বিবিএনিউজ.নেট | রবিবার, ০৪ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 504 বার পঠিত
অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে আগে খেলাপি ঋণের হার বেশি ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। কিন্তু গত এক দশকে পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। এখন সরকারি-বেসরকারি উভয় শ্রেণীর ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে ঋণের সুদহারও। প্রায় এক বছর ধরে ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার কথা বলছে সরকার। যদিও তা না কমে উল্টো বাড়ছে অনেক ব্যাংকে।
এ পরিস্থিতিতে দেশের ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ রোববার বেলা সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গভর্নর ফজলে কবিরসহ অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খেলাপি ঋণ কমানো ও ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার বিষয়ে সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। এ ধারাবাহিকতায় আজ বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর আগে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী বৈঠক করেছিলেন। এবারই প্রথম চেয়ারম্যান-এমডি উভয়কেই একসঙ্গে ডাকা হয়েছে। বৈঠকে খেলাপি ঋণ ও ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১০ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের সব ব্যাংক মিলিয়ে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ ছিল খেলাপি। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৬ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা, যা এ ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
কিন্তু চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাতে বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশই বর্তমানে খেলাপি। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ খেলাপির খাতায় নাম লিখিয়েছে।
খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশের কম থাকলে সেটিকে এতদিন সহনীয় মাত্রায় দেখে আসছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসরকারি ৪০টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ২৯টির খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশের বেশি রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির খেলাপি ঋণের হার অস্বাভাবিক বেশি। মার্চ শেষে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৮২ শতাংশে। একই সময়ে পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৬৪ দশমিক ৪৩ ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩২ শতাংশ। প্রায় ১২ শতাংশ ঋণ খেলাপির খাতায় চলে গেছে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের।
খেলাপি ঋণের কারণে সঞ্চিতি (প্রভিশন) ঘাটতিতেও পড়েছে ১০টি বেসরকারি ব্যাংক। মার্চ শেষে ন্যাশনাল ব্যাংক ৬৮৮ কোটি, ট্রাস্ট ব্যাংক ৩৬১ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ৩৫৩ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ২৭৫ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ২৭০ কোটি, এবি ব্যাংক ১৮৬ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১২৫ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১০৩ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৭৫ কোটি ও প্রিমিয়ার ব্যাংক ৮০ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে।
বৈঠকের আমন্ত্রণ পেলেও আলোচ্য সূচির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বৈঠকে ডেকেছেন। তবে বৈঠকের আলোচ্য সূচির বিষয়ে কোনো কিছু জানি না। একসঙ্গে বসলে অনেক কথাই আসবে। আশা করছি, ব্যাংকিং খাতের বিদ্যমান সংকট ও সমস্যাগুলোর বিষয়ে বৈঠক থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।
Posted ১:০০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৪ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed