নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৯ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট | 350 বার পঠিত
অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দেশের পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বরখাস্তকৃত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর রাশেদ বিন আমানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোম্পানির পক্ষ থেকে করা মামলায় জামিনে ছিলেন রাশেদ। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আদালতে উপস্থিত হয়ে পুনরায় জামিন আবেদন করলে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
কোম্পানির তহবিল থেকে অর্থ লোপাটসহ বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনায় আছে সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। অর্থ আত্মসাৎ ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর রাশেদ বিন আমানকে বরখাস্ত করে সোনালি লাইফের পরিচালনা পর্ষদ। সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দেড়শ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মীর রাশেদ বিন আমানের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সোনালি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মতামত জানতে শনিবার রাত নয়টার দিকে তার মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
অর্থ লোপাটের অভিযোগে মীর রাশেদকে প্রধান আসামি করে কোম্পানির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। রাজধানীর রামপুরা থানায় দায়ের করা মামলায় তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি কেনারও অভিযোগ উঠেছে। দেশেও কিনেছেন বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। কোম্পানির কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে (আইডিআরএ) অভিযোগ করেন বরখা¯কৃত সিইও রাশেদ আমান।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২৭ জুন মীর রাশেদ বিন আমান কোম্পানি থেকে অবৈধভাবে ১ কোটি ও ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিজ অ্যাকাউন্টে জমা ও আত্মসাৎ করেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসে মীর রাশেদ বিন আমান শ্বশুরের প্রতিষ্ঠিত সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও পদে বসেন। এরপর এই পদ ব্যবহার করে দুর্নীতি, নানা অনিয়ম ও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন।
তদন্ত কমিটি আরও বলছে, মীর রাশেদ বিন আমান কোনো প্রকার বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বেতনের বাইরে কোম্পানি থেকে নিজের বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালে ৩ কোটি ৯৯ লাখ, ২০২১ সালে ৬ কোটি ৯৫ হাজার, ২০২২ সালে ১ কোটি ২১ লাখ এবং ২০২৩ সালে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা সরিয়েছেন। এ ছাড়াও সিইও হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর বিভিন্নভাবে কোম্পানির কোটি কোটি টাকা নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ঢুকিয়েছেন মীর রাশেদ বিন আমান।
এসবের বাইরে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মীর রাশেদ বিন আমানের বিরুদ্ধে ৭০টিরও বেশি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে রাশেদ বিন আমানের দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএ এক কর্মকর্তা জানান, তদন্ত চলমান বিষয় নিয়ে তাদের মন্তব্য করার কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে জানুয়ারি মাসে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে রাশেদ জানান, সাধারণ বীমা গ্রহীতাদের জমা করা প্রিমিয়ামের টাকা (লাইফ ফান্ড) নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত কাজে ইচ্ছা মতো খরচ করছেন সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। পরিচালনা পর্ষদে থাকা তার পরিবারের সদস্যরাও একইভাবে নগদে ও চেকে অর্থ নিয়েছেন। এভাবে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার লাইফ ফান্ড থেকে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা তছরুপ করেছেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে নিবন্ধন পাওয়া নতুন প্রজন্মের জীবন বিমা কোম্পানি সোনালি লাইফের সারাদেশে ২০৫টি শাখা আছে। কোম্পানিটির বীমা গ্রাহক সাত লাখের বেশি। এজেন্ট রয়েছে ৩০ হাজারের মতো। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ৮০০ জন।
Posted ৯:১৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৯ মার্চ ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy