বিবিএনিউজ.নেট | মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 567 বার পঠিত
খেলাপি হওয়া ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোকে একটি কমিটির মাধ্যমে তদারকির নির্দেশনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু আদায় না করে আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো দেখাতে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কৃত্রিমভাবে কমিয়ে আনতে রাইট অফ (অবলোপন) করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৫৫৭ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৪১ কোটি টাকা। সে হিসাবে অবলোপন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এই সময়ে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা জুন শেষে হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ অবলোপন বা রাইট অফ হচ্ছে ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী থেকে এসব ঋণকে বাদ দেওয়া। এটি আলাদা হিসাবে রাখতে হয়। পরে এ খাত থেকে আদায় হলে তা ব্যাংকের আর্থিক বিবরণীতে যোগ হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মোট তিন হাজার ২০৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে রাইট অফ করেছে ১৪১ কোটি টাকা। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি দুই হাজার ৫৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রাইট অফ করেছে ব্যাংকগুলো।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে রাইট অফের পরিমাণ ৫৫৭ কোটি টাকা। গত বছরের আলোচিত সময়ের তুলনায় যা প্রায় ২৯৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ থেকে ব্যাংকগুলোর আদায় মাত্র দশমিক ৫০ শতাংশ।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ অবলোপনের পরিমাণ বেশি হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, গত ফেব্রুয়ারিতে রাইট অফ-সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো এখন থেকে পাঁচ বছরের পরিবর্তে তিন বছর মেয়াদ হলেই খেলাপি ঋণ অবলোপন করতে পারবে।
ফলে ব্যাংকগুলো এখন থেকে তিন বছর পার হলেই ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে পারবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালাটি শিথিল করায় ব্যাংক খাতেখেলাপি ঋণের পরিমাণ কাগজে-কলমে কমে আসবে। এসব ঋণ থেকে আদায় কার্যক্রমে আগ্রহ কমবে ব্যাংকারদের। ফলে ঋণগুলো আদায় হবে না। নতুন ঋণ বিতরণে ব্যাংকাররা যতটুকু উদ্যোগী হবে পুরনো ঋণ আদায়ে তা করবে না। এতে ব্যাংকের আয়ের বিশাল একটা অংশ আটকে থাকবে দীর্ঘদিন। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংকের আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হবে এবং সুশাসন ভেঙে পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘রাইট অফ করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে কোনো লাভ হবে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা ও অর্থ আদায়ে প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক সংকল্প। সুশাসনের চিত্র উন্নত করতে হবে। যাকে তাকে ঋণ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সর্বশেষ আদালতে মামলাজট কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রতা না কমলে এসব বিষয় সুরাহা হবে না।’
জানা গেছে, অবলোপনকৃত ঋণের অধিকাংশের পর্যাপ্ত জামানত নেই। এসব ঋণ বিতরণে পরিপালন করা হয়নি ব্যাংকিং প্রক্রিয়া।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করলেও ঋণ দেওয়া হয়েছে। এসব ঋণ দেওয়া কর্মকর্তাদের সিংহভাগই অবসরে গিয়েছেন। এ কারণেই এসব ঋণ আদায়ে নতুন ব্যাংকারদের তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।
মূলত ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে এক নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ রাইট অফ করার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৫৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা রাইট অফ করেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো রাইট অফ করেছে ২৩ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৪৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ব্যাংক রাইট অফ করেছে ২৮ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৫৩ দশমিক ২২ শতাংশ।
রাইট অফ হওয়া ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর আদায় একেবারেই নগণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে রাইট অফ হওয়া খেলাপির বিপরীতে আদায় করতে পেরেছে মাত্র দুই শতাংশ। গত পাঁচ বছরের এক তথ্য অনুযায়ী, রাইট অফ করা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০১৪ সালে আদায় হয়েছে দুই দশমিক ৫৬ শতাংশ, ২০১৫ সালে দুই দশমিক ৫৯ শতাংশ, ২০১৬ সালে দুই দশমিক ৫৭ শতাংশ ও ২০১৭ সালে আদায় হয়েছে দুই শতাংশ।
Posted ১২:৩২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed