে রিটার্ন দাখিলকারী করদাতার সংখ্যা মাত্র ২৩ লাখ। এক্ষেত্রেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রতিশ্রুত : রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় শতভাগ অটোমেশন।

বাস্তবায়ন অগ্রগতি : এসজিএমপি প্রকল্পের আওতাধীন বিআইটিএএক্স সফটওয়্যার সিস্টেমের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ করবর্ষ থেকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে অনলাইনে আয়কর প্রদানের একটি ই-পেমেন্টে পোর্টাল রয়েছে যাতে বিভিন্ন ব্যাংকের পাশাপাশি মোবাইল লেনদেন সেবা বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে টাকা জমা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস এবং বন্ড সুবিধা অপব্যবহার রোধকল্পে বন্ড সিস্টেম অটোমেশন করার লক্ষ্যে ‘বন্ড ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয়করণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন নিশ্চিত হবে।

প্রতিশ্রুতি : শতভাগ স্ক্যানার মেশিনের মাধ্যমে স্ক্যানিং।

বাস্তবায়ন অগ্রগতি : ইতিপূর্বে দেশের সর্ববৃহৎ বন্দর অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরে ৫টি স্ক্যানার ছিল। এ অর্থবছরে ২টি নতুন স্ক্যানার ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া দেশের সকল বন্দরে শতভাগ স্ক্যানিং নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আরও ১৪টি স্ক্যানার ক্রয়ের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অচিরেই কার্যাদেশ প্রদান করা সম্ভব হবে।

প্রতিশ্রুতি : বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতির পরিমাণ যতটা সম্ভব পরিহার করা।

বাস্তবায়ন অগ্রগতি : গত (২০১৮-১৯) অর্থবছরে ৩৪ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কর অব্যাহতি প্রদান করে এসআরও জারি করা হয়। এর ফলে মোট কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ কোটি টাকা (সরকারি প্রকল্প ব্যতীত)। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে ১৮ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কর অব্যাহতি প্রদান করে এসআরও জারি করা হয়। এক্ষেত্রে মোট কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল প্রায় এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা (সরকারি প্রকল্প ব্যতীত)। এক্ষেত্রে গতবারের তুলনায় প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা কম কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

গত (২০১৮-১৯) অর্থবছরে আমদানি পর্যায়ে মোট কাস্টমস ডিউটি অব্যাহতির পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি অব্যাহতির পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) মার্চ পর্যন্ত আমদানি পর্যায়ে মোট কাস্টমস ডিউটি অব্যাহতির পরিমাণ ২৭ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৭ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা।

এছাড়া মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটে গত (২০১৮-১৯) অর্থবছরে অব্যাহতির পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে তা মাত্রা এক হাজার ১৮০ কোটি টাকা।

প্রতিশ্রুতি : ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়ন।

বাস্তবায়ন অগ্রগতি : ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়িত হয়েছে।

প্রতিশ্রুতি : ভ্যাট আহরণে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন স্থাপন।

বাস্তবায়ন অগ্রগতি : ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন এক হাজার ২০টি আমদানি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সকল সফটওয়্যার ইনস্টল, সার্ভার আমদানি, ডাটা সেন্টার স্থাপন করতে এনবিআরের কর্মকর্তা ও করদাতাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। পাইলটিংয়ের জন্য ১০০টি ইএফডি মেশিন প্রস্তুত রয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মূল শর্তই ছিল, ইএফডি মেশিন বসানো। সে হিসেবে গত বছরের জুলাই থেকেই এটি বসানোর কথা ছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রী গত ১ জানুয়ারি থেকে এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।’

প্রতিশ্রুতি : কাস্টমস আইন ১৯৬৯ সংশোধন করে প্রণয়ন।

বাস্তবায়ন অগ্রগতি : নতুন কাস্টমস আইন বিল আকারে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে পর্যালোচনা শেষে অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে উপস্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৬:২২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ জুন ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11389 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।