রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণে জর্জরিত

বিবিএনিউজ.নেট   |   শনিবার, ০৯ মার্চ ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   889 বার পঠিত

চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণে জর্জরিত

অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, নানা কেলেঙ্কারির মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ আর ফেরত আসছে না। ফলে বেড়েই চলছে চতুর্থ প্রজন্মের নতুন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ। এক বছরের ব্যবধানে মন্দ ঋণের (খেলাপি ঋণ) তিনগুণ বেড়ে চাপে পড়েছে ব্যাংকগুলো।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩২ শতাংশ বা ২ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।

নতুন ৯টি ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান নাম পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড)। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ৫৭ শতাংশ। আলোচিত সময়ে ব্যাংকটির বিতরণ করা মোট ঋণস্থিতি ৫ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এই ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা বা ৩২৪ শতাংশ। ২০১৭ সালে ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৭২৩ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মেঘনা ব্যাংক। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৩৬ কোটি টাকা। এক বছর আগে ছিল ৯৩ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের তালিকায় রয়েছে এনআরবি ব্যাংক ৯৭ কোটি টাকা, এক বছর আগে ছিল ৫৫ কোটি টাকা।

এ ছাড়া মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫৯ কোটি টাকা; এক বছর আগে ছিল ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯৪ কোটি টাকা; এক বছর আগে ছিল ৭৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৫ কোটি; এক বছর আগে ছিল ৬১ কোটি টাকা। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচাল অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮১ কোটি টাকা; যা এক বছর আগে ছিল ৩০ কোটি এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮৫ কোটি টাকা; এক বছর আগে ছিল ৫৭ কোটি ২১ লাখ টাকা।

এদিকে চতুর্থ প্রজম্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে মিডল্যান্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে। ডিসেম্বর শেষে মিডল্যান্ড ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। এক বছর আগে ছিল ৫৫ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন ব্যাংকগুলোর সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। চার-পাঁচ বছরে তারা বিশেষ কোনো পণ্য বাজারে এখনো নিয়ে আসতে পারেনি। গ্রামপর্যায়ে শাখা করার কথা থাকলেও তেমন আগ্রহ নেই নতুন ব্যাংকগুলোর। সৃজনশীলতা বা নতুনত্বও বলতে কিছু নেই। পুরনো ব্যাংকগুলোর নিয়মেই আমানত সংগ্রহ করে ঋণ প্রদান করছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো পরিচালন ও ব্যবস্থাপনার দুর্ভলতা রয়েছে। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে তেমন যাচাই-বাছাই করতে পারছে না। ফলে নানা অব্যবস্থাপনা অনিয়মে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে ব্যাংকগুলো অনেকটা চাপে পড়েছে। তাই নতুন ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ সময়ে ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৬২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এক বছর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ২০১৭ সালে বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ৬৩৮ কোটি বা ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়। তার বিপরীতে নতুন ব্যাংকের জন্য ৩৭টি আবেদন জমা পড়ে। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ২০১২ সালের শুরুতে দুই দফায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের তিনটি ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য ছয়টি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়। ২০১৩ সালের বিভিন্ন সময়ে চতুর্থ প্রজম্মের নতুন ৯টি ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৫০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৯ মার্চ ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।