নিজস্ব প্রতিবেদক : | বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট | 154 বার পঠিত
বীমা দাবি ও গ্রাহক অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং বীমা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে গাইডলাইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়ে নতুন যুগের সূচনা করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
‘বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গাইডলাইন্স’ নামে প্রণীত খসড়ায় ইতিমধ্যে স্টেকহোল্ডারদের মতামত চেয়েছে আইডিআরএ । খসড়া প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করতে গত ৭ মার্চ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরিচালক (উপসচিব) এস এম মাসুদুল হক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, বিআইএ ও বিআইএফ’কে পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৯ মার্চের মধ্যে নির্ধারিত ই-মেইলে খসড়া গাইডলাইনের বিষয়ে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে।
গাইডলাইনটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০ এর অধীন প্রণীত ‘বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গাইডলাইন্স- ২০২৪’ নামে অভিহিত হবে। বীমা প্রতিষ্ঠানে বীমা দাবি প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রিতা ও ভোগান্তি হ্রাস করে যতদ্রুত সম্ভব বীমা দাবি পরিশোধ ও বীমা গ্রাহকের স্বার্থ নিশ্চিতের লক্ষ্যে ‘বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গাইডলাইন্স’ প্রণয়ন করা হচ্ছে।
গাইডলাইনটি বীমাকারী, পুনঃবীমাকারী, জরিপকারী বা বীমা এজেন্ট বা বীমা মধ্যস্থতাকারী বা বীমা পরিষেবা প্রদানকারী, বীমা গ্রাহক এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন আওতাধীন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গাইডলাইন্সের খসড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ৭টি করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্রমিক নং ৫এ বীমাকারীর করণীয় হেডে ১৭ টি পালনীয় শর্ত সংযুক্ত করা হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত করে একটি ম্যানুয়াল তৈরি করা এবং তা বীমাকারীর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা। বীমাকারী কতৃক বীমা চুক্তিতে উল্লেখিত কাগজাদি ব্যতিত অন্য কোনো দলিলাদি বীমা গ্রাহকের নিকট চাওয়া যাবে না। কোনো কারণে অতিরিক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন পড়লে তার যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে, এর ব্যত্যয় হলে তা অসদাচরণ বলে গণ্য হবে। বীমা দাবি পরিশোধের সময় কোনো ডিসকাউন্ট, কমিশন, সার্ভিস চার্জ, ফি প্রভৃতি যে নামে অভিহিত করা হোক না কেন, তা নেয়া যাবে না। বীমা গ্রাহক কর্তৃক সর্বশেষ দলিলাদি দাখিলের পর আইন অনুযায়ি ৯০ দিনের মধ্যে বীমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। সময়ক্ষেপণ বা সময়প্রাপ্তির আশায় অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় কাগজ বীমা গ্রাহকের নিকট চাওয়া যাবে না।
ক্রমিক নং ৬এ বীমা গ্রাহকের করণীয় হেডে ৫টি শর্ত সংযুক্ত করা হয়েছে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দাবি নিষ্পত্তির পর ক্ষতিপূরণ অপর্যাপ্ত হওয়া বা অন্য উপযুক্ত কারণে বীমা গ্রাহক প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী আইডিআরএ বা ক্ষেত্রমতে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে।
ক্রমিক নং ৭-এ পুনঃবীমাকারীর দায়িত্ব হিসেবে ৭টি শর্ত সংযুক্ত করা হয়েছে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুনঃবীমা চুক্তিতে বর্ণিত দলিল ব্যতিত অন্য কোন দলিল প্রদানের জন্য বীমাকারীর নিকট চাওয়া হলে, তা পুনঃবীমাকারীর অসদাচরণ বলে গণ্য হবে।
ক্রমিক নং ৮-এ জরিপকারীর দায়িত্ব হিসেবে ৫টি শর্ত সংযুক্ত করা হয়েছে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য অহেতুক হয়রানির উদ্দেশ্যে চুক্তিতে উল্লেখ নাই এমন কোনো দলিলাদি বীমা গ্রাহকের নিকট চাইতে পারবে না।
ক্রমিক নং ৯-এ বীমা দাবি ব্যবস্থাপনায় আবশ্যিক পালনীয় বিষয় হিসেবে সংযুক্ত ৭টি শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, যদি উত্থাপিত বীমা দাবি থেকে প্রদেয় পরিমাণ কম হয় বা কোনো প্রাপ্যতা না থাকে, সেক্ষেত্রে বীমাকারী বীমা গ্রাহককে এর কারণসমুহ লিখিতভাবে ব্যাখ্যাসহ অবহিত করবে।
ক্রমিক নং ১০-এ কলসেন্টারসহ সাহায্যকারী ডেস্ক হিসেবে সংযুক্ত রয়েছে ৩টি অবশ্য পালনীয় শর্ত গ্রাহক পরিষেবা নিশ্চিতের লক্ষে প্রতিটি বীমাকারীর প্রধান কার্যালয় ও শাখা কার্যালয়ে কলসেন্টারসহ একটি সাহায্যকারী ডেস্ক থাকবে, উক্ত ডেস্কের দৃশ্যমান স্থানে একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপন করতে হবে। সাহায্যকারী ডেস্ক বীমা গ্রাহকের যে কোনো প্রশ্ন এবং অভিযোগ গ্রহন করে তা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট বিভাগে দ্রুততার সাথে প্রেরণ করবে। কল সেন্টারে প্রাপ্ত অভিযোগ ও তথ্য সমুহ যথাযথভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করবে।
ক্রমিক নং ১১-এ পরিচালনা পর্ষদ ও এর কমিটি সম্পর্কে রয়েছে ২টি বিধি বীমাকারীর কর্পোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন, ২০২৩’ অনুযায়ী বীমা দাবি সংক্রান্ত অভিযোগ যথাসময়ে নিষ্পত্তি ও গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত প্রক্রিয়া ও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিতের লক্ষে পরিচালনা পর্ষদের একটি গ্রাহক সুরক্ষা ও অভিযোগ প্রতিকার কমিটি থাকবে। উক্ত কমিটি সকল দাবি নিষ্পত্তির কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও তদারকি করে প্রতিবেদন তৈরি করে পর্ষদকে অবহিত করবে। অগ্রাহ্য বীমা দাবি পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপন, আলোচনা ও লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়েছে।
বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গাইডলাইন্স সম্পর্কে খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষপটে এমন একটি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা আরও আগেই ছিলো। বিশেষ করে বীমা দাবি পরিশোধ নিয়ে বীমা গ্রাহকের মাঝে যে অসন্তুষ্টি রয়েছে, তা দূরীকরণে এ গাইডলাইন্স টনিক হিসেবে কাজ করবে। দেরিতে হলেও আইডিআরএ’র এই পদক্ষেপ বীমা খাতে নতুন যুগের সুচনা করবে। গাইডলাইন্সটি বাস্তবায়ন হলে বীমা খাতের প্রভূত উন্নয়ন হবে, যত দ্রুত সম্ভব এটি বাস্তবায়ন করা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বলেছেন, এই গাইডলাইন্সটি বর্তমান আইডিআরএ’র কর্মকর্তাদের কার্যক্রমের প্রমাণ হিসেবে মাইলস্টোন হয়ে থাকবে।
Posted ৯:০৮ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy