শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

ব্যাংক খাতে সংকট বাড়ছে

বিবিএনিউজ.নেট   |   সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   604 বার পঠিত

ব্যাংক খাতে সংকট বাড়ছে

নানা দুর্নীতি আর অনিয়মের কবলে পড়া দেশের ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরে সংকটের মধ্যে রয়েছে। দিন যত যাচ্ছে সংকটের মাত্রা তত বাড়ছে। ভেঙে পড়ছে একের পর এক ব্যাংকের আর্থিক ভিত। ফলে আস্তে আস্তে তলানীতে গিয়ে ঠেকছে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা।

দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে নিমজ্জিম আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে নতুন করে লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়েছে আরও দুটি ব্যাংক। এছাড়া ১২টি ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমেছে। ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগের মুনাফা গত বছরেও কমেছিল। অর্থাৎ বেশির ভাগ ব্যাংকের মুনাফা ধারাবাহিকভাবে কমেই যাচ্ছে।

মুনাফার পাশাপাশি ব্যাংক কোম্পানিগুলোর ক্যাশ ফ্লো বা পরিচালন নগদ প্রবাহ এবং সম্পদের নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে। তালিকাভুক্ত ছয়টি ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। সম্পদের মূল্য কমেছে চারটির এবং একটির সম্পদের মূল্য ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।

চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ন্যাশনাল ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

ব্যাংকগুলোর প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লোকসান থেকে বের হতে পারেনি। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২০ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৩ পয়সা।

ব্যাংকটির সঙ্গে এবার নতুন করে লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ৩০ পয়সা মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি। শেয়ারপ্রতি ১২ পয়সা লোকসান করা এক্সিম ব্যাংক গত বছর শেয়ারপ্রতি ২ পয়সা লোকসান করেছিল। তবে ২০১৭ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ব্যাংক দুটি মুনাফা করেছিল।

এদিকে মুনাফায় থাকলেও ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে।

এর মধ্যে সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংকের মুনাফা গত বছরও কমেছিল। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর মুনাফা ধারাবাহিকভাবে কমছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক কোম্পানিগুলোর আর্থিক চিত্র অশনিসংকেত দিচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এগুলো ব্যাংক খাতের সংকটের চিত্রই ইঙ্গিত করছে। নানা রকম দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়া এবং সার্বিকভাবে ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমে যাওয়া ও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া ব্যাংকগুলোর সংকটের পেছনের অন্যতম কারণ।

এ বিষয়ে বংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতের চিত্র অবশ্যই সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে বেশির ভাগ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এর পেছনের অন্যতম কারণ হিসেবে রয়েছে- ঋণ বিতরণ থেকে আয় কমে যাওয়া, বিতরণ করা ঋণের একটি বড় অংশ খেলাপি হয়ে যাওয়া। এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো ব্যয় কমাতে পারছে না, অথচ পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলো একধরনের সমস্যার মধ্যে আছে।

তিনি বলেন, ‘মানুষের সঞ্চয় কমে গেছে। অনেকে ব্যাংকমুখী হচ্ছেন না। আবার লোনও দিতে পারছেন না। পুঁজিবাজারের অবস্থাও ভালো নয়। এটিও ব্যাংকের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ব্যাংকগুলো যে সংকটের মধ্যে পড়েছে তা শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দিয়ে। পর্যায়ক্রমে তা সংক্রামক ব্যাধির মতো সার্বিক ব্যাংক খাতে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা দুঃখজনক ব্যাপার।’

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের গভর্ন্যান্স ম্যানেজমেন্টের (শাসন ব্যবস্থা) অনেক অবনতি হয়েছে। এখনও দুর্নীতি কমেনি। অনেকগুলো তো এখনও দুর্নীতি থেকে বেরই হয়নি, অনেকে রিপোর্টও দেয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়া রিপোর্ট ঘষামাজা করে দেয়। আইএমএফ এমন অনেক পয়েন্ট-আউট করে দিয়েছে।

এদিকে ছয়টি ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো গত বছরও ঋণাত্মক ছিল। চলতি বছর দুটি ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো নতুন করে ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। অবশ্য চলতি বছর ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো থেকে নয়টি ব্যাংক বেরিয়ে এসেছে। ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার অর্থ নগদ টাকার সংকট দেখা দেয়া।

চলতি বছর ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক অবস্থায় থাকা বা নগদ অর্থ সংকটে পড়া ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- সিটি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক।

এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রূপালী ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৬৭ টাকা ৮ পয়সা। বড় ধরনের নগদ অর্থ সংকটে থাকা ব্যাংকটির সম্পদের মূল্য কমে গেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪১ টাকা ৫৭ পয়সা।

আগের বছরের তুলনায় সম্পদের মূল্য কমে যাওয়া ব্যাংকের তালিকায় আরও রয়েছে- যমুনা ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের সম্পদের মূল্য আগের মতোই ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, পুঁজিবাজার বর্তমানে যে দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এজন্য প্রধানত দায়ী ব্যাংক খাত। ব্যাংক খাতের সংকটের কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এ খাতের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলে পুঁজিবাজার আপনা-আপনিই ঘুরে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকের যদি ইনকাম কমে যায়, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে। যে কারণে প্রভিশন বেশি রাখতে হচ্ছে। এতে মুনাফার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংক খাতের পাশাপাশি পুঁজিবাজারও ভুগছে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:০০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।