রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

সঞ্চয়পত্রের ক্রয়সীমা বাড়লো

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২০   |   প্রিন্ট   |   875 বার পঠিত

সঞ্চয়পত্রের ক্রয়সীমা বাড়লো

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও বৈধভাবে ক্রয়সীমা নতুন করে বেশখানিকটা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে নারী কিংবা পুরুষ যে কেউ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। ফলে একটি পরিবার থেকে যৌথনামে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগে একজন মহিলা ৪৫ লাখ টাকার এবং একজন পুরুষ ৩০ লাখ টাকার অর্থাৎ যৌথ নামে ৭৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারতেন। যদিও এ বিষয়ে সরকারের কোনো নীতিমালা নেই বলে জানা গেছে।

মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের কাছে নিরাপদ এক বিনিয়োগের নাম সঞ্চয়পত্র। এর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র অন্যতম। এ ছাড়া অন্যান্য সঞ্চয়পত্রও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে অনলাইন পদ্ধতি চালু, সর্বোচ্চসীমা ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণের পাশাপাশি নিয়মকানুন কঠোর করায় সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিক্রিতেও ধস নামে। সরকারের কৌশলও এই খাতের বিনিয়োগ কামিয়ে আনা।

ব্যাংক খাতে সুদের হার ৯ ও ৬ শতাংশ নিয়ে বহুল আলোচনার এ যুগে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার (সুদ) হারও কম নয়। মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে কম মেয়াদেও এ সঞ্চয়পত্র ভাঙানো যায়। সে ক্ষেত্রে মুনাফা একটু কম। অর্থাৎ টাকা যত কম দিন খাটবে, মুনাফাও পাওয়া যাবে তত কম।

জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের অনলাইন পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, ডাকঘর সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র এবং পরিবার সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত থাকলেও বিনিয়োগকারীরা প্রতিটি সঞ্চয়পত্রে আলাদা বিনিয়োগ করতে পারত। এতে একেকজনের বিনিয়োগের পরিমাণ কোটি টাকার উপরে চলে যেত। বর্তমানে অনলাইন পদ্ধতি চালু থাকায় নির্দিষ্ট একটি সঞ্চয়পত্রে বা একাধিক সঞ্চয়পত্রে, যেভাবেই বিনিয়োগ করা হোক না কেন তা কোনোভাবেই ৫০ লাখ টাকার উপরে কেনা যাবে না। আর কোনো ব্যক্তি গোপনে বিভিন্ন ব্যাংক বা ডাকঘর থেকে কেনার চেষ্টা করলেও তা পারবে না। কারণ অনলাইন পদ্ধতিতেই এক নামে ৫০ লাখ টাকার বেশি কেনার সুযোগ নেই। আর গোপন করারও সুযোগ নেই কারণ সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে টিআইএন, এনআইডি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে সরকারের কোনো নীতিমালা নেই।

এ বিষয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের ডিজি সামসুননাহার বেগম বলেন, সঞ্চয়পত্রের ঊর্ধ্বসীমা ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে এই খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য। আগে একটা ঊর্ধ্বসীমা থাকলেও বাস্তবে তা কেউ মানত না। এখন অনলাইন পদ্ধতির কারণে সবাই মানতে বাধ্য হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের ঊর্ধ্বসীমা ৫০ লাখ টাকা করা বিষয়ে কোনো গেজেট বা নীতিমালা না থাকলেও অনলাইন পদ্ধতিতে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এই বিষয়ে একটা নীতিমালা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই নীতিমালাতে বিষয়টি উল্লেখ থাকবে।

সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা, মুনাফায় উৎসে কর বৃদ্ধি এবং অপ্রদর্শিত অর্থে ক্রয় প্রতিরোধ করাসহ নানা রকম কড়াকড়ি আরোপের কারণে প্রতি মাসেই কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের পঞ্চম মাসে (নভেম্বর) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের বছর একই মাসে বিক্রি হয় ৩ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র। এ ছাড়া চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৫ হাজার ৮৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এ বছর সঞ্চয়পত্রের বিক্রি আগের বছরের চেয়ে ৭৩ শতাংশ কমে গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, শেষ দুই প্রান্তি বা ছয় মাসের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী মোট বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকার কিছু উপরে।

জানা গেছে, বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেইস সংরক্ষণের লক্ষ্য অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর কমিশনারের প্রত্যয়ন লাগে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন। এসব বিভিন্ন কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিয়ম-কানুন কড়াকড়ি করায় সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করায় অনেকে সঞ্চয়পত্র আগের মতো বিনিয়োগ করছে না। এ ছাড়া উৎসে কর বৃদ্ধির কারণেও মানুষ বিনিয়োগে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। সব মিলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে।

পরিবার সঞ্চয়পত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর মুনাফা মাসিক ভিত্তিতে দেওয়া হয়। হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে গ্রাহকের নামে বিকল্প (ডুপিস্নকেট) সঞ্চয়পত্রও ইসু্য করা হয়। তবে এ সঞ্চয়পত্র ব্যাংকঋণের জন্য জামানত বা আমানত হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯ অনুযায়ী, গত বছর দেশে যত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার ৩৮ শতাংশই পরিবার সঞ্চয়পত্র। একক নামে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত এ সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।

সবাই পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। এ ব্যাপারে সরকার কিছু শর্ত ঠিক করে দিয়েছে। যেমন ১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী, যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সি বাংলাদেশি নারী ও পুরুষেরা পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ এবং ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পরিবার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো কেনা যাবে জাতীয় সঞ্চয় বু্যরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক এবং ডাকঘর থেকে। একই জায়গা থেকে ভাঙানোও যাবে এগুলো।

পেনশনার সঞ্চয়পত্রটি শুধু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্যই। দেশে যত সঞ্চয়পত্র চালু আছে, তার মধ্যে এর গ্রাহকদেরই সবচেয়ে বেশি মুনাফা বা সুদ দেয় সরকার। মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ২০০৪ সালে এ সঞ্চয়পত্র চালু করে। প্রাপ্ত আনুতোষিক ও ভবিষ্যৎ তহবিলের অর্থ মিলিয়ে একক নামে ৫০ (পঞ্চাশ) লাখ টাকা পর্যন্ত এ সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। এ সঞ্চয়পত্র শুধু একটি অফিস থেকেই কিনতে হবে। একাধিক অফিস থেকে কেনা হলে অথবা ক্রয়সীমা অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কেনা হলে গ্রাহক কোনো মুনাফা পাবেন না। অনলাইল পদ্ধতির আগে এভাবে কেনা গেলেও অনলাইন পদ্ধতি চালু হলে ৫০ লাখ টাকার উপরে কেনার সুযোগই নেই। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে যত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়, তার ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ হচ্ছে পেনশনার সঞ্চয়পত্র।

অবসরভোগী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

৫০ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পেনশনার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো কেনা যাবে জাতীয় সঞ্চয় বু্যরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে। একই জায়গা থেকে ভাঙানোও যাবে এগুলো।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:৫১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11395 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।