শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব অর্থনীতি ও জ্বালানি তেলের রাজনীতি

পান্না কুমার রায় রজত   |   মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২   |   প্রিন্ট   |   522 বার পঠিত

বিশ্ব অর্থনীতি ও জ্বালানি তেলের রাজনীতি

বিশ্ব রাজনীতির একটা বিরাট অংশ নিয়ন্ত্রণ করে পরিশোধিত বা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। তেল কূপের দখল নিয়ে বিশ্ব কম সংঘাত বাধেনি। বিশ্ব রাজনীতিবিদরা প্রতি মুহূর্তেই তেলের দাম এবং এর প্রাপ্যতা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে থাকেন। ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে বিশ্ব তেল সম্পদ নিয়ন্ত্রণের জন্য শুরু হলো এক নতুন লড়াই। তেল উৎপাদনকারী আরব দেশগুলো তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো শিল্পোন্নত দেশগুলোতে। ১৯৭৩ সালে তেল রফতানিকারী আরব দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু শিল্পোন্নত দেশের বিরুদ্ধে তেল নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আরব ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়ায় তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছিল। এর পরিণামে বিশ^বাজারে তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল কয়েক গুণ। যার সুদুরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল বিশ্ব রাজনীতি আর অর্থনীতিতে।

বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় জুড়ে বিশ্বের তেলের বাজার একচেটিয়া ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে সাতটি বড় পশ্চিমা তেল কোম্পানির এক জোট। এদেরকে বলা হয় সেভেন সিষ্টার্স। বিশ্বের ৮৫ শতাংশ তেলের রিজার্ভ ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। এরাই তেলের দাম ঠিক করতো। এরাই কৃত্রিমভাবে তেলের দাম কমিয়ে রাখতো। ওপেক (Organiæation of the Petroleum Exporting Countries) হচ্ছে বিশ্বের তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন। ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজারে ওপেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। ওপেক প্রতিষ্টিত হয় ১৩ টি তেল রফতানিকারক রাষ্ট্র নিয়ে যাদের মধ্যে ছিলো ইরান, সাতটি আরব রাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, ঘানা এবং ভেনেজুয়েলা। ১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওপেকের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল মার্কিন, ব্রিটিশ ও ওলন্দাজ তেল কোম্পানিগুলোর প্রভাব কমানো।

বর্তমানে বিশ্বের জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির বিষয়ে অনেকেই মনে করছেন উন্নয়নশীল এমনকি উন্নত দেশগুলো ও অর্থনৈতিক মন্দার হাত থেকে রেহাই পেতে আরো একবার হোচট খাবে। জ্বালানি তেলের এই বারবার দরপতন বা উত্থানের জন্য তেল ব্যবসায়ীরা সরাসরি দোষ দিয়ে থাকেন তেল উৎপাদনকারী দেশ মানে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলো। তেলের দামবৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন উত্তোলনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তবে জ¦ালানি তেলের দামের ওঠানামা অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বে অর্থনীতির ওঠানামার সাথে যুক্ত। এছাড়া দাম বাড়ার অন্যান্য কারণের মধ্যে তেলের চাহিদা বৃদ্ধিকেই আমরা দায়ী করতে পরি। আর চাহিদা বৃদ্ধির জন্য উদীয়মান বিশ্ব অর্থনীতিকেই কারণ হিসেবে মনে করা যায়। তাহলে বাংলাদেশের কী অবস্থা?

দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে প্রতিবছর ৩৮ লাখ টন জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয় আর পুরোটাই আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ এশিয়ার ১৯ তম বৃহৎ গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ। দেশীয় জ¦ালানি চাহিদার ৫৬ শতাংশ পূরণ করে গ্যাস। বাংলাদেশ অপরিশোধিত তেল ও খনিজ দ্রব্যাদির অন্যতম আমদানিকারক দেশ। এদেশের জ্বালানি খাত রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোম্পানি যেমন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও পেট্রোবাংলা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এ দেশে হাইড্রোকার্বন শিল্পে কাজ করা আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে শেভরন, কনোকোফিলিপস, ষ্ট্যাটওয়েল, গ্যাজপ্রম এবং ওএনজিসি। যেখানে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের ৫০ শতাংশ আসে শেভরনের গ্যাস কূপগুলো থেকে। বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যাবার কারণে প্রতি বছর লোকসান গুণছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। বিশ্বে তেলের যোগানকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। ওপেকভুক্ত ও ওপেক বহির্ভূত দেশের তেল উত্তোলন। মোট তেল সরবরাহের ৪০ শতাংশ উত্তোলন হয় ওপেকভুক্ত দেশগুলো থেকে যার সিংহভাগের দাবীদার সৌদিআরব, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরান ও ভেনেজুয়েলা, বাকী ৬০ শতাংশ উত্তোলিত হয় ওপেক বহির্ভূত দেশগুলো থেকে। এদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দেশভিত্তিক উত্তোলনে প্রথম আমেরিকা, তৃতীয় রাশিয়া, পঞ্চম কানাডা, চীন ও মেক্সিকো। প্রধান দুইটি কারণে তেলের মূল্য নির্ধারণে ওপেক বহির্ভূত দেশগুলোর তুলনায় ওপেকভূক্ত দেশগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি। একটি হলো ব্যারেল প্রতি উত্তোলন খরচ। কারণ ওপেকের অনেক দেশে ব্যারেল প্রতি উত্তোলন খরচ ওপেক বহির্ভূত দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। অপরটি হলো তেলের রফতানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ। ওপেকভুক্ত দেশগুলো বিশে^ তেল রফতানি বাণিজ্যের ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তেল উত্তোলনের মতো তেল আমদানিতেও শীর্ষে আমেরিকা। তারপর আছে জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
বিশ^ রাজনীতিতে তেল বিশেষ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ওঠে যায় ৮৯ দশমিক শূন্য ৫ ডলারে। ০৬ মার্চ ২০২২ সালে ব্রেণ্ট ক্রডের দাম ব্যারেল প্রতি ১৩৯ মার্কিন ডলার পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। করোনাকালে অর্থনৈতিক সংকট থেকে ঘূরে দাঁড়ানোর চেষ্ঠায় এখন সারাবিশ^। ফলে বেড়ে গেছে জ¦ালানির চাহিদা। সেই সঙ্গে হু হু করে বাড়ছে তেলের দাম। এদিকে তেলের দাম বৃদ্ধির এই বৈশ্বিক প্রবণতার মধ্যেই যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আরব আমিরাতে ফুয়েল ট্যাংকারে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের হামলা আরও বাড়িয়ে তুলছে তেলের বাজারের অস্থিরতা। তার ওপর ১৮ জানুয়ারি ২০২২ এক বিস্ফোরণে সাময়িকভাবে তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় ইরাক-তুরস্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাইপলাইন। এ পাইপলাইনটি দিয়েই রফতানি হয়ে থাকে বিশ^বাজারে ইরাকের অপরিশোধিত তেলের এক-চতুর্থাংশ। ওপেকের তথ্য অনুযায়ী, অপরিশোধিত তেলের বেশি মজুদ রয়েছে ভেনেজুয়েলায়। তারপরেই সৌদিআরব ও চতুর্থে ইরান। শিয়া অধ্যূষিত রাষ্ট্র ইরান রিজার্ভ ও রফতানির দিক দিয়ে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। সৌদিআরব তেল রপ্তানিতে প্রথম কিন্তু ইরান ও ভেনেজুয়েলা হচ্ছে মার্কিন মতাদর্শ বিরোধী এজন্য সৌদিআরবের মতো আরব রাষ্ট্রগুলোকে ব্যবহার করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানকে চাপে ফেলার জন্য মার্কিন প্রশাসন দেশটির উপর অবরোধ জারি করে এবং সৌদি আরবকে তেল উৎপাদন বাড়াতে বলে। একইভাবে ইরান থেকে সর্বোচ্চ তেল আমদানিকারক এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারত ও চীনের উপর ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের আওতায় ভারতের জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা বাতিল এবং চীনা পণ্যের আমদানি শুল্ক ১০% থেকে বাড়িয়ে ২৫% করার মতো কার্যক্রম আছে। বলতে গেলে তেল নিয়ে বিশে^র এক ধরনের স্নায়ু যুদ্ধ চলছে।

আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই যে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে তেল উৎপাদন কমাতে শুরু করে ওপেকভূক্ত দেশ ইরান, ইরাক, কুয়েত, সৌদিআরব, ভেনেজুয়েলাসহ ১৪টি দেশ এবং রাশিয়া। তিন মাসের মধ্যে তেলের দাম ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তেলের দাম। বিশ্বের সবচেয়ে বেশী তেল উৎপাদনকারী দেশ হল যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিদিন ১ কোটি ৫৬ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে দেশটি আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সৌদি আরব। দেশটি প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেলেরও বেশি তেল উৎপাদন করে। অন্যদিকে ইরান প্রতিদিন প্রায় ৪৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। তথ্য বলছে, ২০২০ সালে করোনা মহামারীর প্রার্দুভাবের প্রভাবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা তলানিতে নেমে আসে। কিন্তু এ সময় পণ্যটির সরবরাহ ছিল উর্ধ্বমূখী। এতে বাজারে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পণ্যটির উত্তোলন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে ২০২১ সালে করোনার প্রভাব কমতে শুরু করায় চাহিদায় উস্ফলন দেখা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে জোটটি। উল্টো সীমিত হারে উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে জ্বালানি পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে উঠতে শুরু করলে বাইডেন প্রশাসন মাসভিত্তিক উত্তোলন আরো বাড়াতে ওপেকের প্রতি আহ্বান জানায়। এ আহবান প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের সিদ্ধান্তেই অটল থাকে জোটটির সদস্য দেশগুলো। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ রাষ্ট্রীয় মজুদ থেকে স্থানীয় বাজারে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেল সরবরাহের ঘোষণা দেয়। উদ্দেশ্য ছিল উর্ধ্বগামী বাজারে লাগাম টেনে ধরা। করোনা মহামারী এখনো শেষ হয়ে যায়নি। করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় বিশে^ বহু মানুষের মৃত্যু ছাড়াও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে লেগেছে ব্যাপক ধাক্কা। এই ধাক্কা সামাল দেয়ার আগেই শুরু হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। ইউক্রেনে অভিযান পরিচালনাকারী দেশ রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) সহ পশ্চিমা দেশগুলো। জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চেভেলের হিসাব অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ হামলা শুরুর পর দেশটির ওপর তিন হাজার ছয়শোর বেশি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে এসব নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনীতি বড় ধরনের ঝাঁকি খেলেও ভেঙ্গে পড়েনি। রাশিয়ার অর্থনীতি পঙ্গু করার চেষ্ঠা ব্যর্থ হওয়ার বড় কারণও সেই পশ্চিমারাই। সহজ কথায় রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদের ওপর ইউরোপের দেশগুলোর অতি নির্ভরতা।

ইউরোপের দেশগুলোর গ্যাসের চাহিদার গড়ে ৪০ শতাংশই সরবরাহ করে রাশিয়া। তেলেরও অন্যতম যোগানদাতা দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের রাশিয়ার হামলা শুরুর পর জ্বালানির দামে কার্যত আগুন লেগেছে। আবার রাশিয়ার জ্বালানি রফতানির প্রধান বাজার ইউরোপ এবং এটি তাদের রাজস্বের প্রধান উৎস। সব মিলিয়ে রাশিয়া এখনো ইউরোপে জ্বালানিসরবরাহ করছে। আবার ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হলে বা করলে রাশিয়ার ওপরও ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করলে শুধু গ্যাস থেকে গ্যাজপ্রম প্রতিদিন ২০৩ থেকে ২২৮ মিলিয়ন ডলার হারাবে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। এমনিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। তার ওপর এখন যদি জ¦ালানি বিক্রির অর্থ না পায় তবে চরম সংকটে পড়বে দেশটি। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে ইউরোপই। এজন্যই আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিলেও ইউরোপ এখনো জ্বালানি বিষয়ে চুপ রয়েছে। তবে আশার কথা জ¦ালানি তেলের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়াত্ত তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো গত বছর দ্বিগুন মুনাফা অর্জন করেছে। কোম্পানিটি এবার জ্বালানি উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ চলতি বছর থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন ১৩ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম উত্তোলন করার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে (তথ্য সূত্র: এএফফি)। তেলের পাশাপাশি বাড়ানো হবে গাসের পরিমাণ। চাহিদার চেয়ে তেল ও গ্যাসের সরবরাহ কম হওয়ায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ।

ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির বাইরে তেল নিয়ে চলছে নতুন আন্তর্জাতিক রাজনীতি। তেলে দেশ নির্ভরতা কমাতে গত ২০ মার্চ ২০২২ কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার তথ্য মোতাবেক কাতারের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জার্মানির অর্থমন্ত্রী। গত ১৫ মার্চ ২০২২ সৌদিআরব সফর করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি রিয়াদকে স্বল্প মেয়াদে হলেও বিশ^বাজারে অতিরিক্ত তেল সরবরাহের আহবান জানান। এ থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কতটা শংকিত! তবে তেল রফতানি কারক দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন অব দ্যা পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) এর সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদক দেশ সৌদিআরবের এ ঘোষণায় বিশ্বে জ্বালানি দাম কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবার তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহ্বান করে ভারতের তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীকে বার্তা দিয়েছেন রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকক্রান্দার নোভাক। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ভারতে রাশিয়ার তেল ও পেট্রোপণ্যের রফতানি ১০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌছেছে। এই অঙ্ক আরো বাড়ানোর সুযোগ আছে। আমরা তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে ভারতের আরো বিনিয়োগ পেতে আগ্রহী। আর ভারতে আমাদের পণ্য বিক্রির অবকাঠামোও সম্প্রসারণে ইচ্ছুক। শুধু বিবৃতি নয় ভারতের কাছে বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে তেল বিক্রির সুযোগ দিচ্ছে রাশিয়া।

এখন আসা যাক, বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমদানি করা তেলের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া তেলের দাম অপেক্ষাকৃত কম রাখতে সরকার বেশ কিছু ভুর্তুকি দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করে মূলত কুয়েত এবং কাতার থেকে। আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে এই অস্থিরতা অবশ্যই বাংলাদেশে ঝুঁকি তৈরি করবে। বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে সরাসরি কোন তেল কেনে না তবে সার্বিকভাবে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার যে প্রভাব বাজারের ওপর পড়বে তা বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করবে বলে মনে করি।

 

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৭:১০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।