বিবিএনিউজ.নেট | রবিবার, ১৮ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 623 বার পঠিত
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে বিদেশের আটটি স্টেশনে অপারেশন ম্যানেজারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন থেকে এই পদে থাকা কর্মকর্তাদের কাজ দেখভাল করবেন কান্ট্রি ম্যানেজার। বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মূলত খরচ বাঁচাতে পর্ষদ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা গেছে, এ সিদ্ধান্তের ফলে শিগগিরই বিদেশে অবস্থানরত বিমানের ৮ আন্তর্জাতিক স্টেশনে কর্মরত অপারেশন ম্যানেজারকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হবে। স্টেশনগুলো হল- যুক্তরাজ্য, জেদ্দা, রিয়াদ, আবুধাবি, দুবাই, মালয়েশিয়া, দিল্লি ও কলকাতা।
বিশেষজ্ঞরা অভিমত, পরিচালনা পর্ষদের এ সিদ্ধান্ত বিমানকে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। কারণ অপারেশন ম্যানেজারদের মূল কাজ হচ্ছে ফ্লাইট প্ল্যানিং, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, বিভিন্ন দেশের আকাশের নোটাম চেক ও জিরো ফুয়েলিং ক্যালকুলেশন করা। এছাড়া সংশ্লিষ্ট দেশসহ আশপাশের দেশের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে ফ্লাইট পরিচালনা নির্বিঘ্ন করা।
এদিকে খরচ বাঁচাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, এ কাজের জন্য আউটসোর্সিং ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। জিএসএ (জেনারেল সেলস এজেন্ট), সিএসএ (কার্গো সেলস এজেন্ট), গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের মতো নতুন করে একটি বিদেশি কোম্পানিকে এই কাজ দেয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে। যা থেকে লুটপাট, দুর্নীতি ও আন্ডারহ্যান্ড ডিলিংয়ের সুযোগ পাবে বিমানের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট।
একই সঙ্গে যে খরচ বাঁচানোর জন্য অপারেশন ম্যানেজার প্রত্যাহার করা হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ে তার চেয়ে বেশি খরচ গুনতে হতে পারে বিমানকে। পাশাপাশি একটি ফ্লাইট যেসব দেশের ওপর দিয়ে যাবে সেসব দেশের আকাশের নোটাম তল্লাশিতে সামান্য ত্রুটি হলে আকাশে ওই ফ্লাইট বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এমনকি ফ্লাইটে ফ্লাইটে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটতে পারে।
বিমানের একজন অপারেশন ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে কোনো এয়ারলাইন্সের জন্য অপারেশন ম্যানেজার ও পাইলট বাধ্যতামূলক। সিভিল এভিয়েশন থেকে লাইসেন্স নিয়ে তাদের এ কাজ করতে হয়। একজন পাইলট যেভাবে পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পান একইভাবে দেড় বছরে ৭ ধরনের পরীক্ষা দিয়ে অপারেশন ম্যানেজারকেও লাইসেন্স নিতে হয়। কোনো কর্মকর্তা যদি ৪ বার পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেন তাহলে তাকে আর পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয় না।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিমানের লন্ডন অফিসের অপারেশন ম্যানেজারকে ৩৯টি দেশের সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে ফ্লাইট অপারেশন অব্যাহত রাখতে হয়। এ কাজ অন্য কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়। একইভাবে দুবাই অফিসকে ২৫টি, মালয়েশিয়া অফিসকে ২৭টি দেশের সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে প্রতিদিনই যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে। এই কর্মকর্তার মতে- কান্ট্রি ম্যানেজার, স্টেশন ম্যানেজার, অ্যাকাউন্ট ম্যানেজারের চেয়েও এ পদ খুবই গুরত্বপূর্ণ।
জানা গেছে, বিমানের তেল খরচ কমাতেও একজন অপারেশন ম্যানেজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যদি কোনো স্টেশনে অপারেশন ম্যানেজার না থাকে তাহলে ওই অফিসে তেল খরচে বড় ধরনের লুটপাট শুরু হয়ে যাবে। কারণ একমাত্র অপারেশন ম্যানেজারই জিরো ফুয়েলিং ক্যালকুলেশন করতে পারে। অন্য কারও এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের হিসাব শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, তেল নিয়ে লুটপাট বাণিজ্য করার জন্যই মূলত একটি চক্র কৌশলে সব বৈদেশিক স্টেশন থেকে অপারেশন ম্যানেজারদের প্রত্যাহার করার জন্য পর্ষদ সদস্যদের ভুল তথ্য দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বিমানের মুখপাত্র ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
বিমানের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিষয়টি গত বোর্ড সভার আগের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গত পর্ষদে রিভিউয়ের জন্য আবারও ফাইল উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু পর্ষদ রিভিউ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আগের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।
তিনি বলেন, বিমানের বর্তমানে ১৬টি আন্তর্জাতিক স্টেশন আছে। এর মধ্যে মাত্র ৮টি স্টেশনে অপারেশন ম্যানেজার (ওএম) আছে। যদি ৮টি স্টেশন ওএম ছাড়া চলতে পারে তাহলে বাকিগুলো চলতে পারবে না কেন?
Posted ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed