নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২ | প্রিন্ট | 181 বার পঠিত
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছে চট্টগ্রাম চেম্বার।
রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক বাজেট মতবিনিময় সভায় এ প্রস্তাব করেন চেম্বার নেতারা।
এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
করের বোঝা কমিয়ে আনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করের বোঝা কমিয়ে নিয়ে আসব। স্বচ্ছ কর আদায় প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে চাই। এজন্য কর পরিশোধ করার প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হবে।
‘এ ছাড়া কর আদায়ে অটোমেশন ব্যবস্থা যুক্ত করার কাজ চলছে। এটি করলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। দুই বছরে ধাপে ধাপে কর ও ভ্যাটের কোথায় কোথায় অন্তরায় সেগুলো শনাক্তের চেষ্টা করেছি। দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস, মাইন্ডসেট থেকে সরে আসতে একটু সময় লাগছে।’
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়ানো হবে জানিয়ে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিবন্ধিত হওয়ার পরেও অনেকেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না৷ আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম চেম্বারের সহযোগিতা চাই।
‘এ ছাড়া কর্পোরেট ট্যাক্সে আমরা একটা ভালো সংখ্যক কর্পোরেট বডি চিহ্নিত করেছি। যাদের ঠিকানা নেই, কোনো কার্যক্রম নেই৷ কিন্তু তারা এনলিস্টেড। তাদের করের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছি আমরা।’
প্রাক বাজেট আলোচনায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অনলাইন ব্যবসায়ীদের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনলাইন ব্যবসা মাত্র বিকশিত হচ্ছে। তাদের ওপর কর আরোপ না করারও অনুরোধ রয়েছে। তাদের কঠিন হাতে ধরা যাবে না। এ খাতে নারী ও তরুণ প্রজন্মের আত্মকর্মসংস্থান বেড়েছে। আমরা কড়াকড়ি করতে চাই না। তবে বড় বড় অনলাইন ব্যবসায়ীদের করের আওতায় এনেছি।’
মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করি।’
এই সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা, পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫, ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং তদুর্ধ্ব ২৫% হারে কর নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি।
এ ছাড়া পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এরূপ কোম্পানির করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণের অনুরোধ জানান। সারচার্জের ক্ষেত্রে নীট পরিসম্পদের পরিমাণ তিন কোটি টাকার পরিবর্তে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত শূন্য করার প্রস্তাব করা হয়।
এদিকে প্রাক বাজেট মতবিনিময় সভায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এইচএস কোডের কারণে সমস্যায় পড়ছি। এটা সহজ করতে হবে। ৪ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ, ইজ অব ডুয়িং বিজনেসকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে।
চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতার হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে পাঁচদিন এনবিআরের সার্ভার অচল ছিল। যার কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এছাড়া এইচএস কোডে অসঙ্গতি থাকায় সঠিক ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করার পরেও শতকরা ২০০-৩০০ ভাগ জরিমানার শিকার হচ্ছি।
এসময় সারাদেশের শুল্ক স্টেশনে অভিন্ন শুল্কহার নির্ধারণের প্রস্তাব দেন চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু।
মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা লৌহ ও লৌহজাত পণ্য সেক্টরে সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর কর্তনের হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানান।
এ ছাড়া এলপি গ্যাস শিল্পে বিক্রয় পর্যায়ে বিক্রিত মূল্যের উপর আরোপিত ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট বাদ দিয়ে এর পরিবর্তে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি ২ টাকা ট্যারিফ ভ্যাট প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন তারা।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক, জাকিয়া সুলতানা ও সামস উদ্দিন আহমেদ, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বক্তব্য রাখেন।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন চেম্বারের পরিচালকরা, রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কমিশনাররা ও চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন জেলা চেম্বারের নেতারা।
Posted ১:৫৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy