শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় সংকটে ১০ ব্যাংক

বিবিএনিউজ.নেট   |   মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   588 বার পঠিত

অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় সংকটে ১০ ব্যাংক

নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় চলছে ব্যাংক খাত। যাচাই-বাছাই ছাড়াই দেয়া হচ্ছে ঋণ, যা আর আদায় হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এতে বাড়তি নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। লাগামহীন খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতিতে সরাসরি প্রভাব পড়েছে সরকারি-বেসরকারি ১০টি ব্যাংকের মূলধনে।

২০১৯ সালের মার্চ শেষে মূলধন সংকটে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি ১০ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। ঘাটতির তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র সরকারি ব্যাংক রূপালী। অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর তালিকা থেকে বেরিয়ে গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এছাড়া ঘাটতিতে থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক, জনতা, অগ্রণী, বাংলাদেশ কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে ব্যাংক খাত দুর্বল হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এটাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। ফলে দেশি ও বৈদেশিক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এ সংকট উত্তরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতিনীতি অনুযায়ী, একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকা এর মধ্যে যেটি বেশি সেই পরিমাণ মূলধন রাখতে হয়। ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশ ন্যূনতম মূলধনের পাশাপাশি দশমিক ৬২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। এ হিসাবে চলতি বছরের মার্চ শেষে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ১০টি ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মার্চ শেষে মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি আট হাজার ৮৮৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। মূলধন ঘাটতির দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি চার হাজার ৮৮৮ কোটি আট লাখ টাকা। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের এক হাজার ৫৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংকের ২৩৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৫৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ৭৩৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি এক হাজার ৫৬৯ কোটি নয় লাখ টাকা। ঘাটতিতে থাকা অন্য দুই ব্যাংকের মধ্যে এবি ব্যাংকের ৩৭৬ কোটি ৭৪ লাখ এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, এছাড়া বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ৫৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার মূলধন ঘাটতি পড়েছে।

জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি তৈরি হলে বাজেট থেকে তার জোগান দিতে হয়। জনগণের করের টাকায় বিভিন্ন সময় মূলধন ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকগুলোতে অর্থ জোগান দেয় সরকার। তবে করের টাকায় মূলধন জোগানে বরাবরই বিরোধিতা করেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি মূলধন ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে। তবে ব্যবসা টিকিয়ে ভর্তুকি বাবদ দুটি ব্যাংকের জন্য মাত্র ১৫১ কোটি ১২ লাখ টাকা ছাড় করা হয়। যদিও সরকারি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছরই জনগণের করের টাকায় ব্যাংকগুলোকে মূলধন ঘাটতি মেটানোর অর্থ দেয় সরকার। কিন্তু অর্থ দেয়ার পরও ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে আদৌ অর্থ দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এ কারণে তাদের কোনো অর্থ দেয়া হয়নি।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের জোগান দেয়া অর্থ ও মুনাফার একটি অংশ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। কোনো ব্যাংক মূলধনে ঘাটতি রেখে তার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ফলে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বেশি রাখতে হচ্ছে। বর্তমানে আমানত প্রবৃদ্ধি কম। ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে। ফলে বাড়তি সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে মূলধনে হাত দিতে হচ্ছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর এ হার বেশি।

তিনি বলেন, প্রতি বছরই বাজেট থেকে এ মূলধন জোগান দেয়া হয়। এবার এ খাতে অর্থ বরাদ্দ দেয়নি সরকার। এটা ভালো সিদ্ধান্ত। এখন ব্যাংকগুলোর উচিত খেলাপি আদায়ে জোর দেয়া। কারণ খেলাপি আদায় হলে মূলধনের ওপর চাপ কমে যাবে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ যারা কমাতে ব্যর্থ হবে তাদের কার্যক্রম সংকুচিত করে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় রোধ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক এ গভর্নর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে নয় লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা ২০১৮ এর ডিসেম্বর শেষে ছিল ৯৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:১৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।