রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

বেড়েছে খেলাপি ঝুঁকিতে ব্যাংকঋণ

বিবিএনিউজ.নেট   |   সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   454 বার পঠিত

বেড়েছে খেলাপি ঝুঁকিতে ব্যাংকঋণ

ব্যাংকিং খাতে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) করতে পারছে না। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে বেড়েছে প্রভিশন ঘাটতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতে ১২টি ব্যাংক তাদের প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। এর মধ্যে ৮টিই বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক।

জানা গেছে, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ায় বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ছে ব্যাংক ঋণ। এ ঋণঝুঁকি কমাতে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। আর ব্যাংকের আয় থেকেই এই প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি খাতের ১২টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে অর্জিত মুনাফা দিয়েও তা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বড় অঙ্কের প্রভিশন ঘাটতির মুখে পড়েছে এই ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের জুন শেষে ১২টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।

ব্যাংক বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণ করার মতো পর্যাপ্ত আয় ছিল না বলেই ঘাটতিতে পড়েছে এসব ব্যাংক। প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এতে নিরুৎসাহিত হন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাদের মতে, ব্যাংক খাতে সামগ্রিক প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতির অন্যতম প্রধান কারণ খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়া। আর খেলাপি ঋণ বাড়ার মূলে রয়েছে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ঝুঁকি পর্যালোচনা না করা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণ ঝুঁকি নীতিমালার অপব্যবহারও করছে ব্যাংকগুলো। এ কারণে অস্বাভাবিক হারে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। তারা বলেন, পরিস্থিতি উত্তরণে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় ব্যাংকিং খাতসহ সামগ্রিক অর্থনীতিই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণেই প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। আর ব্যাংকগুলোকে আয়ের খাত থেকে অর্থ এনে এই প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ বঞ্চিত হন। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ আমানত গ্রহণ করে তার একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয়, যাকে ব্যাংকিং ভাষায় এসএলআর বলে। আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এ অর্থ রাখা হয়। বাকি অর্থ ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করে থাকে। কিন্তু ব্যাংক যাদের কাছে বিনিয়োগ করে তারা ঋণ ফেরত না দিলে আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য খেলাপি ঋণের প্রকার ভেদে বিভিন্ন হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকের মুনাফা থেকে। কোনো ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হলে ওই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। আর মূলধন ঘাটতি হলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ওই ব্যাংক বছর শেষে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না। তবে কয়েক বছর ধরে প্রভিশন ঘাটতি থাকার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ আনুকূল্যে লভ্যাংশ ঘোষণার অনুমতি পাচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক। আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত হারে প্রভিশন রাখতে হয়। ব্যাংকগুলোর মুনাফা থেকে সাধারণ ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হয়। আর নিম্নমান, সন্দেহজনক এবং মন্দ বা ক্ষতি মানে শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে যথাক্রমে ২০, ৫০ ও ১০০ শতাংশ হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ রয়েছে ৮ লাখ ৭১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। শ্রেণিকৃত ঋণের মধ্যে ৯৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা মন্দমানে শ্রেণিকৃত। সন্দেহজনক মানে রয়েছে ৪ হাজার ৯ টাকা এবং ১০ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা নিম্নমানে শ্রেণিকৃত। শ্রেণিমান বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর ৭১ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা প্রভিশন রাখার প্রয়োজন ছিল। কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রাখলেও ১২ ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের ঘাটতির কারণে সামগ্রিক খাতে সংরক্ষণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ২৩ কোটি টাকা। ফলে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে ৯ হাজার ২১৯ কোটি টাকার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তালিকায় শীর্ষে থাকা সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৯৮২ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৮৫২ কোটি টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৭৩ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির ১১২ কোটি টাকা টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৫১১ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭২৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ও ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১৮৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:২৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।