আদম মালেক | বুধবার, ২১ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট | 267 বার পঠিত
রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি। ধার দেনা করে চলছে সরকার। ব্যয় ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে ঝুঁকে পড়েছে ব্যাংকগুলোর ওপর। দেদার নিচ্ছে ঋণ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংক থেকে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধকেরও বেশি ঋণ নেয় সরকার। ব্যাংক থেকে এতো অল্প সময়ে এ বিশাল অঙ্কের ঋণ গ্রহণের ঘটনা অতীতে আর ঘটেনি।
এ বছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ৮৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়ার কথা। এর মধ্যে প্রথম তিন মাসেই (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৫৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা; ছয় মাসের মধ্যে সে লক্ষ্য ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার ব্যাংক থেকে ৪৮ হাজার ১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। এটি ছিল গত ১০ বছরের মধ্যে ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ গ্রহণের রেকর্ড। আর চলতি অর্থবছরের তিন মাসে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ সেটাকেও ছাড়িয়ে গেছে। যে হারে প্রতি মাসে ব্যাংকঋণ নেওয়া হচ্ছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তার দ্বিগুণের বেশি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, ব্যাংক খাত থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণের সরবরাহ কমে যেতে পারে। তাতে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে সরকারের এ ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টিকে বরং ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক, অগ্রণী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা সব সময় বলি ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু কভিড-১৯-এর কারণে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অর্থনীতি যাচ্ছে তাতে সরকারের এ ব্যাংক ঋণ গ্রহণের বিষয়টি বরং ইতিবাচক মনে হচ্ছে। কারণ ব্যাংকঋণ নিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের ফলে অর্থনীতিতে গতি সৃষ্টি হবে, যা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে। তাছাড়া কোভিড-১৯-এর কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম, ব্যাংকগুলোয় তারল্য উপচে পড়ছে। এ অবস্থায় সরকার এ তারল্য সঠিকভাবে ব্যবহার করলে অলস টাকার পরিমাণ কমবে। এদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ বাড়লে সুদ বাবদ সরকারের দায় বৃদ্ধি পায়। সে হিসেবে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেয়ার বিষয়টি আর্থিক নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’
জায়েদ বখত বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর ফার্স্ট ওয়েভ আমরা হজম করে ফেলেছি। এখন সেকেন্ড ওয়েভটা কোনোভাবে মোকাবিলা করতে পারলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। সে কারণে ব্যাংকঋণ নিয়ে যদি সরকারি বিনিয়োগে গতি বাড়ানো যায়, সেটি বেসরকারি বিনিয়োগকেও উজ্জীবিত করবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব আদায় কম। নানা শর্তের কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রিও কমেছে। ফলে বাজেটের ব্যয় ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে সরকার এখন বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে।
Posted ১২:০৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২১ অক্টোবর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed