আবুল কাসেম ফজলুল হক | শুক্রবার, ০২ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 712 বার পঠিত
দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় এমন মাত্র ২০০ ভাষা দুনিয়ায় আছে। এসব ভাষা বিকাশমান। এগুলোর মধ্যে গোটা দশেক ছাড়া বাকি সব ভাষাই রাষ্ট্রভাষা। রাষ্ট্রভাষা (state language)দ্বারা শুধু সরকারি অফিস চালানোর ভাষা (official language) বোঝায় না, বোঝায় তার সঙ্গে আরো অনেক কিছু। রাষ্ট্রভাষার মধ্যে (official language) আছে জাতীয় জীবনে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টির ভাষা, আছে জাতির আর্থ-সামাজিক, রাষ্ট্রিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির ভাষা। রাষ্ট্রভাষার উন্নতি হলে রাষ্ট্রের অন্তর্গত জাতির সভ্যতারও উন্নতি ঘটে।
যেসব ভাষাকে আমরা বিকাশমান ভাষা বলছি, সেগুলোর অবস্থা ও বিকাশমানতা এক রকম নয়। ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ভাষা অনেক উন্নত ও বেশি বিকাশশীল। ভাষার উন্নতির পরিমাপক সেই ভাষায় সৃষ্ট জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্য। সেদিক দিয়ে বাংলা ভাষার স্থান এখনো ওপরের দিকেই আছে। ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলা ভাষার অসাধারণ উন্নতি হয়েছে।
বিকাশমান ভাষাগুলোর বাইরে বিভিন্ন মহাদেশে কয়েক হাজার বিলীয়মান মাতৃভাষা আছে। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা এগুলো। বিভিন্ন মহাদেশে কয়েক হাজার ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে। তাদের আলাদা আলাদা ভাষা আছে। তাদের ভাষা বিলীয়মান। এসব ভাষার জনসংখ্যাও নিতান্ত কম এবং এই জনগোষ্ঠীগুলো দুর্বল অবস্থা ও অবস্থানে আছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগুলোকে আদিবাসী বলে চিহ্নিত করে মানবজাতির মূলধারায় আসতে দিচ্ছে না এবং চিরকাল আদিবাসীরূপে রাখতে চাইছে।
বাংলাদেশে ৪৫টি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ৪৫টি বিলীয়মান মাতৃভাষা আছে। এই ৪৫টি জনগোষ্ঠীর মোট জনসংখ্যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশের সামান্য বেশি। এরা জন্মের পর থেকেই নিজেদের ভাষার মতো বাংলা ভাষাও শেখে। এদেরকে বলা যায় দ্বিভাষিক (bilingual)| বাংলা ভাষাকেই এরা নিজেদের উন্নতির অবলম্বন মনে করে। যারা সংখ্যায় একেবারেই ছোট, দরিদ্র ও দুর্বল, তাদের কথা আলাদা। তাদের মধ্যে উন্নতির আকাঙ্ক্ষাও কম। বিভিন্ন রাষ্ট্রের এবং বাংলাদেশেরও বিলীয়মান মাতৃভাষাগুলোকে রক্ষা করার চেষ্টা বাস্তবসম্মত নয়। এ ক্ষেত্রে ইউনেসকোর প্রস্তাব ও কাজ বাস্তবতাবিরোধী। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোর লোকেরা জীবনযাত্রার ও উন্নতির প্রয়োজনে নিজেদের ভাষার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রভাষা শিখছে। এর মধ্যে রয়েছে তাদের উন্নতির সম্ভাবনা। বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোর সার্বিক উন্নতি ও মানবজাতির মূলধারায় আসার সুযোগ বাড়াতে হবে। তাদের চিরকাল আদিবাসী করে রাখার নীতি বর্জনীয়।
আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা ও উদ্দেশ্য থেকে ইউনেসকোর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। ইউনেসকোর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে যেসব কথা ক্রমাগত প্রচার করা হচ্ছে, তাতে আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা তলিয়ে যাচ্ছে। এতে রাষ্ট্রভাষারূপে বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা ব্যাহত হচ্ছে এবং আমাদের জাতি ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিলীয়মান মাতৃভাষাগুলোর উন্নতির জন্য রাষ্ট্রভাষা বাংলার উন্নতিকে স্থগিত রাখা ঠিক হবে না।
কোনো ভাষার অর্থনৈতিক ভিত্তি বিকাশশীল থাকলে সেই ভাষা বিকাশশীল থাকে। কোনো ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীই তার বিলীয়মান মাতৃভাষা নিয়ে জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারে না। সাম্রাজ্যবাদীরা সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে বাংলাদেশে বিলীয়মান মাতৃভাষাগুলোকে রক্ষা করার প্রচার চালিয়ে বাংলা ভাষার আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন, এনজিও ও ইউনেসকো ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোর উন্নয়নের জন্য যে পথ প্রদর্শন করে, যেসব পরিকল্পনা ও কার্যক্রম চালায়, অনেক সময়ই সেগুলো ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোর উন্নতির সহায়ক হয় না। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের উন্নতির জন্য পার্শ্ববর্তী বৃহত্ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে রাষ্ট্র গঠন করতে হয়। তারা যদি বাইরে থেকে কিছুই গ্রহণ না করে এবং শুধু নিজেদের বিলীয়মান মাতৃভাষা ও নিজেদের অভ্যস্ত জীবনযাত্রা নিয়ে চলে, তাহলে তারা কোনোকালেই উন্নতি করতে পারবে না।
আমাদের উপলব্ধি করা দরকার যে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও উন্নতির জন্য রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব ও উন্নতি অপরিহার্য। চলমান বহু ঘটনা আছে যেগুলো দেখে বলা যায়, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা না টিকলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ টিকবে না। দেশ থাকবে, মাটি-মানুষ, গাছপালা, পশুপাখি, নদী-নালা ও আকাশ-বাতাস থাকবে কিন্তু রাষ্ট্র থাকবে না। যারা বাংলাদেশে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার বদলে ইংরেজি চায়, তারা কি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলা দেশকে রক্ষা করবে?
দেশ এবং রাষ্ট্র এক নয়। দেশ প্রকৃতির সৃষ্টি, রাষ্ট্র মানুষের। আমাদের রাষ্ট্র না থাকলে, শুধু দেশ থাকলে, আমরা কি ভালো থাকব? ১৯৭১ সালে কেন আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম? ছয় দফা আন্দোলনে কেন আমরা মেতেছিলাম? কেন আমরা ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিলাম, আমরা কি বিশ্বব্যাংকের পরিমাপ অনুযায়ী ফার্মের গরু, ফার্মের মুরগির মতো শুধু মোটাতাজা হয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম?
ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা আর বাঙালি চরিত্র লক্ষ করে ১৯৭৩ সাল থেকেই কোনো কোনো চিন্তাশীল ব্যক্তি বলে আসছেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার মতো (viable) নয়। তাঁদের যুক্তি ছিল প্রধানত বাঙালি চরিত্রের নিকৃষ্টতার ওপর ভিত্তি করে। তাঁদের যুক্তি ও মত কখনো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। তাঁরা অনেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব নিয়েছেন এবং প্রায় সবাই তাঁদের সন্তানদের এসব রাষ্ট্রে নাগরিক করেছেন। আমি সব সময় বাঙালি চরিত্রের উন্নতি সম্ভব বলে মনে করেছি। আমি সব সময় মনে করেছি এবং এখনো মনে করি, বাংলাদেশকে অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের প্রগতিশীল রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলা যাবে। সে লক্ষ্যেই আমাদের চিন্তা ও কাজ। জাতীয় হীনতাবোধ বাংলাদেশের ধনী-গরিব, শিক্ষিত-শিক্ষাবঞ্চিত, ক্ষমতাবান-ক্ষমতাবঞ্চিত সব মানুষকে ভেতর থেকে কুরে কুরে খাচ্ছে। জাতীয় হীনতাবোধ থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। জনসাধারণ ঘুমন্ত। ঘুমন্ত জনসাধারণকে জাগাতে হবে।
সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনগুলোর বিশিষ্ট নাগরিকরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে বৃহত্ শক্তিবর্গের স্থানীয় দূতাবাস অভিমুখী করেছেন। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের কথা না ভেবে সেই ধারায় চলছে। বাংলাদেশের সব প্রচারমাধ্যম ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে বিবিসি রেডিওর অন্ধ অনুসারী হয়ে কাজ করেছে। বিরোধী দলগুলোও তাই করছে। ক্ষমতার বাইরে থাকাকালে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আবেদন নিয়ে ক্রমাগত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার এবং ভারতেরও স্থানীয় দূতাবাসগুলোতে সাহায্য চাইতে যান। তাঁরা চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্দিষ্ট ডেস্কে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্যও কোনো কোনো নেতা নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের হেড অফিসে গিয়ে তদবির করেন। সাম্রাজ্যবাদী অর্থ সংস্থাগুলো ‘দাতা সংস্থা’ ও ‘উন্নয়ন সহযোগী’ নাম নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে যুক্ত হয়। উচ্চ ও উচ্চ মধ্য শ্রেণির লোকেরা সরকারি ও সরকারবিরোধী উভয় মহল তাদের ছেলে-মেয়েদের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রের নাগরিক করে চলছেন। মন্ত্রিপরিষদ, জাতীয় সংসদ, প্রশাসনব্যবস্থার উচ্চপর্যায়, বিচারব্যবস্থার উচ্চপর্যায়, শিক্ষাব্যবস্থার উচ্চপর্যায় লক্ষ করলেই এটা দেখা যায়। এই ব্যক্তিরাই বাংলাদেশে রাষ্ট্রব্যবস্থার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্তৃত্বে আছেন। বাংলাদেশে একদিকে আছে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ব্রিটিশ কাউন্সিল ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেল এবং অন্যদিকে আছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত ইংলিশ ভার্সন। এ সবই বাংলাদেশের ভূভাগে জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নতুন রেনেসাঁস ও তার ধারাবাহিকতার নতুন গণজাগরণ সৃষ্টি করে, সেই সঙ্গে উন্নত চরিত্রের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টি করে বাংলাদেশের জনগণ অবশ্যই বাংলাদেশকে নিজেদের প্রগতিশীল রাষ্ট্ররূপে গড়ে তুলতে পারবে। জনগণ ঘুমিয়ে আছে বটে, তবে জাগবে। অভীষ্ট নেতৃত্বের জন্য অবশ্যই উন্নত চরিত্রের রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান দলগুলোও চাইলে তাদের রাজনৈতিক চরিত্র উন্নত করতে পারে। রাজনৈতিক দল ছাড়া নেতৃত্ব হয় না। দলের চরিত্রই নেতৃত্বের চরিত্র। উন্নত চরিত্রের বৌদ্ধিক নেতৃত্বও (intellectual leadership) লাগবে। রাষ্ট্র গঠনের ও রাষ্ট্রীয় উন্নতির সঙ্গে রাষ্ট্রভাষারূপে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত ও উন্নত করার সার্বিক আয়োজন লাগবে। রাজনীতির উন্নতির জন্য বাংলা ভাষায় উন্নত রাষ্ট্রচিন্তা ও রাজনৈতিক দলে তার অনুশীলন লাগবে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে উদ্যাপন করতে হবে ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’রূপে। ১৯৮০-র দশকের শুরু থেকে বিরাজনৈতিকীকরণের যে প্রক্রিয়া বাংলাদেশে চালানো হচ্ছে, তার জায়গায় উন্নত রাজনীতির সূচনা করতে হবে। জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজনে শিক্ষা খাতে শর্তযুক্ত সব রকম বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রচলিত শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। অনেকে বিশ্বমান অর্জনের কথা বলেন। তাঁরা সম্পূর্ণ সুবিধাবাদী নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স প্রভৃতি রাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী কর্মনীতি অন্ধভাবে অনুসরণ করে চলার কথা বলেন। এটা ঠিক নয়। চলমান শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে জাতি ও রাষ্ট্র গড়ে উঠছে না—উঠবে না।
কেউ কেউ বলে থাকেন, এখন বিশ্বায়নের কাল, বাংলাদেশকে রাষ্ট্ররূপে গঠন করা এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনগুলো নানা কৌশলে এটা প্রচার করছে। আমার ধারণা, এই দৃষ্টিভঙ্গি ও মত বাংলাদেশের জনগণের জন্য ক্ষতিকর। বিশ্বসরকার গঠিত হলেও জাতীয় সরকার থাকবে, বিশ্বসরকার হবে জাতীয় সরকারগুলোর ঊর্ধ্বতন সরকার। জাতিসংঘের মতো তার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকবে আন্ত রাষ্টীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে। জাতিসংঘ বহুলাংশে অকার্যকর। বিশ্বসরকার কার্যকর হতে পারে। রাষ্ট্রের ভেতরকার সব কাজ জাতীয় সরকারকেই করতে হবে। বাংলাদেশকে রাষ্ট্ররূপে গঠন না করার ফল অত্যন্ত খারাপ হচ্ছে।
বাংলা উন্নত ভাষা। এর আছে সম্ভাবনাময় আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি। রাষ্ট্র গড়ে তোলা হলে এই ভিত্তি আরো সৃদৃঢ় হবে। এই ভাষাকে তুচ্ছজ্ঞান করে ইংরেজি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করে বাংলাদেশে রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের উন্নতির প্রয়োজনে ইংরেজি ও আরো কয়েকটি বিদেশি ভাষা ভালো করে শেখার সুব্যবস্থা অবশ্যই বাংলাদেশে করতে হবে। বর্তমান ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার মাধ্যমে জ্ঞান আহরণ করে তা দিয়ে বাংলা ভাষার জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে হবে। যাঁরা জন্মগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক এবং পছন্দগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রের নাগরিক, তাঁদের নেতৃত্বে ও পরিচালনায় বাংলাদেশ কখনো স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে গড়ে উঠবে না। যাঁরা তাঁদের সন্তানদের ওই সব রাষ্ট্রে নাগরিক করে চলছেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভবিষ্যত্ নিয়ে তাঁরা কী ভাবেন?
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভবিষ্যত্ নিয়ে ভাবার সময় চলে যাচ্ছে। সময় থাকতে চিন্তা ও কাজ করতে হয়, সময় চলে গেলে সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়। আজকের মূল প্রশ্ন, বাংলাদেশকে আমরা রাষ্ট্ররূপে গড়ে তুলব কি তুলব না। যদি সিদ্ধান্ত হয় গড়ে তুলব, তাহলে সময় নষ্ট না করে কাজ আরম্ভ করতে হবে। রাষ্ট্র গঠনের জন্য চেষ্টা লাগবে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাষ্ট্র গঠিত হয় না। বাংলাদেশের জনগণের চেতনায় নিজেদের রাষ্ট্র গঠনের মহান লক্ষ্য দরকার। বিবেকবান ও চিন্তাশীল ব্যক্তিদের অগ্রযাত্রীর ভূমিকা পালন করতে হবে।
লেখক : প্রগতিশীল চিন্তাবিদ
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Posted ২:২৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed