সালাউদ্দিন রাজীব | সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১ | প্রিন্ট | 770 বার পঠিত
ব্যবসায়িক অগ্রগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফুলে ফেঁপে উঠছে সম্পদ ও সঞ্চয় তহবিল। কিন্তু ব্যবসায়িক এমন সাফল্যের পরও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথাযথ প্রাপ্য দেয়া হচ্ছে না। বঞ্চিত করা হচ্ছে কর্মচারীদের কল্যাণে সরকারের নির্দেশিত শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল (ডব্লিউপিপিএফ) থেকে। ফলে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের প্রতিষ্ঠান ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারীরা।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সে নানা অনিয়মের পাশাপাশি শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিলে আইন অনুসারে বরাদ্দ না থাকায় শ্রম আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এমনকি এই তহবিল গঠন করেনি এবং এর ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো কমিটিও নেই। ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ কোম্পানির কর্মচারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা থেকে। অথচ প্রতিবছরই মুনাফায় প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। যাদের শ্রমে কোম্পানি এতো দূর এলো তাদের সমস্যা দেখার যেন কেউ নেই। এ নিয়ে কোম্পানির অনেক কর্মচারীই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া এই আইন লঙ্ঘনে প্রতিষ্ঠানটি বড় রকমের আর্থিক জরিমানার মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা।
ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের বার্ষিক প্রতিবেদনে আইনজীবীর বরাতে যে তথ্য উপস্থান করা হয়েছে তা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। প্রতিবেদনে বিশ্লেষণে দেখা যায়, শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন তো করেইনি, উল্টো বীমা প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা পালনের প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়েছে। যা সরাসরি আইনের লঙ্ঘন। কেননা শ্রম আইনের ২(৪১)(গ) ধারা অনুযায়ী বীমা কোম্পানি শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্ত। আবার ২০১৩ সালে শ্রম আইনের যে সংশোধনী হয়েছে সেখানে উপধারা ৬১(থ)-তে বীমা কোম্পানিকে বরং অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। আইনটি প্রণয়নের এক মাসের মধ্যে পরিপালনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছরেও তা করতে পারেনি ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরন্স কর্তৃপক্ষ। এমনকি শ্রম আইন পরিপালন না করায় আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-১৯ লঙ্ঘন হয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) থেকে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে চিঠি পাঠানো হলেও টনক নড়েনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার।
এ বিষয়ে বীমাখাতের কয়েকজন মুখ্য নির্বাহীর সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘শ্রম আইনের এই বিষয়টি বীমা কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাছাড়া এ বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছি।’ তবে শ্রম আইনে বীমা কোম্পানির স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও কোনোদিক থেকে বীমা কোম্পানি এই আইন পরিপালনের সাথে সম্পৃক্ততা নেই তা জানাতে পারেননি তারা। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেই আইন পরিপালন মওকুফ হয়ে যায় কিনা, এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি।
এদিকে শ্রম আইন লঙ্ঘন করায় উক্ত আইন অনুসারে প্রতিষ্ঠানটি শাস্তি ও আর্থিক জরিমানার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা। এতে তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি কোম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শ্রম আইনের ২৩৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালক, উহার ব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপনার কাজের সাথে জড়িত যে কেউ অথবা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বা সদস্য, ব্যবস্থাপনার নিয়োজিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে অনধিক এক লাখ টাকা এবং ব্যর্থতার প্রথম তারিখের পর হইতে প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করে ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানা পরিশোধের জন্য সরকার নির্দেশ প্রদান করতে পারে। পুনরায় কোনরূপ আইনের বিধান অথবা সরকারের আদেশ পালনে ব্যর্থ হলে তাহার বিরুদ্ধে দ্বিগুন জরিমানা আরোপিত হবে।’ এ হিসেবে ফান্ড ও ট্রাস্টি বোর্ড গঠন না করায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ১৫ বছরে ১৮ জন পরিচালককে (স্বতন্ত্র পরিচালকসহ) এককালীন ১৮ লাখ টাকা ও প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা হিসেবে এ পর্যন্ত কোম্পানির জরিমানার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৯১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এসব বিষয়ে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কুমার সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তবে তিনি বলেন, শ্রম আইনের বিষয়ে ব্যাংকে ছাড় দেয়া হয়েছে। তাই ইন্স্যুরেন্সও এই আইনটি থেকে অব্যাহতি পেতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে এগুলো পালন করা হবে বলে জানান এই প্রতিবেদককে।
অন্যদিকে কোম্পানির মুখ্য অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল হামিদ, এফসিএ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিভিন্ন ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নন জানিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত তথ্য জানার পরামর্শ দেন। অথবা কোম্পানি সচিবের সাথে যোগাযোগ করতে বলে কলটি কেটে দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানি সচিব আবদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘এসব প্রাইভেট কোম্পানির বিষয়ে আপনারা ভালো করেই জানেন। বোর্ডে যা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আমরা তা পরিপালন করি। এসব বিষয়ে বোর্ড ভালোভাবেই অবগত আছেন। আমি আসার আগে থেকেই এগুলো চলে আসছে। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
Posted ১২:২৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy