বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

জৈন্তিয়ার লাল শাপলার বিলে

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   313 বার পঠিত

জৈন্তিয়ার লাল শাপলার বিলে

পান-পানি, নারী। এই তিনে জৈন্তাপুরী। ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের গভীরতা বোঝাতে স্থানীয়ভাবে এই মিথ প্রচলিত। পান-সুপারিতে আতিথেয়তা সিলেটের সংস্কৃতিরই অংশ। স্বচ্ছ জলের সারি নদী কাছে টানে পর্যটকদের। আর পৌরানিক কাহিনী অনুসারে জৈন্তারাজ্য শাসন করেছেন খাসিয়া রানী জৈন্তেশ্বরী। এখানে সবই ছিল প্রমীলা (নারী) শাসিত। পরাক্রমশালী মোগল ও ইংরেজরা কখনো জৈন্তিয়া জয় করতে পারেননি। আজও সিলেট অঞ্চলে এ রাজ্য সম্পর্কে নানা গল্প শোনা যায়, যা রূপকথাকেও হার মানায়।

জৈন্তিয়া রাজা বিজয় সিংহের সমাধিস্থল লাল শাপলার বিলে। লাগোয়া ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ৪ নম্বর সাব সেক্টর মুক্তারপুর। কেবল সৌন্দর্য নয়, সিলেটের জৈন্তাপুরের লাল শাপলার বিল প্রাগৈতিহাসিক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

স্থানীয়দের মতে, জৈন্তা রাজ্যের রাজা রাম সিংহের মামা বিজয় সিংহকে এই হাওরে ডুবিয়ে মারা হয়েছিলো। সেই স্মৃতিতেই নির্মিত দুইশত বছরের পুরাতন একটি মন্দিরও রয়েছে সেখানে।

লাল শাপলা বিলের অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ের পাদদেশ। স্থানীয় ভাষায়-প্রাকৃতিকভাবেই চারটি বিল- ডিবি, ইয়াম, হরফকাট ও কেন্দ্রীবিলসহ ৯০০ একর বা ৩ দশমিক ৬৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়েই লাল শাপলার ‘রাজ্য’ গড়ে ওঠেছে। যেখানে প্রতিদিন ভিড় করেন পর্যটকরা।

বিলের পাশে বসে ফুটে থাকে অজস্র লাল শাপলার রূপে মজে থাকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আর নৌকা দিয়ে বিলের মাঝখানে গেলেতো কথাই নেই। লতা-পাতা-গুল্মে ভরা বিলের পানিতে ভেসে থাকা লাখ লাখ লাল শাপলার মাঝে আপনার অবস্থান। প্রকৃতির আপন খেয়ালে গড়ে উঠা সৌন্দর্য বুঝি এমনই হয়।

লেখক ও পরিবেশ কর্মী আব্দুল হাই আল হাদি বাংলানিউজকে বলেন, লাল শাপলার বিল কেবল সৌন্দর্যের পরিচয়ই বহন করে না, জৈন্তিয়ার ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পৌরানিক আমলে নারী শাসিত রাজ্য ছিল জৈন্তাপুর। সৌন্দর্যের সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সম্মিলন এ বিলের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। লাল শাপলার বিলে আসা পর্যটকরা ঐতিহ্যের সঙ্গেও পরিচিত হতে পারছেন। বিষয়টি সত্যি আনন্দের।

তিনি আরও বলেন, লাল শাপলার বিল সংরক্ষণে উপজেলা প্রশাসন কমিটি করে দিয়েছে। পর্যটন করপোরেশনেরও উচিত এ জায়গার প্রতি নজর দেওয়া।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেটের জৈন্তাপুর হয়ে জাফলং ঘুরতে যাওয়ার সময় পর্যটকরা লাল শাপলার বিলে ঢুঁ মেরে যান। অনেকে কেবল লাল শাপলার বিলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। দিন কাটিয়ে দেন এখানেই। প্রতিবছর অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে এই হাওরে। তন্মধ্যে- বালিহাঁস, পাতিসরালি, পানকৌড়ি, সাদাবক দেখতে পাওয়া যায়।

পৌরানিক জৈন্তিয়ার বর্তমান নাম জৈন্তাপুরকে গোয়াইনঘাট উপজেলা থেকে আলাদা করেছে তামাবিল সংলগ্ন নলজুড়ি নামক খাল। এর আগেই জৈন্তাপুর ডিবির হাওরসহ ৪টি হাওরে গড়ে উঠেছে শাপলার রাজ্য।

কীভাবে যাবেন
সিলেট থেকে সিলেট-তামাবিল সড়কপথে বাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে নিয়ে যেতে পারবেন। জৈন্তাপুর উপজেলা সদর ছেড়ে তামাবিল স্থল বন্দরে যাওয়ার আগেই সড়কের ডান পাশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিবির হাওর বিশেষ ক্যাম্প দেখা যাবে। ক্যাম্পের পাশ দিয়ে কাঁচা রাস্তায় প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার পথ পেরোলেই চোখে পড়বে শাপলা বিল। নৌকায় লাল শাপলার বিল ঘুরতে ভাড়া নেবে ৩০০ টাকা। আর লাল শাপলার বিলে ঘুরে আসার সময় এখনই।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৪:২১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।