শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

সরকারি ব্যাংকের ডিএমডি নিয়োগে নতুন জটিলতা

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   515 বার পঠিত

সরকারি ব্যাংকের ডিএমডি নিয়োগে নতুন জটিলতা

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নিয়োগে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। নীতিমালার আলোকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে না দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা স্থগিত করে বিশেষ বাছাই পদ্ধতিতে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা গেছে, মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ডিএমডি নিয়োগে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতদিন কোনো ধরনের বির্তক ছাড়াই সেই প্রজ্ঞাপনের শর্ত অনুযায়ী ডিএমডি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সবশেষ চলতি বছরের মে মাসে ডিএমডি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৯ মে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার আগারগাঁওয়ের দফতরে এ পরীক্ষা নেওয়ার দিন চূড়ান্ত করেন। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন প্রার্থীদের পরীক্ষা বাতিলের খবর জানিয়ে দেওয়া হয়। পদোন্নতির বিষয়টি এক বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। এতে প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।

পরীক্ষা স্থগিতের পর তড়িঘড়ি করে ডিএমডি নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণে ‘উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতির জন্য প্রার্থী বাছাই পদ্ধতি’ শিরোনামে একটি কমিটি গঠন করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে, কমিটি সর্বমোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে ডিএমডি প্রার্থীকে সার্বিক মূল্যায়ন করবে। ১৫টি বিষয়ে এ ১০০ নম্বর থাকবে।

সেখানে এসিআর, শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরি বয়স, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী, বহুমুখী কর্ম অভিজ্ঞতা, পেশাগত দক্ষতা, দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ, দেশে বা বিদেশে স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত লেখা, পুরস্কার প্রাপ্তি, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, সততা, বিশ্বস্ততা ও সুনামের উপর ৯০ এবং মৌখিক পরীক্ষা রয়েছে ১০ নম্বর।

এদিকে প্রচলিত পদ্ধতিতে না হয়ে বাছাই পদ্ধতির মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যোগ্য মহাব্যবস্থাপকদের বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ একটি সরকারি ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কম করে হলেও ২৫টি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। বাছাই পদ্ধতিতে ডিএমডি পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য অনেক মহাব্যবস্থাপকই পদ্ধতির নির্ধারিত ডিপার্টমেন্টে কাজ করার সুযোগ পান না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মহাব্যবস্থাপক বলেন, চাকরি জীবনে ভালো কাজ করলেই একজন কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়। ডিএমডি পদে পদোন্নতির জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় অনেক জিএম রয়েছেন, যাদের অধিকাংশের বিদেশি প্রশিক্ষণ ও পেশাগত ডিগ্রি নাই। পদোন্নতির জন্য যে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা করার বাধ্যবাধকতা থাকে সেটিই করেছেন। তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও সরকারের বাছাই পদ্ধতির শর্তে ডিএমডি হতে পারবেন না তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএমডি পদে পদোন্নতির জন্য যে ২৭ জন মহাব্যবস্থাপকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদের অনেকেই ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে অবসর গ্রহণ করবেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বাছাই কমিটির দেওয়া শর্তগুলো পূরণ করতে পারবেন না অধিকাংশ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএমডি পদে পদোন্নতির জন্য বাছাই কমিটিতে তালিকাভুক্তির জন্য চলতি বছরের ২৩ জুন সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চিঠি দিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব সাঈদ কুতুব।

চিঠিতে বাছাই কমিটির শর্তগুলোও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। জারি করার আগেই, নীতিমালার আলোকে প্রার্থীদের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে। যা কতিপয় প্রার্থীদের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ডিএমডি নিয়োগের জন্য ২০১৭ সালে একটি নীতিমালা জারি করেছে সরকার। সেটি নিয়ে কোনো বির্তক নেই। তারপরও কেন নতুন করে বাছাই পদ্ধতি করা হচ্ছে। একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দিতে আগের নীতিমালা উপেক্ষা করে নতুন করে ডিএমডি পড়ে পদোন্নতির শর্তজুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে জ্যেষ্ঠ এবং মেধাবিরা বাদ পড়বেন।

কিন্তু হঠাৎ করে এ নীতিমালার আলোকে ডিএমডি পদে পদোন্নতি দিলে ২০১৭ সালের প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনার কি হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। সেই নীতিমালায় কোনো বির্তক না থাকার পরও কেন বাতিল করা হবে বা হচ্ছে তার বলা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে যে নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। অধিকতর যাচাই-বাছাই করে আগামীতে কার্যকর করা হলে প্রার্থীরা ওই নীতিমালার আলোকে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবেন। তড়িঘড়ি করে নীতিমালা তৈরি করে পদোন্নতি দেওয়া হলে পুরো প্রক্রিয়াটি বির্তকের মধ্যে পড়বে।

পদোন্নতি যোগ্যরা বলছেন, একটি বিশেষ মহলকে বিশেষ সুবিধা দিতে তড়িঘড়ি করে এ নীতিমালা জারি করা হয়েছে। যাতে জ্যেষ্ঠরা বাদ পড়ে যান। তালিকার শেষের দিকে থাকা মহাব্যবস্থাপকরা পদোন্নতি পান। অনিয়মের আশঙ্কায় জ্যেষ্ঠ প্রার্থীরা আগের নিয়মেই পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দিনবদলের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে ক‍াজের ধরণও। আগে বড় বড় লেজার বুকের মাধ্যমে চলতো ব্যাংকিং। এখন সফটওয়ারের মাধ্যমে চলছে সেব‍াপ্রদান। আবার ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের ম‍াধ্যমে ব্যাংক হিসাবে নিয়ন্ত্রণ থাকছে নিজের কাছেই। দিনবদলের সঙ্গে পদোন্নতির শর্তগুলোও পরিবর্তন হচ্ছে।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, আমরা ডিএমডি পদে পদোন্নতির জন্য মহা-ব্যবস্থাপকদের তথ্য ব্যাংকগুলোর কাছে চেয়েছি। সবার তথ্য আসার পরে সিদ্ধান্ত হবে কোনো বিবেচনায় পদোন্নতি হবে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৪৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।