বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ০৫ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট | 786 বার পঠিত
‘হয়তো কিছুই নাহি পাবো, তবুও তোমায় আমি দূর হতে ভালোবেসে যাবো।’… গীতিকার গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার। আর এ গানে কণ্ঠ দিয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় উপমহাদেশে জীবন্ত
কিংবদন্তি হয়ে রইলেন।
কিংবদন্তি এ শিল্পীর ৯০তম জন্মদিন আজ। তিনি এ পর্যন্ত ১০ হাজার গান গেয়েছেন, সব গানই তাকে খ্যাতি দিয়েছে। সেই কবে ১৯৫৪ সালে অনুপম ঘটকের সুরে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিতে সন্ধ্যা গেয়েছিলেন—‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’। এ গান শুনলে বৃদ্ধরাও যৌবনে চলে যেতে যান। তার নামটিই যেন হৃদয়ে ঝঙ্কার তোলে। নামটির এমন মহিমা যে উচ্চারিত হলেই শ্রোতাদের মনের আকাশে এক লহমায় গানের ইন্দ্রধনু ফুটে ওঠে। যে কোনো লগ্নই হয়ে ওঠে গান শোনার। তার নাম শুনতেই কানের ভেতর নাকি মনে কিংবা মাথার ভেতর ভাঙতে থাকে গানের ঢেউ—‘মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা’, ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা’, ‘মধুমালতী ডাকে আয়’, ‘বকম বকম পায়রা’, ‘এ গানে প্রজাপতি’, ‘নতুন সূর্য আলো দাও’, ‘ওগো মোর গীতিময়’, ‘চন্দন পালঙ্কে শুয়ে’, ‘মধুর মধুর বংশী বাজে’, ‘কুহু কুহু কুহু ডাকে কোয়েলিয়া’, ‘নেবো না সোনার চাঁপা’, ‘সজনী ও সজনী’, ‘আমি প্রিয়া তুমি প্রিয়’, ‘ও ঝরা পাতা এখনি তুমি’, ‘তুমি না হয় রহিতে কাছে’, ‘বাঁশি বুঝি আর নাম জানে না’, ‘বধূয়া এলো না’, ‘চিনেছি তোমারে অচেনার মাঝে’, ‘তোমারে হারানো তো নয়’, ‘চৈতী ফুলের কী বাঁধিস রাঙা রাখী’, ‘পিয়া পিয়া পিয়া যে ডাকে আমায়’—এমনি অসংখ্য গান সঙ্গীত শ্রোতাদের মনে ছড়িয়ে দেয় স্মৃতিমেদুরতার কুয়াশা। বঙ্গ সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে আছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।সেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বয়স এখন ৮৯ বছর। এ বয়সে তার দুঃখ আছে। থাকবেই না কেন, তার গাওয়া হিট গান এ প্রজন্মের শিল্পীরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গেয়ে বেশ নামধাম কামাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মনে করেন, কিছু টিভি চ্যানেল ও গান ব্যবসায়ী এ জন্য মুনাফা লুটছে। একদিন যে শিল্পীর নিতান্ত দুরবস্থায় কেটেছে শেষ জীবন, তার গান গেয়েই আজকের শিল্পীদের কত নামডাক। ভীষণ রকমের অবিচার এসব। নতুন শ্রোতারা আসল শিল্পীর কৃতিত্ব জানতেই পারছে না।
১৯৪৪ সালে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সঙ্গীত জগতে আসেন। তার প্রথম রেকর্ডকৃত গান ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ এবং ‘তোমার আকাশে ঝিলিমিলি করে’। মাত্র ১২ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৪২ সালে তিনি রেডিওতে গান গাওয়া শুরু করেন। গানটি ছিল ‘যদি বা ফুরালো গান’। সিনেমায় প্রথম গান করেন ১৯৪৮ সালে ‘অঞ্জন গড়’ ছবিতে। সেই রাইচাঁদ বড়ালের যুগ থেকে এ যুগের সুমনের সুরে গানও করেছেন তিনি।
অতীতের সঙ্গে আজকের তুলনাও করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তার অভিমত, সেসব দিনে শিল্পীরা নিজেদের উজাড় করে দিতেন, আজও রয়ে গেছে সেসব গান। আজকাল তো রেডিমেড গানের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সুযোগই পাচ্ছে না শিল্পীরা। দুদিনেই লোকে ভুলে যাচ্ছে এসব গান। এসব দেখলে বড় কষ্ট হয়। অনুপম ঘটক, রবীন চট্টোপাধ্যায়ের মতো মিউজিক ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করা মানে প্রতিদিনই খানিকটা শেখা। আজকের শিল্পীরা সে সুযোগই পান না। এ নিয়ে আজকের শিল্পীরা আমার কাছেই আফসোস করেন। এক সময় মুম্বাইয়ের শিল্পীদের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছিলেন। এ বয়সে সেসব স্মৃতি এখনও সন্ধ্যার মনে নাড়া দেয়। মুম্বাইতে শচীন দেব বর্মণই তাকে ডেকে নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অনিল বিশ্বাসের সুরে লতার সঙ্গে গান করেছিলেন। সেই সূত্রে লতার সঙ্গে তার খুব ভাব হয়। গীতা দত্তের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হয়েছিল।সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে বলা হয় বাংলা গানের একটা পুরো অধ্যায়। বাংলাপ্রথম ‘প্রিমা ডোনা’ কানন দেবীর হাত থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন এই সন্ধ্যা। পরবর্তী চার দশকে (১৯৪৮ থেকে ১৯৮৮) সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা ছবির প্লেব্যাক সম্রাজ্ঞীর আসনে। পাশাপাশি আধুনিক বাংলা গানের ক্ষেতে ৬০ বছর ধরে সোনালি ফসল তুলে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে রইলেন তিনি। তিনি যা অর্জন করেছেন তা মহীরুহের মতোই। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মানেই হেমন্ত-সন্ধ্যা, অনুপম-সন্ধ্যা, রবীন-সন্ধ্যা, মানবেন্দ্র-সন্ধ্যা, মান্না-সন্ধ্যা, শ্যামল গুপ্ত-সন্ধ্যা, সুচিত্রা সন্ধ্যা—এমন বহু উজ্জ্বল অধ্যায় ভরে রেখেছে তার শিল্প জীবনে। এভাবেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় লিজেন্ড হয়ে আছেন, যা সঙ্গীত প্রেমিকদের যে অহঙ্কারী হওয়ার রসদ জোগায়।
Posted ৪:০৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৫ অক্টোবর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed