নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ২৫ মে ২০২২ | প্রিন্ট | 369 বার পঠিত
বীমাখাতের অন্যান্য কোম্পানির মতো এমনিতেই আস্থা সংকটে ভুগছে তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। তার ওপর জেঁকে বসেছে নানা অনিয়ম দুর্নীতি। এর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা হাতিয়ে নেয়া, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, বেতন-ভাতা খাতে আইডিআরএ’র নির্দেশনা অমান্য। এখানেই অনিয়মের ইতি নয়। তালিকা দীর্ঘ। এ লম্বা তালিকায় আরো রয়েছে উদ্যেক্তা পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালকের অনুপাত সংরক্ষণ না করাসহ শেয়ার ক্রয়ে আইন অমান্য। এছাড়া কোম্পানিটি ওয়ার্কার্স প্রোফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড গঠন না করার মতো ধৃষ্টতাও দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
জানা যায়, চলতি বছরের শুরুতে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে ২০১০ সালের একটি চিঠি নতুন করে সব কোম্পানির কাছে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বীমা আইনের ২১(৩) ধারার তফসিল-১ অনুসারে দেশে নিবন্ধিত জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা এবং সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম ৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের ৬০ শতাংশ শেয়ার বাধ্যতামূলক ধারণ করে অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ফলে যেসব কোম্পানির পরিচালকদের ৬০ শতাংশ শেয়ার ছিল না তারা বাজার দরে শেয়ার কিনবেন, এই ধারণায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা একের পর এক কিনতে থাকে বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার। দীর্ঘ কয়েক মাস যাবৎ স্থায়ী ছিল এমন অবস্থা। এ সময়ে পুঁজিবাজারে বীমা কোম্পানির শেয়ারগুলোর দর ছিল সর্বোচ্চ। নিয়োগকারীদের মতে, বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধিতে আইডিআরএ’র যেসব নির্দেশনা কলকাঠি হিসেবে কাজ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ন্যূনতম ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা। শেয়ারের দর এমন আকস্মিক বৃদ্ধিতে অধিক মুনাফা লাভের আশায় অনেক বীমা পরিচালকই তাদের শেয়ারগুলো বিক্রি করতে থাকেন। এমনকি কিছু পরিচালক নিজের কাছে থাকা সব শেয়ারও বিক্রি করে দিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে আইন ভঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইডিআরএ। এমনকি শেয়ার বিক্রি বন্ধে নেয়া হয়নি ন্যূনতম পদক্ষেপ। তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের কয়েকজন পরিচালকের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গ করে শেয়ার বিক্রির কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিষ্ঠানটির ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণের হার ৫৬.৩২ শতাংশ। অথচ আইন অনুসারে তাদের ৬০ শতাংশ শেয়ারধারণ বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের পরিচালকদের আরো ৩.৬৮ শতাংশ শেয়ার কেনা প্রয়োজন। কিন্তু শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিচালকরা শেয়ার কেনার পরিবর্তে উল্টো বিক্রি করে দিচ্ছেন। এজন্য ২০২২ সালের মে মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ৫০.৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে বলে ডিএসই সূত্রে জানা যায়।
গত ২০ জুন ২০২১ আইডিআরএর চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে বলেন, ‘তাদের (উদ্যোক্তা-পরিচালকরা) পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনতে হবে। এ জন্য হঠাৎ করে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রেও জটিলতা আছে। তবে যেহেতু শেয়ারধারণের বিষয়টি আইনগত, তাই জটিলতা থাকলেও আইনগত বিষয়টিকেই আমরা গুরুত্ব দেবো।’ এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে আইডিআরএ’র নির্দেশনা অনুসারে উদ্যোক্তা পরিচালকরা ৬০ শতাংশ শেয়ারধারণ করবে বলে জানায়। এ বিষয়ে অবগত থাকার পর পরিচালকদের দেদারছে শেয়ার বিক্রি ও হাতবদল করায় তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বীমা আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে। এক্ষেত্রে আইনের ১৩০ ধারা অনুসারে নির্দেশনা পালনে ব্যর্থতা কিংবা লঙ্ঘনে জরিমানা হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা এবং আইন লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রতিদিনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা এবং ১৩৪ ধারা অনুসারে ব্যক্তিগত জরিমানার ক্ষেত্রে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা এবং লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রতিদিনের জন্য অনধিক পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বরাবরে।
অপরদিকে স্বতন্ত্র পরিচালক সংক্রান্ত বিএসইসির আইন উপেক্ষা করেছে তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২০ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আলোচ্য বছরে অত্র কোম্পানিতে মোট ১৮ জন পরিচালক আছেন, যার মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক মাত্র ২ জন। অথচ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মোট ১৮ জন পরিচালকের মধ্যে ৪ জন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড পরিপালন সংক্রান্ত আইন ভঙ্গ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কোম্পানির বীমা আইন পরিপালন করছে। এরকম আরো অনেক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
কোম্পানির নানা অনিয়ম ও পরিচালকদের ৬০ শতাংশ শেয়ারধারণ সম্পর্কে কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানির পরিচালকরা ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছেন, বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখতে পাবেন। স্বতন্ত্র পরিচালক সংক্রান্ত আইন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন আমরা বীমা আইন পালন করে আসছি।
Posted ১:২০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৫ মে ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy