এস জেড ইসলাম | বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১ | প্রিন্ট | 650 বার পঠিত
দেশে প্রচলিত আইনকানুনের প্রতি বীমা কোম্পানিগুলো শ্রদ্ধাশীল নয় এমন অভিযোগ বহু পুরোনো হলেও শ্রম আইন লঙ্ঘনের ফলে বিষয়গুলো নতুন করে আবার সামনে এসেছে। সম্প্রতি এ নিয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র দৃষ্টি আকর্ষনও করেছে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টি কাউন্সিল (এফআরসি)। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে আইন পরিপালনে আইডিআরএ ব্যর্থ হলে এফআরসি নিয়মানুযায়ী পদক্ষেপ নিবে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এমনটা জানা গেছে।
জানা যায়, ‘জীবন বীমা কোম্পানিগুলো আর্থিক প্রতিবেদনে এফআরসি নির্ধারিত মানদণ্ডগুলো মানছে না’ এমনটা জানিয়ে গত মার্চ মাসের প্রথমদিকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয় এফআরসি। এফআরসি হলো মূলত: আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মানদন্ড নির্ধারণকারী সংস্থা। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন পর্যবেক্ষণ করা সংস্থাটির অন্যতম একটি প্রধান কাজ। এর ফলে কোম্পানির স্বচ্ছতা বজায় থাকে এবং গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত হতে পারে।
যাই হোক, আইডিআরএ’র কাছে পাঠানো চিঠিতে এফআরসি জানায় দেশের সকল জীবন বীমা কোম্পানি শ্রম আইন ২০০৬ এর ২৩৪ ধারানুযায়ী শ্রমিক অংশগ্রহন তহবিল এবং শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করছে না। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সাধারণ কর্মচারীদের স্বার্থ লঙ্ঘন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠছে না। মূলত সাধারণ কর্মচারীদের স্বল্প বেতন এবং তাদের পরিবার ও ভবিষ্যতের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এ ধারাটি তৈরী করা হয়েছে।
কোম্পানির মুনাফায় কর্মচারীদের অন্তর্ভূক্তির ফলে একদিকে যেমন শ্রমিকদের প্রতি কোম্পানি দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তেমনি প্রতিষ্ঠানের প্রতিও তাদের দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পায়। আইন অনুসারে উক্ত তহবিলগুলোতে কোম্পানির বার্ষিক নিট মুনাফার পাঁচ শতাংশ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠার এক দশক পরও কোম্পানিগুলোকে আইন মানতে বাধ্য করতে না পারায় আইডিআরএ’র সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
এদিকে শ্রম আইন পরিপালন না করায় কয়েকটি বীমা কোম্পানির সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান বীমা কোম্পানিতে কর্মরতরা শ্রম আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ি শ্রমিক ক্যাটাগরিতে পড়েনা। তাই তাদের এ আইন পরিপালনে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এছাড়া কয়েকজন আবার বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেনের নির্দেশনাও এক্ষেত্রে তুলে ধরে শ্রম আইন পরিপালনে অনীহার কথা তুলে ধরেন।
এ বিষয়ে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের সিইও জামিলুর রহমান বলেন, শ্রম আইনে শ্রমিক বলতে তাদের বলা হয়েছে যারা শ্রম দিয়ে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় জড়িত তারা। কিন্তু বীমা কোম্পানিতে এমন কোন বিষয় নেই। তাই এটা আমাদের ক্ষেত্রে যায় না। কিন্তু সংশোধিত শ্রম আইন ২০১৩ এর ২ ধারার ৬১(থ) দফায় বীমা কোম্পানি উল্লেখ রয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা আইডিআরএ থেকে এখনো কোন নির্দেশনা পাইনি।’
আবার ইউনাইটেই ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব ইমরান হাসান বলেন, শ্রম আইন আমাদের জন্য নয়। এটা এখনই পালন না করতে অ্যাসোসিয়েশনের (বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন-বিআইএ) চেয়ারম্যানের মৌখিক নির্দেশনা আছে। তাছাড়া ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ এটা পালন করছে না। দেশের একটি আইনকে একটি সংগঠনের চেয়ারম্যানের মুখের কথায় কি বন্ধ করে দেয়া যায়? এমন প্রশ্নে অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু শ্রম আইন পরিপালন না করলে কোম্পানি যে জরিমানার মুখে পড়বে এবং এতে গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের যে স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে এটা কি শেখ কবির হোসেন বহন করবেন কিনা? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
জীবন বীমা কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এস এম জিয়াউল হক বলেন এখন পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রির কেউ এটা পরিপালন করছে না। আইডিআরএ’র নির্দেশনা পেলেই আমরা এটা পরিপালন করা শুরু করবো।
এদিকে শ্রম আইন পরিপালন না করতে নির্দেশনা দেয়ার বিষয়ে বিআইএ প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেনÑ ‘অনেক দিন আগে মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলাম যে, বীমা কোম্পানিগুলোকে শ্রম আইনের এ বিধান থেকে অব্যহতি দেয়া হোক। কিন্তু তারা এখনো কোন জবাব দেয়নি।’ জবাব দেয়নি বলেই কি আপনি শ্রম আইন পালন না করার নির্দেশনা দিয়েছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন ‘আসলে বিষয়টি তা নয়, ব্যাংক যেহেতু এ আইন থেকে অব্যহতি পেয়েছে তাই ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বীমার ক্ষেত্রেও অব্যহতি পাওয়া উচিত।’
Posted ১২:২০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy