আদম মালেক | রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯ | প্রিন্ট | 970 বার পঠিত
অর্থনীতিতে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থের মারাত্মক প্রভাব। বিদেশে পাচার রোধে বিভিন্ন সময় বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। এতে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হয় এবং কালো টাকার মালিকদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। তাই ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অর্থনীতির জন্য শুভ নয় এবং এতে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসবের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তাদের মতে, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিধান অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতিবান্ধব। কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের পরিপন্থী। এতে দুর্নীতির একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে। ধুলিস্যাৎ হবে সৎ পথে সম্পদ আহরণের সুযোগ।
১৪ জুুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অপ্রদর্শিত অর্থ দেশের বাইরে পাচার না করে দেশে বিনিয়োগ করা হলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। ভবিষ্যতেও যেন এ বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করা না হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুশাসন ও ন্যায্যতার পরিপন্থী হলেও দফায় দফায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে এসেছে একের পর এক সরকার। এটি প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির পরিপন্থী। তিনি বলেন,কেবল ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অবৈধটাকে বৈধতা দেওয়ার অর্থ, সমাজে বৈধভাবে উপার্জন করাকে নিরুৎসাহিত করা, যা চরম বৈষম্যমূলক, কারণ সৎপথে উপার্জনকারীকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। দুর্নীতির কাছে রাষ্ট্রের এই আত্মসমর্পণ কীভাবে গ্রণযোগ্য হতে পারে তা সরকারকে অনুধাবন করতে আহŸান জানাই।
অর্থনীতিবিদদের মতে, অপ্রদর্শিত অর্থ তেমন বিনিয়োগে আসছে না। এই অর্থ ব্যয় হয় অদৃশ্য ব্যক্তিগত ভোগবিলাসে অর্থাৎ যে ভোগবিলাস আয়কর বা অন্য কোনো নজরদারি প্রতিষ্ঠানের নজরে পড়ে না। এই অর্থ এমন কোনো জায়গায় ভোগ বা বিনিয়োগ করা হয় যেখানে দেশের আইন পৌঁছতে পারবে না, অর্থাৎ টাকা পাচার করা। কালো টাকার মালিকদের জন্য তৃতীয় পথটাই বহুল ব্যবহৃত এবং এটাকেই তারা নিরাপদ মনে করেন। তাই অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা।
জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৪৩ বছরে কালো টাকা সাদা হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। ওই অর্থ বৈধ করার সুযোগের বিপরীতে সরকার এক হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। সূত্র মতে,১৯৭২ থেকে ৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২ কোটি ২৫ লাখ কালো টাকা সাদা হয়। ১৯৭৬-৮১ সালে জিয়াউর রহমানের সেনাশাসন ও বিএনপি সরকারের সময় এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে এইচ এম এরশাদের শাসনামলে কালো টাকা সাদা হওয়ার পরিমাণ কমে যায়। ১৯৮২-৯০ পর্যন্ত ৯ বছরে ৪৫ কোটি ৮৯ লাখ কালো টাকা সাদা হয়। ১৯৯১-৯৬ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সরকারের সময় ১৫০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সাদা হয়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা সরকারের ৫ বছরের এর পরিমাণ প্রায় ৬ গুণ বেড়ে যায়। ১৯৯৭-২০০০ সালে শেখ হাসিনার সরকারের সময় ৯৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকা সাদা হয়। খালেদা জিয়ার পরবর্তী সরকারের সময় এর পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। ২০০১-০৬ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের সময় সাদা হয় ৮২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। তবে ২০০৭-০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের তুলনায় প্রায় ১২ গুণ কালো টাকা সাদা হয়। এ টাকার পরিমাণ ৯ হাজার ৬৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০০৯-১৩ সালে শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার ১ হাজার ৮০৫ কোটি কালো টাকা সাদা করে। পরবর্তী বছর সাদা হয় ৮৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
Posted ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed