বিবিএ নিউজ.নেট | সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 326 বার পঠিত
প্রথমবারের মতো ইসলামী বন্ড ‘সুকুক’ চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আজ সোমবার নিলামের মাধ্যমে প্রথম দফায় চার হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়া হবে।
সরকার উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে এই বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে বৈধ ও নিরাপদ বিনিয়োগের নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। কারণ দেশি-বিদেশি যেকোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবে।
জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’-এর সম্পদের বিপরীতে আট হাজার কোটি টাকার এই বন্ড চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক চার হাজার কোটি টাকা করে দুই দফায় এই বন্ড বাজারে ছাড়বে। এ প্রকল্পের জন্য ছাড়া বন্ডটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইজারা সুকুক’।
এতে সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন একজন বিনিয়োগকারী। এ বন্ডের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। বার্ষিক প্রাক্কলিত মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৬৯ শতাংশ। ষান্মাসিক ভিত্তিতে এই মুনাফা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক রূপ রতন পাইন বলেন, প্রথম দফায় চার হাজার কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ‘ইজারা সুকুক’ ইস্যুর নিলাম ডাকা হয়েছে। দেশি-বিদেশি যেকোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব রয়েছে এমন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ১০ হাজার কোটি টাকার গুণিতক পরিমাণে তাদের বিড দাখিল করতে পারবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজের জন্যও একই নিয়মে বিড দাখিল করতে পারবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
শরিয়াহভিত্তিক বন্ড নিয়ে গত ৮ অক্টোবর নীতিমালা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ‘বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ সুকুক গাইডলাইন ২০২০’ শীর্ষক ওই নীতিমালা গত ২১ অক্টোবর সার্কুলার আকারে জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের মধ্যে বাজারে ‘সুকুক’ বন্ড ছাড়ার বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়।
‘সুকুক’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়ার আইনি দলিল। তবে প্রচলিত বন্ড ও ‘সুকুক’ বন্ডের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রচলিত বন্ড সুদভিত্তিক হওয়ায় তা শরিয়াহসম্মত নয়। আর ‘সুকুক’ হচ্ছে এমন একটি বিনিয়োগ, যাতে সম্পদের ওপর মালিকানা দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। সাধারণত সুকুকধারীরা সম্পদের মালিকানা লাভ করেন এবং মুনাফা পান।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এখন থেকে প্রচলিত ট্রেজারি বিল ও বন্ড এবং সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক এই বন্ডও হবে সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস, যে অর্থ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে।
সরকারের সুবিধা : বাজেটে ঘাটতি মেটাতে এত দিন সরকার শুধু প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিতে পারত। অথচ দেশের এক-তৃতীয়াংশ ইসলামী ব্যাংকিং। শরিয়াহভিত্তিক উপকরণ না থাকায় সেখান থেকে কোনো ঋণ নিতে পারছিল না সরকার। ইসলামী বন্ডের কল্যাণে এখন সেখান থেকেও ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। এতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আসার পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরতা কমবে। সেই সঙ্গে ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয়ও কমবে।
ইসলামী ব্যাংকের সুবিধা : প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মধ্যে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর সুবিধাই বেশি হবে। কারণ এই বন্ড চালুর ফলে পড়ে থাকা অলস টাকা বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে ইসলামী ব্যাংকগুলোর। এতে তাদের মুনাফাও বাড়বে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বাধ্যতামূলক বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) সংরক্ষণ করাও সহজ হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সুবিধা : বাংলাদেশ ব্যাংক এত দিন তার রেপো ও রিভার্স রেপো কার্যক্রম প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পারলেও ইসলামী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে করা সম্ভব ছিল না। ফলে মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ওপরই নির্ভর করতে হতো। এখন ‘সুকুক’ বন্ডের কারণে ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে এ ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সাধারণ মানুষের সুবিধা : অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা সুদের ব্যাপারে আগ্রহী নন। ফলে তারা টাকা এমনিই ফেলে রাখেন। ‘সুকুক’ বন্ড শরিয়াহ পরিপালন করে ইস্যু হওয়ায় এখানে তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। এ ছাড়া যারা সুদভিত্তিক কারবার করেন, তাঁদেরও এই বন্ডে বিনিয়োগে বাধা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুদারাবা (মুনাফায় অংশীদারি), মুশারাকা (লাভ-লোকসান ভাগাভাগি), মুরাবাহা (লাভে বিক্রি), ইশতিসনা (পণ্য তৈরি), করজ হাসান (উত্তম ঋণ), সালাম (অগ্রিম ক্রয়) ও ইজারা (ভাড়া) ‘সুকুক’ প্রচলিত আছে। এই বন্ড ছাড়ার দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া।
Posted ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | rina sristy