বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 628 বার পঠিত
উচ্চহারের খেলাপি ঋণের অক্টোপাসে জড়িয়ে পড়ছে দেশের ব্যাংক খাত। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বিশেষ ব্যবস্থায় পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ নানা সুবিধা নিলেও ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকার ঘর। ছয় মাসেই শ্রেণিকৃত বা খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, গত জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকায়। খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশে। এই সময়ে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৬২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। এর বাইরে খেলাপি হওয়া ঋণ রাইট অফ বা অবলোপন হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাবে দেশের ব্যাংক খাতে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে এক লাখ ৬২ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। খেলাপির হার দাঁড়াবে ১৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, পুরনো ঋণের পাশাপাশি নতুন গ্রাহকও খেলাপি হয়ে পড়ছে। অভিযোগ উঠেছে, যাচাই-বাছাই ছাড়াই দেয়া ঋণই খেলাপি হয়ে পড়ছে। আর এ কাজে ব্যবসায়ীদের সাথে হাত মেলাচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যাংকার। অপর দিকে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- রাজনৈতিক চাপেই ঋণ বিতরণ করতে হচ্ছে।
খেলাপি ঋণসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চে খেলাপি পরিমাণ ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। খেলাপির হার ছিল ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
জুন শেষে খেলাপির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও কমেছে হার। এর পেছনের কারণ হচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমেছে আগের চেয়ে। কিন্তু বেসরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের উচ্চহারের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল।
ফলে গত তিন মাসের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে এক হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ওই সময়ে খেলাপির হার ছিল ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। ছয় মাসের হিসাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণের উচ্চহারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দুই শতাংশ সুদে পুনঃতফসিলের সুবিধা এখনো পুরোদমে নিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। অনেক ব্যাংকই বুঝে-শুনে পুনঃতফসিল করছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের তথ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার আরো কমে আসবে।
খেলাপি ঋণ ও ঋণের সুদহার কমিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। এর সবই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে। সর্বশেষ ঋণ পুনঃতফসিল করতে মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দেয়ার সুবিধা নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যেখানে সাধারণ নিয়মে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ দিতে হতো। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এই সুবিধা নিয়েও পরিশোধ করছেন না বকেয়া ঋণ।
গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক পরিচালক ও ব্যাংকারদের সাথে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠক শেষে ঘোষণা দিয়েছিলেন খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে না। ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে শিগগিরই সার্কুলার দেয়া হবে।
তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা বা সাত দশমিক শূন্য আট শতাংশ। জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায়। খেলাপির হার সাত দশমিক ১৩ শতাংশ।
জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। খেলাপির হার ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। অবশ্য গত মার্চ শেষে যা ছিল ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। গত মার্চ পর্যন্ত বিদেশী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ২৫৬ কোটি টাকা বা ছয় দশমিক ২০ শতাংশ। জুন শেষে কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৭ কোটি টাকায় বা পাঁচ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
অপর দিকে এই সময়ে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। মার্চ শেষে ছিল চার হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। বিশ্লেষকদের মতে, গুণগত মানের ঋণ না দেয়ায় এসব ঋণই খেলাপি হয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন সুবিধা দিয়েও আশানুরূপ ফলে বয়ে আনবে না। ঋণের ব্যবহার কোন খাতে হচ্ছে তা ব্যাংককেই দেখতে হবে।
Posted ৩:২০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed