নাসির আহমাদ রাসেল | রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 169 বার পঠিত
স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে বীমায় আস্থা সংকট দূরীকরণের তাগিদ দিয়েছেন খাতের নিয়ন্ত্রক সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বীমা সচেতনতাবিষয়ক মতবিনিময় সভায় তারা এ আহ্বান জানান। সব বিভাগীয় শহরগুলোতে ধারাবাহিক মতবিনিময় সভার অংশ হিসেবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর আয়োজন করে।
কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীমউল্লাহ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বীমাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে। এজন্য সরকার বীমাখাতের উন্নয়ন চায়। বীমা দুই ধরনের আছে, লাইফ ও নন লাইফ। যেসব বীমা নন লাইফ সেগুলোর জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। সেজন্য অনেকে এই খাতে বাধ্য হয়ে আসেন। কিন্তু জীবন বীমার জন্য আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এ জন্য অনেকে মনে করেন, এই খাতে মানুষ আসছে না।’
সভায় গ্রাহক ও বীমাখাত সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের মতামতে আস্থার সংকটের বিষয়টি উঠে আসায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বলেন, ‘এখানেই অনেকে বীমার প্রতি আস্থার সংকটের কথা বলেছেন। সংকট নেই, আবার আছে। কী কী কারণে সংকট, সেগুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে। বীমা এমন এক খাত, আস্থা অর্জনের জন্য এখানে ১০০ পয়েন্ট পেতে হবে, ৯৯ দশমিক ৫ পয়েন্ট পেলেও হবে না। অর্থাৎ একটি কোম্পানি যদি তার ১০০ জন গ্রাহকের মধ্যে ৯৯ জনকে প্রাপ্য সেবা দেয় আর একজনকে তার প্রাপ্য টাকা না দেয় তাহলে অর্জন বলতে কিছুই থাকবে না। একজনের জন্য ৯৯ জনকে দেওয়ার যে সাফল্য সেটি ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ যে একজন পাবেন না, তিনি বাইরে গিয়ে কোম্পানি সম্পর্কে বদনাম করবেন। সেটার প্রভাব পুরো বীমাখাতের ওপর পড়বে।’
এই সংকট কাটাতে শতভাগ স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়ে সচিব সলীমুল্লাহ বলেন, ‘কোম্পানিকে সৎ হতে হবে, পেশাদারিত্ব থাকতে হবে এবং গ্রাহকদের প্রাপ্য সেবা দিতে হবে। ৯৯ জন সঠিক সময়ে সেবা পেলেও একজন যদি না পায় তাহলে ৯৯ জনকে ভালো সেবা দেওয়ার কোনো দাম থাকবে না। আপনারা আপনাদের কর্মীদের বলবেন, আমরা শতভাগ সততা নিয়ে কাজ করে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। কোনো কলঙ্কের কালিমার তিলক যেন আমাদের কপালে না লাগে।’
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবীর হোসেন বলেন, ‘বীমাখাতে আস্থার সংকট আছে এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। একবার এক সভায় বীমা কোম্পানির একজন বললেন, আমাদের অবস্থা এত খারাপ হয়েছে যে, আমাদের সন্তানদের বিয়ে হচ্ছে না, কারণ আমরা ইন্স্যুরেন্স করি। সুতরাং আস্থার সংকট কাটাতে হলে আমাদের বীমাখাতের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর একবার কমিশন সিস্টেম পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছিলাম। তখন বিগ বিগ শটরা অনুরোধ করল, আমি আবার সেটি তুলে নিয়েছিলাম।’
ইমেজ সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘বীমাখাতে যারা কাজ করেন তাদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সার্ভেয়ারদের মধ্যে গলদ আছে, একেকজনের একেক মত। এজেন্টরা গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলে কিছু জমা দেয় আর কিছু মেরে দেয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে। বীমাখাতের ঐতিহ্য ফেরানোর জন্য আমরা আইন করছি। কিন্তু শুধু আইন করলে হবে না, আইন মানতেও হবে।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বীমাখাত অবহেলিত ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বীমাখাতের কোনো উন্নয়ন হয়নি। ১৯৩৮ সালের আইন দিয়ে চলছিল বীমা কোম্পানিগুলো। তখন যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা মনে করত যে এটা বঙ্গবন্ধুর খাত। কারণ বঙ্গবন্ধু একসময় আলফা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করতেন। এজন্য তারা বীমাখাতকে পিছিয়ে রেখেছিল।’
বীমা কোম্পানির পরিচালকদের উদ্দেশে শেখ কবীর বলেন, ‘আপনারা আপনাদের কোম্পানি থেকে নতুন নতুন প্রোডাক্ট বের করেন। তারপর বীমা কর্তৃপক্ষের কাছে দেন। নিশ্চয়ই উনারা অনুমোদন দেবেন। আপনাদের প্রোডাক্ট, আপনাদেরই প্রচার বাড়িয়ে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী কিন্তু শিক্ষা বীমার আওতায় এসেছে।’
সভায় আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, ‘একজন গ্রাহক যদি তার প্রিমিয়ামের টাকা সঠিক সময়ে ফেরত না পায়, প্রিমিয়াম নিয়ে যদি পকেটে রেখে দেওয়া হয়, গ্রাহককে হয়রানি করা হয় তাহলে এই ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ধরনের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে বীমা একটি টেকনিক্যাল বিষয়। এটি বোঝা সহজ নয়। এ জন্য সাধারণ শিক্ষায় বীমার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।’
সভায় চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আস্থার সংকটটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। জীবন বীমা এবং কয়েকটি মানসম্পন্ন বেসরকারি কোম্পানি ছাড়া সবগুলো প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের হয়রানি করছে।’
এ সময় চট্টগ্রামে একটি বীমা একাডেমি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘এখানে এটি জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম একটি ব্যবসায়িক অঞ্চল। এখানে বীমা নিয়ে কাজ করার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে অ্যাকাডেমিকভাবে এটিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। তবে সবার আগে মানুষের মাঝে বীমা নিয়ে ভয় দূর করতে হবে।’
সভায় অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বদিউল আলমসহ বিভিন্ন বীমা কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, গ্রাহক ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দীন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন
Posted ১২:১৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy