নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 127 বার পঠিত
চলতি বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মোট আমদানি হয়েছে ২৫.৫১ বিলিয়ন ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৩.৯০ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে এসময় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৫.৯২ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগে ছিল ১৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার।
আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম চার মাসে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৪.৬৯ শতাংশ বেড়ে ৯.৫৯ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। তবে, আগের তিন মাসের তুলনায় অক্টোবরে ট্রেড ডেফিসিট বৃদ্ধির হার ছিল সবচেয়ে কম।
রপ্তানি বাড়লেও আমদানি সেভাবে না কমায় অক্টোবরেও সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২.০৪ বিলিয়ন ডলার ট্রেড ডেফিসিট বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা গেছে, বাণিজ্য ঘাটতি সেপ্টেম্বরে ছিল ৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগস্টে ছিল ২.৪৭ বিলিয়ন ডলার এবং জুলাইয়ে ছিল ২.০৮ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মোট আমদানি হয়েছে ২৫.৫১ বিলিয়ন ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৩.৯০ বিলিয়ন ডলার।
অপরদিকে এসময় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৫.৯২ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগে ছিল ১৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার।
অক্টোবরে ইমপোর্ট পেমেন্ট করা হয়েছে ৬.১৬ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বরে ৬.৬৬, আগস্টে ৬.৮৩ এবং জুলাই মাসে আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৫.৮৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে আগের দুই মাসের তুলনায় কমলেও, ব্যয় ৬ বিলিয়নের নিচে নামেনি।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “আমদানি কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, ডেটা দেখে তো সেটা ইমপ্লিমেন্ট হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।”
“আমাদের এলসি মার্জিন বাড়ানো, আমদানি শুল্ক বাড়ানো, এলসি খোলাকে ডিরেক্টলি কন্ট্রোল করা, এক্সচেঞ্জ রেট ডেপ্রিশিয়েশন করাসহ যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো ইমপোর্টকে কমানোর কথা। জুন-জুলাই মাসের দিকে আমরা শুনেছিলাম ব্যাংকগুলোতে এলসি ওপেনিং কমানো হচ্ছে। এসবের ইমপ্যাক্ট তো এতোদিনে পাওয়ার কথা। সেটি তো দেখা যাচ্ছে না,”
তিনি আরো বলেন, “অক্টোবর মাসের এক্সপোর্টের মধ্যে আরএমজি সেক্টরে পজেটিভ গ্রোথ এবং নন আর এমজি সেক্টরে নেগেটিভ গ্রোথ এসেছে বলে শুনেছি। আবার গার্মেন্টস সেক্টরের নেতারা বলছেন, আরএমজি এক্সপোর্টে গ্রোথ কই থেকে আসলো আমরা জানি না। এই বিতর্কটা আমাদের দেশে আগে ছিল না,”
“নভেম্বরেও একই ঘটনা ঘটেছে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বলেছে তাদের সদস্যদের এক্সপোর্ট গ্রোথ খুব একটা নেই। তবে ডেটা বলছে এক্সপোর্টে অনেক গ্রোথ হয়েছে। এই বিতর্কটা সমাধান হলে ট্রেড ডেফিসিটের সংখ্যাটা আরো বড় হতো বলে আমার মনে হয়।”
সাধারণত এক্সপোর্ট প্রোমোশন ব্যুরো (ইপিবি) দেশের কোনো মাসের এক্সপোর্টের ডাটা পাবলিশের একমাস পর ওই মাসের ইমপোর্টের ডেটা পাবলিশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ইপিবি এর রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো নভেম্বরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারের মাত্রা (৫.০৯ বিলিয়ন ডলার) ছুঁয়েছে।
তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ কমায় এবং পেমেন্ট ডেফার করার সুযোগ থাকায় আমদানি পেমেন্টও কিছুটা কমে আসতে পারে।
সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম বলেন, “ডলারের রেটটা বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত। এক্সপোর্ট, ইমপোর্ট বা রেমিট্যান্সের ডলারের রেটে কোনো ক্ষেত্রেই ডিসক্রিমিনেশন করার প্রয়োজন নেই। আমদানি ও রপ্তানিতে ব্যালেন্স না আসার একটা কারণ ডলারের ভিন্ন ভিন্ন রেট থাকা।”
চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে ২ বিলিয়ন করে রেমিট্যান্স আসলেও নভেম্বর পর্যন্ত গত ৩ মাসে ১.৫ বিলিয়নের কাছাকাছি এমাউন্টের রেমিট্যান্স এসেছে, যেটি কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্সে প্রভাব ফেলেছে বলে বলে করেন অর্থনীতিবিদরা।
এ বছরের জুলাই-অক্টোবর ত্রৈমাসিকে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৫০ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের ৩.৮৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি।
জাহিদ হোসেন বলেন, “আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারেন্ট একাউন্ট ডেফিসিট থাকবেই, এটা স্বাভাবিক। এই ডেফিসিট ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সমস্যা নয়, যতক্ষণ এর ফাইন্যান্সটা থাকে।”
“তবে কারেন্ট একাউন্ট ডেফিসিটের ফাইন্যান্সিংটা এডিকুয়েট না। ফলে এটি রিজার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেটের ডেপ্রিসিয়েশন কমাতে রিজার্ভ থেকে ক্রমাগত ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে, তাই রিজার্ভও কমে যাচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিনশেষে দেশের রিজার্ভ ৩৩.৯৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের আগস্টে ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল এ রিজার্ভ।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ”সাধারণত আমাদের ফিনান্সিয়াল একাউন্ট সারপ্লাসে থাকে। ফিনান্সিয়াল একাউন্ট সারপ্লাস দিয়ে কারেন্ট একাউন্ট ডেফিসিটের একটা বড় অংশ পূরণ করা হয়। এখন দুটোই ডেফিসিটে চলে গেছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ফিনান্সিয়াল একাউন্ট সারপ্লাস ছিল ২.৭৯ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সেটি ৩৭ মিলিয়ন ডেফিসিটে আছে।
বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানরা বলছেন, বেশিরভাগ ব্যাংকই ডলার সংকটে রয়েছে। এমনকি তারা এলসি খোলা কমিয়ে দিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনছে শুধুমাত্র সরকারি আমদানি পরিশোধের জন্য।
বেশিরভাগ ব্যাংক আমদানি এলসি খোলার বদলে ডলার সংরক্ষণের দিকে ঝুঁকছে বলে যোগ করেন তারা।
Posted ৫:৫০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy